অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে আয় করতে চাইলে যা জানা প্রয়োজন
অর্থনৈতিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর ১৩তম সম্পদশালী দেশ। আর আয়তনের দিক থেকে ষষ্ঠ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ রাষ্ট্র। আয়তন ৭৬ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি, অথচ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই কোটির কাছাকাছি। বেশির ভাগ মানুষ শহরে বসবাস করে, বিশেষ করে সিডনি ও মেলবর্নে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে মাত্র তিনজন মানুষ। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, মাত্র তিনজন। আর বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন।
দেশটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের অভাব আছে। যে চাহিদা পূরণ করছেন ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের অভিবাসীরা। ব্রিজবেনে আসার পর দেখেছি, এই শহরের বেশির ভাগ উবার, ট্যাক্সি বা কারচালক ভারতীয়। বিশেষ করে পাঞ্জাবি। এই শহরের প্রধান গণপরিবহন ট্রান্সলিংকের ট্রেন ও বাসচালকের অনেকেই ভারতীয়। অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় নারী। এ ছাড়া তাঁদের অনেক ধরনের ব্যবসা আছে। আছে প্রচুর রেস্তোরাঁ। এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতীয়রা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জনগোষ্ঠী, যাঁদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অভিবাসীর দিক থেকে প্রথম অবস্থানে আছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা।
পুরো অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবে প্রতিবছর অনেকেই এ দেশে পড়াশোনার জন্য আসেন। যাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ অভিবাসী হয়ে স্থায়ীভাবে দেশটিতে থেকে যান। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে এ দেশে ওয়ার্ক পারমিট বা শ্রমিক হিসেবে আসা বাঙালির সংখ্যা খুব কম। সিংহভাগই স্টুডেন্ট ও ডিপেনডেন্ট ভিসা। তবে আশার কথা হলো এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ দেশে টানা কয়েক মাস বসবাসের পর জেনেছি, ঠিক কীভাবে দেশটিতে আসা যায় বা কীভাবে স্থায়ী হওয়া যায়।
২০২২ সালে ব্রিজবেনে আসার পর একটি সংস্থার হয়ে অনুবাদকের কাজ করেছিলাম। আমার কাজ ছিল একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ইংরেজি বক্তার বক্তব্য অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বুঝিয়ে বলা। এই রোহিঙ্গারা খুব ভালো বাংলা জানতেন। তাই আমার কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। তবে এই প্রশিক্ষণ থেকে জানতে পারি, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অনেক রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। তবে এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। সাগরপথে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে দেশটি তৎপর। এমনকি এ ধরনের চেষ্টা ঠেকাতে ফেসবুকে রোহিঙ্গা ভাষায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। তাই প্রথম কথা হলো, কোনো অবস্থাতেই অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা উচিত নয়। তাই বলব, কারও যদি অস্ট্রেলিয়ায় আসার স্বপ্ন বা ইচ্ছা থাকে, তাহলে তাঁর উচিত বৈধ পথে চেষ্টা করা।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব হোম অ্যাফেয়ার্স দপ্তরের তথ্য বলছে, দেশটির জাতীয় ভাষা ইংরেজি। আর তাই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস ও সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার জন্য ইংরেজি জ্ঞান অবশ্যই প্রয়োজন। আমি বলব, কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ায় আসতে চান, তাহলে তাঁর ইংরেজি জ্ঞান অবশ্যই অর্জন করতে হবে। ভালো আইইএলটিএস স্কোর থাকতে হবে। ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা থাকতে হবে। এখানে একটি তথ্য জানিয়ে রাখি, কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতে চান, তাহলে তাঁকে অবশ্যই ৬.৬ আইইএলটিএস স্কোর অর্জন করতে হবে। কোনো বিভাগেই ৬.০ পয়েন্টের নিচে পাওয়া চলবে না।
ব্রিজবেনে এসে দেখেছি, এখানে বসবাস বা চাকরির জন্য একটি যোগ্যতা অত্যাবশ্যকীয়। আর তা হলো গাড়ি চালানোর দক্ষতা বা ড্রাইভিং স্কিল। কেউ যদি অস্ট্রেলিয়ায় এসে চাকরি করতে চান বা বসবাস করতে চান, তাহলে বাংলাদেশ থেকে অবশ্যই গাড়ি চালানো শিখে আসবেন। সঙ্গে থাকতে হবে বাংলাদেশি লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দিয়েই এখানে গাড়ি চালানো যায়। এই দেশে যখন আপনি কোনো চাকরির জন্য চেষ্টা করবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। কারণ, এ দেশে অনেক সকালে কাজ শুরু হয়। ভোরবেলা কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়।
এই দেশে গাড়ি খুব দামি নয়। তিন থেকে পাঁচ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় গাড়ি পাওয়া যায়। হ্যাঁ, অনেক দামি গাড়িও পাওয়া যায়। সবাই তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী গাড়ি কেনেন। আর গাড়ি থাকলে নানা ধরনের খাবার ডেলিভারির কাজ করা যায়। উপার্জন বেশ ভালো। অনেক বাংলাদেশি এখানে অবসর সময়ে নিজের গাড়ি চালিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ করেন। আমি যত দূর জানি, এই কাজ করে কেউ চাইলে এক মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার (প্রায় তিন লাখ টাকা) আয় করতে পারেন।