ইন্টার্নশিপ পাওয়ার পর যেসব বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে এখন ইন্টার্নশিপ বা শিক্ষানবিশিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। সাধারণত চতুর্থ বর্ষে বা শেষ বর্ষে ৪ থেকে ২৪ সপ্তাহের ইন্টার্নশিপে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে হয়। ইন্টার্নশিপ পাওয়ার পর কোন বিষয়গুলোর ওপর লক্ষ রাখা উচিত? জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ।

মডেল: সিফাত ও জুলফিকার
ছবি: কবির হোসেন

প্রতিষ্ঠানকে বুঝতে হবে

যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে যুক্ত হবেন, সে প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন বা অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানার চেষ্টা করতে হবে। ভবিষ্যতে চাকরির সাক্ষাৎকারে কিন্তু ইন্টার্ন হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। এমন যেন না হয়, যে আপনি আপনার ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে পারলেন না বা ভুল তথ্য দিলেন। তাহলে চাকরিদাতারা শুরুতেই আপনার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা লিংকডইন থেকে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইন্টার্ন হিসেবে যাঁদের সঙ্গে কাজ করবেন, তাঁদের কাছ থেকেও জানার সুযোগ থাকবে।

কাজ বুঝতে হবে

মিটিং বা সভায় অংশগ্রহণ, প্রতিবেদন তৈরি, সভার সারসংক্ষেপ লেখা (মিটিং মিনিটস), আইডিয়া উপস্থাপন ইত্যাদির সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। মনে করুন, আপনি মার্কেটিং নিয়ে পড়েছেন, কিন্তু ইন্টার্ন হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন মানবসম্পদ বিভাগে। মনখারাপ করলে চলবে না। নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মানবসম্পদ বিভাগের কাজও আপনার ভালো লেগে যেতে পারে, এই বিভাগে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। তাই শেখার মানসিকতা নিয়ে শতভাগ চেষ্টা করুন।

যোগাযোগ শিখতে হবে

ইন্টার্নশিপের মাধ্যমেই সাধারণত আমরা কাজের দুনিয়ায় পা রাখি। করপোরেট জগতের ভাষা কিন্তু আলাদা। এখানে যেমন নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, তেমনি অন্যকে জানতে হয়। আবেগকেন্দ্রিক বুদ্ধিমত্তা বা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স চর্চার মাধ্যমে শিখতে হবে। বাংলাদেশের করপোরেট ক্ষেত্রে কাজের জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভালো ইংরেজি জানা ও বলাকে আলাদা দক্ষতা হিসেবে ধরা হয়।

কারিগরি দক্ষতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ থেকে আমরা অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাই না। এটা মেনে নিয়েই কিছু কিছু কারিগরি দক্ষতা ইন্টার্নশিপের সময় রপ্ত করে নিতে হবে। আপনি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে প্রচুর পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছেন। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশ করে দেখলেন, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টের বদলে ‘ক্যানভা’ সফটওয়্যারে প্রেজেন্টেশন তৈরি হচ্ছে। আমি তো এই সফটওয়্যারের কাজ জানি না, এ কথা ভেবে প্রথমেই হাত গুটিয়ে নেবেন না বা ভয় পাবেন না। বরং এটাকে শেখার একটা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। পেশাজীবীদের মতো করে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে শিখুন।

মেন্টর খুঁজে নিন, নেটওয়ার্ক তৈরি করুন

ইন্টার্ন হিসেবে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হবেন, তখন আপনার কারও অধীনে কাজের সুযোগ হবে। যে দলের প্রধানের অধীনে কাজ করবেন, তাঁর কাছ থেকে কাজের খুঁটিনাটি জানতে হবে। কাজ করতে করতে নিজের পছন্দমতো মেন্টর তৈরি করে নিতে পারেন। মেন্টর যে নিজের কর্মক্ষেত্রেরই হবে, বিষয়টি এমন নয়। অন্য ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও মেন্টর হিসেবে খুঁজে নিতে পারেন। যে ক্ষেত্রে কাজ করবেন, সেই ক্ষেত্রের মানুষদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমেই নতুন সুযোগ ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানা যাবে।

কাজ ও জীবনের সমন্বয় শিখুন

ইন্টার্নশিপ পেয়েই যে অফিসে অনেকটা সময় কাটাতে হবে, তা নয়। বরং কর্মজীবনের শুরু থেকেই কাজ ও বাইরের জীবনের সমন্বয় করতে শিখুন। কাজের সময় কাজ করুন, অবসরে নিজেকে তৈরি করুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। আবার অফিসেও যে সব সময় কাজ করতে হবে, তা নয়। দুপুরের খাবার সময়মতো খাওয়া বা নিজের শরীরের যত্নের জন্য কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন।

কৌশল জানুন, নোট নিন, অনুসরণ করুন

প্রযুক্তির কারণে সব তথ্য–উপাত্তই এখন আমরা মুঠোফোন বা ল্যাপটপে রাখছি। তবে করপোরেট দুনিয়ায় কিন্তু এখনো কলম-কাগজের আলাদা কদর আছে। আপনার প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কোনো মিটিং থাকলে মিটিংয়ে নোট নেওয়ার চেষ্টা করুন। যাঁরা প্রতিষ্ঠানে সফল, তাঁদের কর্মকৌশল, দল পরিচালনার ধরনগুলো বোঝার চেষ্টা করে নিজেকে বিকাশিত করুন।