বিবিএ নিয়ে ৬ ভুল ধারণা

ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক বা ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের ডিগ্রি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ার সুযোগ আছে। তবে বিবিএ ডিগ্রি নিয়ে অনেকের মধ্যেই আছে নানা ভুল ধারণা। এমনই কয়েকটি ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ। কার্টুন এঁকেছেন রৌদ্র বড়ুয়া

১. বিবিএতে খুব একটা পড়াশোনা করতে হয় না

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

একদমই ভুল। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো বিবিএতে পড়ালেখার বেশ চাপ। এখানে শিক্ষার্থীদের যেমন ক্লাস করতে হয়, তেমনি তৈরি করতে হয় প্রেজেন্টেশন ও প্রকল্প, করতে হয় ইন্টার্নশিপ। শিখতে হয় ভবিষ্যতের করপোরেট ও ব্যবসা দুনিয়ার নানা কৌশল। তাত্ত্বিক পড়ালেখার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কাজ (ফিল্ড ভিজিট), সেমিনারে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে কারিগরি অনেক সফটওয়্যারের কাজও জানতে হয়। বিবিএর পড়ালেখায় অতীতের ব্যবসা সম্পর্কে যেমন জানতে হয়, তেমনি ভবিষ্যতের পেশার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়েও পড়তে হয়। বিবিএর এমন অনেক কোর্স আছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হয়, উপস্থাপন করতে হয়, নতুন নতুন আইডিয়া ও ব্যবসাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হয়। সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ততায় কাটে সময়।

২. বিবিএ পড়লেই করপোরেট চাকরির সুযোগ হয়

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

বিভিন্ন করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো বিভাগে বিবিএর শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পান, এটা ঠিক। তবে বাংলাদেশের চাকরির বাজার মোটের ওপর সব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই উন্মুক্ত, এখানে শুধু বিবিএ পড়ে বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায় না। অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার আছেন, যাঁরা বাংলা বা অর্থনীতি বিষয়ে পড়েছেন। আবার অনেক সফল ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ইংরেজি বা কলাবিভাগের কোনো বিষয়ে পড়েছেন। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নির্বাহী হিসেবে বিবিএ না পড়া ব্যক্তিদের সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতার ভিত্তিতে তরুণ নির্বাহীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সব বিষয়ের শিক্ষার্থীরাই আদতে সমান সুযোগ পাচ্ছেন।

৩. শুধু ব্যবসায় শিক্ষায় পড়লেই বিবিএতে ভালো করা যায়

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

অনেকেই মনে করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা না পড়লে বিবিএতে ভালো করা যায় না। একেবারেই ভুল। বিবিএর শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের বিষয়ে পড়তে হয়, জানতে হয়। অর্থনীতি, গণিত, যোগাযোগ, ব্যবসাসংক্রান্ত আইন, পরিসংখ্যান, আন্তর্জাতিক ব্যবসা, ইত্যাদি এর পাঠ্যক্রমের অংশ। বিপণন নিয়ে পড়তে গেলে মনোবিজ্ঞানের ধারণা নিতে হয়। অ্যাকাউন্টিং শিক্ষায় ব্যবসার কৌশল সম্পর্কে জানতে হয়। তাই ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রদের যেমন অনেক নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়, তেমনি বিজ্ঞানের ছাত্ররাও নতুন কিছু জানতে পারেন। যাঁরা বিজ্ঞানে পড়েছেন, তাঁরা বিবিএ পড়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যায় পড়েন না। মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। শিক্ষার্থীর দক্ষতার ওপরই আসলে ভালো ফল নির্ভর করে।

৪. বিবিএ পড়ে অন্য কোনো বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ নেই

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

যাঁরা বিবিএ পড়েন, তাঁরা পরে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স, এমবিএ বা পিএইচডি করার সুযোগ পাচ্ছেন। বিবিএর সঙ্গে বহুমাত্রিক বিষয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকে। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক করে আপনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ) পড়তে পারেন। ইদানীং উন্নয়ন অধ্যয়ন, সমাজকল্যাণসহ নানা বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হচ্ছেন বিবিএর শিক্ষার্থীরা। বিবিএ পড়ে এমবিএ থেকে শুরু করে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বিদেশে পড়ার অনেক সুযোগ আছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ, যুক্তরাজ্যে চিভনিং বৃত্তিসহ নানা দেশের সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বৃত্তির জন্য বিবিএর শিক্ষার্থীরা মনোনীত হচ্ছেন।

৫. বিবিএর পড়াশোনায় কম্পিউটার দক্ষতা বা গণিতের কাজ নেই

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে পড়াশোনার গতিপ্রকৃতি। একজন বিবিএ গ্র্যাজুয়েটকে মাইক্রোসফট এক্সেল সম্পর্কে যেমন জানতে হয়, তেমনি পরিসংখ্যান ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন সফটওয়্যারের কাজ শিখতে হয়। পরিসংখ্যানসংক্রান্ত প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার—আর, স্ট্যাটাসহ মাইক্রোসফট অফিসের বিভিন্ন সফটওয়্যার, যেমন এমএস ওয়ার্ড, এমএস পাওয়ার পয়েন্ট সম্পর্কে জানতে হয়। পরিসংখ্যান ও গণিতের বিভিন্ন মৌলিক জ্ঞান একজন বিবিএ শিক্ষার্থীকে এগিয়ে রাখে। অতএব গণিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা বিবিএর পড়ার জন্য জরুরি।

৬. বিবিএ পড়া শেষ করেই এমবিএ করা জরুরি

কার্টুন : রৌদ্র বড়ুয়া

বিবিএ পড়া শেষ করে এমবিএ ডিগ্রি নিতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যাঁরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতে চান, তাঁদের জন্য এমবিএ দারুণ একটি সুযোগ। আবার যাঁরা স্নাতক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষায় পড়ার সুযোগ পাননি, তাঁদের জন্যও এমবিএ ব্যবসায়সংক্রান্ত কৌশল শিখতে পেশাদার ডিগ্রি হিসেবে সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। এমবিএ ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করছে শিক্ষার্থীর পেশাগত আগ্রহের ওপর।