কেন ‘অকুপেশনাল থেরাপি’ নিয়ে পড়বেন

২৭ অক্টোবর ছিল বিশ্ব অকুপেশনাল থেরাপি দিবস। এ উপলক্ষে চলুন জেনে নিই, অকুপেশনাল থেরাপি কী? এই বিষয়ে পড়ালেখা বা কাজের কী কী সুযোগ আছে? লিখেছেন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ও সাইক কলেজ অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আকন্দ

হাতে–কলমে শেখার সুযোগ আছে এই বিষয়ে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে যাঁরা স্বাস্থ্যসেবামূলক খাতে যুক্ত হতে চান, তাঁদের জন্য ‘অকুপেশনাল থেরাপি’ হতে পারে একটি বড় সুযোগ। এই শিক্ষা নিয়ে একদিকে আপনি যেমন স্বাবলম্বী হতে পারেন, তেমনি প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করে কিংবা বয়স্ক ব্যক্তিদের পুনর্বাসিত করে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

সমৃদ্ধ ইতিহাস

স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রথম ব্যাপক হারে অকুপেশনাল থেরাপিস্টের প্রয়োজন পড়ে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য এই পেশাজীবীদের প্রয়োজনটা টের পাওয়া যায়। আর জে গাস্ট নামের এক ভিনদেশি অর্থোপেডিক সার্জনের তত্ত্বাবধানে সে সময় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর, পঙ্গু হাসপাতাল নামেই বেশি পরিচিত) চালু হয় অকুপেশনাল থেরাপি কোর্স। ১৯৭৬ সালে প্রথম ব্যাচ বের হওয়ার পর কোর্সটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সম্ভবত প্রয়োজনীয় সম্পদ ও লোকবলের অভাবে কোর্সটি চালু রাখা যায়নি। পরে ১৯৯৫ সালে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আবার চালু হয় অকুপেশনাল থেরাপি কোর্স।

বর্তমানে সিআরপির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশন ইনস্টিটিউটে (বিএইচপিআই) অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগের তিনটি কোর্স চালু আছে। এগুলো হলো বিএসসি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট। সাইক কলেজ অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি ও হেলথ সায়েন্সেস নামে আরও দুটি ইনস্টিটিউটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি অধিভুক্ত অকুপেশনাল থেরাপি কোর্স চালু হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অকুপেশনাল থেরাপি নিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন। জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশের অকুপেশনাল থেরাপির বিএসসি কোর্সটি ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব অকুপেশনাল থেরাপিস্ট (ডব্লিউএফওটি) কর্তৃক স্বীকৃত।

অকুপেশনাল থেরাপির স্নাতক কোর্সে ৪ বছরে মোট ৩০টি বিষয় পড়ানো হয়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কী পড়ানো হয়

অকুপেশনাল থেরাপির স্নাতক কোর্সে ৪ বছরে মোট ৩০টি বিষয় পড়ানো হয়। প্রথম বর্ষে অ্যানাটমি, কমিউনিটি মেডিসিন। পরের বছরগুলোতে নিউরোসায়েন্স, কমিউনিটি কালচার অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি, বিশেষায়িত পুনর্বাসন—এসব নানা বিষয়। শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে শরীরচর্চায় সহায়তা, এ–সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহারিক জ্ঞান, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং—সব রকম শিক্ষাই অকুপেশনাল থেরাপির অংশ।

কাজের সুযোগ কোথায়

চাকরির বাজার বিবেচনায় বর্তমানে এই কোর্সের ব্যাপক চাহিদা আছে। এখানে পড়তে আসা অনেক শিক্ষার্থীরই পাস করার আগেই চাকরি নিশ্চিত হয়ে যায়। একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিশেষায়িত ক্লিনিক, পুনর্বাসন কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বার্ন ইউনিট, অর্থোটিক ও প্রসথেটিক বিভাগ, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল, বিশেষ শিশুদের স্কুল, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র, সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন কেন্দ্র, অটিজম সেন্টার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী সংস্থার মতো গূরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সাধারণ ক্যাডার হিসেবে বা প্রশাসনের বিভিন্ন পদেও কাজ করার সুযোগ আছে।

কেন পড়বেন

বঞ্চিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষ বা প্রতিবন্ধী শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন এই শিক্ষা গ্রহণ করে। শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের বসবাস ও কাজের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, তাঁদের স্বনির্ভর করার জন্য নতুন নতুন যন্ত্রপাতি তৈরি, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন—সবকিছুতেই যুক্ত থাকতে পারেন আপনি। বাংলাদেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও অকুপেশনাল থেরাপিস্টের চাহিদা অনেক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের অকুপেশনাল থেরাপিস্টরা কাজ করছেন। বর্তমানে খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিষয়টি পড়ানো হয়। আরও বিশ্ববিদ্যালয় যদি কোর্সটি পড়ানোর উদ্যোগ নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন।