মুচকি হেসে বললাম, এটা তো আমার জন্য না

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছেই খুব বিশেষ একটা দিন। গাউন পরব, বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলব, আকাশে উড়িয়ে দেব সমাবর্তনের হ্যাট—এমন একটা ছবি কল্পনা করেন অনেকেই। দিনটা আরও বিশেষ হয়ে ওঠে, যদি সঙ্গে থাকেন মা-বাবা। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলতে গিয়ে হয়তো সিনেমার মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলো। আজ মা দিবসে সেসব দিনের স্মৃতিচারণা নিয়ে সন্তানদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে স্বপ্ন নিয়ে পাতায়। এখানে পড়ুন চেক প্রজাতন্ত্রের মাসারিক ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ইনফরমেটিকসের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান–এর লেখা।

আম্মুর এমন উচ্ছ্বাস আগে কখনো দেখিনি
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দ্বিতীয়বার যখন টিউশনির বেতন পেলাম, আম্মুকে ফোন করলাম। ‘আম্মু, বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটা যাচ্ছি ঘুরতে।’একদমই বাসার বাইরে কখনো না যাওয়া আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আম্মু সোজা না করে দেবেন। আমাকে অবাক করে দিয়ে আম্মু বললেন, ‘ঠিক আছে বাবা, ঘুরে আয়। অনেক পড়াশোনা করেছিস জীবনে।’

বাবাহারা হওয়ার পর তৃতীয় দিনের মাথায় মা বলেছিলেন, ‘বাবা আর আসবে না, কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না কারও জন্য। চালিয়ে নিতে হবে। তোমাকে দ্রুত স্কুলে ফিরে যেতে হবে।’ মা এ রকমই আমার জীবনে। প্রতিটি সংগ্রাম, আর চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস।

আরও পড়ুন

১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন যেন ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ এক উপলক্ষ। ক্যাম্পাসে ঢুকেই আম্মুকে গাউন আর হ্যাট পরিয়ে দিলাম। সমাবর্তন উপলক্ষে বেশ কয়েকটি বিলবোর্ডের মতো বানানো হয়েছিল। একের পর এক সেসবের সামনে গিয়ে ছবি তুলছিলাম। আম্মুর এমন উচ্ছ্বাস আগে কখনো দেখিনি। মা-ছেলে মিলে জাহাঙ্গীরনগরের বিশাল ক্যাম্পাসের প্রতিটা আনাচকানাচ ঘুরেছি, কিন্তু ক্লান্ত লাগেনি একটুও।

একসময় আম্মু যখন বারবার বললেন, ‘গাউনটা এবার তুই পর। হ্যাটটা পর।’ মুচকি হেসে বললাম, ‘এটা তো আমার জন্য না।’

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ থেকে হাজারো মাইল দূরে থাকা আমার প্রতিটি মুহূর্ত এখন কাটে মায়ের উৎকণ্ঠায়। তোমাকে ভালোবাসি মা।