মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ রিয়াদের গবেষণার বিষয়

রিয়াদ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার ব্যাপারে রিয়াদ হোসেনের আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগে যখন ভর্তি হলেন, আগ্রহটা বাড়ল আরও। পাঠক্রমের অংশ হিসেবে শুরু হলো মাঠপর্যায়ে গবেষণা, টুকে রাখতে শুরু করলেন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত। এভাবে অনেকটা একাডেমিকেল বেড়াজালে পড়েই গবেষক বনে যান রিয়াদ। শুরুর দিকের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘আমি তখন প্রথম বর্ষে পড়ি। পরীক্ষার অংশ হিসেবে অধ্যাপক দিব্যদ্যুতি সরকার আমাদের নিজ নিজ গ্রামের ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিতে বললেন। এই কাজ করতে গিয়েই জানলাম, আমার গ্রাম খুলনার খারাবাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।’ 

আরও পড়ুন

সেই শুরু। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর লুপ্ত হতে বসা ইতিহাসের পেছনে ছয় বছর ধরে ছুটছেন রিয়াদ। প্রায় ১০টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশি-বিদেশি গবেষকের সামনে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক পর্যায়ের গণহত্যার ইতিহাস। এরই মধ্যে পাঁচটি গবেষণা প্রবন্ধের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত হয়েছে। এবারের বইমেলায় এসেছে তাঁর গবেষণালব্ধ বই—খুলনার মুক্তিযুদ্ধ: বটিয়াঘাটা। 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হয়েছে। এত বছর পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণাটা বেশ কঠিন বলেই মনে হয় রিয়াদের কাছে। জানালেন, মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। রিয়াদ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। গবেষণার জন্য অর্থের জোগাড় করাটাও তাঁর কাছে বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। তথ্যের সংকট, নানা রাজনৈতিক সমীকরণ, কিংবা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নির্ভরযোগ্য গবেষণার অভাবও পদে পদে রিয়াদকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেছেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই এখন প্রয়াত। ঘটনার সত্যতা যাচাই করাটা তাই কঠিন হয়ে যায়। 

 সামাল দিলেন কীভাবে? রিয়াদ বলেন, কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আর রাজনৈতিক সমীকরণ যা-ই হোক না কেন, রিয়াদ মূলত তৃণমূলের মানুষের ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। তাঁর গবেষণায় রাজনৈতিক ভেদাভেদ খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। 

রিয়াদের মূল আগ্রহের জায়গা মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ। তিনি বিভিন্ন অঞ্চল ও গ্রাম ঘুরে বেড়ান, সাধারণ মানুষের বক্তব্য সংগ্রহ করেন। এরপর সেই মৌখিক ইতিহাস একাডেমিক ভাষায় উপস্থাপন করেন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তর, সম্পত্তি দখলের মতো বিষয়গুলো তাঁর গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মজার কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সাক্ষাৎকার নিতে গেলে অনেকে সরকারি লোক কিংবা সাংবাদিক মনে করে মন খুলে কথা বলতে চাইতেন না। বিড়ম্বনা এড়াতে রিয়াদ তাই স্থানীয় ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছেন, যেন ওপাশের মানুষগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারেন। 

ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চান এই তরুণ। সঙ্গে জানিয়ে রাখলেন, ‘ভবিষ্যতেও মুক্তিযুদ্ধে তৃণমূল মানুষের অবদান এবং তাঁদের ভোগান্তিই হবে আমার গবেষণার বিষয়।’