সাইকেল উপহার পেয়ে মারিয়া বললেন, ‘স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম’

বাংলাদেশি নারী ট্রায়াথলেট ফেরদৌসী আক্তার মারিয়াছবি: কবির হোসেন

দৌড়, সাঁতার ও সাইকেলচালনা—এই তিন রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশে প্রথম নারী হিসেবে গত বছরই ‘আয়রনম্যান ৭০.৩’ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছেন ক্রীড়াবিদ ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া; কিন্তু আয়রনম্যানে অংশ নিতে যে বিশেষ সাইকেল দরকার হয়, তা এত দিন ছিল না মারিয়ার। আজ তেমন সাইকেলই উপহার পেলেন তিনি।

সার্ভেলো ব্র্যান্ডের পি সিরিজের ডিপ ব্লু সানসেট সাইকেলটি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মারিয়া বলেন, ‘সাইকেলটি হাতে পেয়ে মনে হচ্ছে, স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতার জন্য অনেক দিন থেকেই অনুশীলন করছি, সাইক্লিংয়ের অংশটিও এখন অনুশীলন করতে পারব। যাঁরা আমাকে সাইকেলটি দিলেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আমার পাশে থাকার জন্য প্রথম আলোর প্রতিও কৃতজ্ঞতা।’

আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় যে বিশেষ সাইকেল দরকার হয়, তেমন সাইকেলই উপহার পেলেন মারিয়া
ছবি: কবির হোসেন

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ প্রথম আলোর নারী দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চে গিয়ে আয়রনম্যান হওয়ার অনুভূতি ভাগাভাগি করেছিলেন মারিয়া। সেই অভিজ্ঞতা বলার সময় তিনি জানান, অনেক পরিশ্রম করে এ যোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি; কিন্তু তাঁর নিজের কোনো সাইকেল নেই। এ ধরনের সাইকেল বেশ দামি। কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই।

মারিয়ার বক্তব্য শেষ হতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী নারী নিজেদের উদ্যোগে মারিয়াকে এমন একটি সাইকেল কিনে দেবেন বলে জানান। পরে প্রথম আলোর সমন্বয়ে নাম প্রকাশ না করে পেশাজীবী নারীদের সঙ্গে যুক্ত হন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উপাচার্য রুবানা হক। তাঁদের প্রচেষ্টায় সাইকেলটি আজ ১৭ মে প্রথম আলো কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মারিয়াকে হস্তান্তর করা হয়।

সাইকেল হস্তান্তরের সময় মারিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্য মো. আকতারুল ইসলাম ও শুভাকাঙ্ক্ষী আবদুস সালাম। পেশায় চিকিৎসক আবদুস সালাম নিজেও রোমাঞ্চপ্রিয়। বিভিন্ন ম্যারাথনে অংশগ্রহণসহ নিয়মিত সাইক্লিং করেন। মারিয়া বলেন, ‘স্যারই আমাকে প্রথম সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। আজ নতুন সাইকেল নিতেও তাঁকে সঙ্গে এনেছি।’

আরও পড়ুন
গত ৮ মার্চ ছায়ানট ভবনে প্রথম আলো আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে ফেরদৌসী আক্তার মারিয়াকেও (সর্বডানে) সংবর্ধনা দেওয়া হয়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

রংপুরের পীরগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মারিয়ার। বাবা মো. দবির উদ্দীনের পেশা কৃষিকাজ। মা রেহানা বেগম গৃহিণী। ৪ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মারিয়া; কিন্তু খেলাধুলার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাঁর। সেই আগ্রহ থেকেই বাংলাদেশ ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান। সেখানে মারিয়ার বিষয় ছিল ফুটবল। প্রিমিয়ার লিগ পর্যায়েও খেলেছেন বেশ কয়েকবার। ফেসবুক ও ইউটিউবে বাংলাদেশের আয়রনম্যান মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত ও আরিফুর রহমানের ভিডিও দেখে এক দিনের কঠিনতম এই ট্রায়াথলনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু ম্যারাথনে অর্ধদূরত্বে (২১.১ কিলোমিটার) অংশ নেন ও সফল হন। এরপর ৯-১০টা হাফ ম্যারাথনে অংশ নেন তিনি। এর মধ্যে ৭-৮টায় প্রথম তিনটি স্থানের মধ্যে ছিলেন তিনি। গত ১২ অক্টোবর মালয়েশিয়ার লাংকাউইতে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফল হন মারিয়া। এই ট্রায়াথলনে তিনি ৮ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে সম্পন্ন করেছেন ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইক্লিং ও ২১.১ কিলোমিটার দৌড়। এর মধ্য দিয়েই স্পেনে অনুষ্ঠেয় আয়রনম্যান ৭০.৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন।

এখন সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতেই প্রস্তুত হচ্ছেন মারিয়া।

আরও পড়ুন