মন বসে না পড়ার টেবিলে?

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

কেউ কেউ গণপরিবহনেও দিব্যি বই পড়তে পারে। অনেকে আবার হট্টগোল, হইচইয়ের মধ্যে মনোযোগই ধরে রাখতে পারেন না। তাঁদের চাই নীরবতা। আবার নীরব পরিবেশে পড়তে পারেন না, এমন মানুষও আপনি আশপাশেই পাবেন। পরিবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে। কিন্তু এর বাইরেও একেবারেই নিজস্ব কিছু বিষয় থাকে, যার ওপর নির্ভর করে মনঃসংযোগের ক্ষমতা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে, পড়ায় মন বসছে না, কিংবা পড়া মাথায় ঢুকছে না—এমন সমস্যায় ভুগছেন যাঁরা, এই লেখাটি তাঁদের জন্যই।

মুহূর্তকে গুরুত্ব দিন

যে মুহূর্তে আপনি পড়ালেখা করছেন বা এমন কোনো কাজ করছেন, যাতে মনোযোগ দিতে হবে, সেই মুহূর্তে অন্য সব ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখুন। পড়ার মধ্যে হয়তো এমন কোনো কথা মনে পড়ল, যা পরে প্রয়োজন হবে, সেই বিষয়টি আলাদা একটা কাগজে খুব সংক্ষেপে লিখে রাখুন। পড়ালেখা শেষে তবেই অন্য কাজে হাত দিন। একই সঙ্গে একাধিক কাজ করবেন না। না চাইতেই নানা ভাবনা মাথায় চলে আসার সমস্যা এড়াতে মনকে স্থির করার অভ্যাস করুন। রোজ কয়েক মিনিটের জন্য চোখ বুজে স্থির হয়ে বসে থাকুন। ওই সময় লম্বা শ্বাস নিন, আর লম্বা করে নিশ্বাস ছাড়ুন। চোখ বুজে কানে আসা শব্দটাকে কেবল অনুভব করুন। ‘ফোকাস’ স্থির রাখুন। রোজকার এই অভ্যাস পড়ালেখায় মনোযোগ আনতে বেশ কার্যকর।

এদিক-ওদিক-সেদিক নয়

পড়ার সময় কেউ ডাকলে তাঁকে বলে দিন, খুব জরুরি কোনো বিষয়ে না হলে পড়া শেষ করে তাঁর কথা আপনি শুনবেন। পড়ার সময় বারবার মুঠোফোন দেখবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ওই সময়টুকুর জন্য নিজেকে বিচ্ছিন্ন থাকুন। সম্ভব হলে মুঠোফোন নীরব রাখুন এবং দূরে রাখুন। তবে হোস্টেল জীবনে এভাবে মুঠোফোন নীরব রাখতে হলে বাড়িতে জানিয়ে রাখুন। নইলে হঠাৎ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বাড়ির সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতে পারেন। তা ছাড়া বাড়িতে কোনো জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তাঁরা যেন আপনার সঙ্গে বিকল্প কারও মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন, এমন ব্যবস্থাও রাখুন। পড়ালেখার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলেও সেই সময় অন্য কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকবেন না বা কারও বার্তা পড়বেন না।

মনকে অবহেলা নয়

যে সময়টায় আপনার পড়া ভালো হয়, সেই সময়েই পড়ুন। রোজকার জীবনধারায় ভালো লাগার কোনো কাজ, যা না করলে অতৃপ্তি রয়ে যায়, করে ফেলতে পারেন পড়তে বসার আগেই। তবে যদি পড়া শেষ করে পরে সেই কাজটি করতে চান, তাহলে পড়ার সময় কিন্তু বারবার সেটির কথা মনে আনা যাবে না। যখন পড়তে একেবারেই ভালো লাগছে না, তখন জোর করে বই সামনে না রাখাই ভালো। অন্য ধরনের কাজে খানিকটা সময় কাটিয়ে এরপর পড়তে বসুন। ছাদের খোলা হাওয়ায়, খোলা মাঠে কিংবা বারান্দার গাছের সঙ্গে বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন এমন পরিস্থিতিতে।

জীবনযাপন হোক ইতিবাচক

ঘুম, খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চা—সবই হওয়া চাই ঠিকঠাক। রাত জেগে সিনেমা দেখে, আড্ডা দিয়ে কিংবা চ্যাট করে সকালে ক্লাসে গেলে মনোযোগ বসাতে না পারাটাই স্বাভাবিক। ঘুম চাই পর্যাপ্ত। পরীক্ষার আগমুহূর্তের জন্য সব পড়া জমিয়ে রাখলে তখন কিন্তু ঘুমের অভাবে পড়ায় মনোযোগ না-ও আসতে পারে। তাই সময়ের পড়া সময়েই করে ফেলুন। ক্ষুধার্ত অবস্থায় পড়ায় মন বসবে না। আর এমন খাবার খেতে হবে, যাতে হঠাৎ করে মস্তিষ্কে গ্লুকোজের অভাব না হয়। গোটা শস্যদানার খাবার (রিফাইনড নয়) এবং আঁশসমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি খেলে বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। এসব খাবার ছাড়াও মাছ, বাদাম এবং অলিভ অয়েল দিয়ে সাজিয়ে নিন আপনার খাদ্যতালিকা। এভাবে গড়ে তুলতে পারেন ‘মেডিটেরিনিয়ান ডায়েট’-এর অভ্যাস, যা মস্তিষ্কের জন্য ভালো। খানিকটা চা বা কফি খেতে পারেন রোজ। নেশাজাতীয় দ্রব্য অবশ্যই বর্জনীয়। রোজ অল্প সময়ের জন্য হলেও শরীরচর্চা করুন। কায়িক শ্রমের খেলাধুলা কিন্তু দারুণ ব্যায়াম। এ ছাড়া সুডোকু, পাজল, ক্রসওয়ার্ড বা শব্দজব্দ সমাধান করার অভ্যাস করতে পারেন। এগুলো মস্তিষ্কের ব্যায়াম।

আরও পড়ুন

বুঝে পড়ুন, বিরতি দিন

যা পড়ছেন, তা বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। না বুঝে মুখস্থ করলে আখেরে কোনো কাজে আসে না। ক্লাসে পড়া বুঝে নিন। না বুঝলে প্রশ্ন করুন, দ্বিধা করবেন না। প্রয়োজনে গ্রুপ স্টাডি করুন। সেখানেও মন দিয়ে শুনুন অন্যের কথা। একটানা পড়ালেখা না করে প্রয়োজনমতো বিরতি নিন। কিন্তু বিরতির সময় মুঠোফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করাই ভালো। বরং মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন। বিরতিতে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। হালকা ধাঁচের কোনো ‘স্ট্রেচিং’ ব্যায়ামও করতে পারেন।

বলার অভ্যাস

নিজে যা পড়লেন, তা বলতে পারেন সহপাঠী বা বন্ধুকে, এমনকি নিজেকেও। যা শিখলেন, তা অন্যকে বোঝাতে হলে যেভাবে বলবেন, সেভাবে নিজে নিজেও আওড়াতে পারেন পড়ার বিষয়গুলো। এক দিনেই এভাবে বলতে না পারলেও পড়ার পরে বলার এই অভ্যাস পরে আপনার পড়ার সময় মনোযোগ বাড়াবে।

পড়ার অভ্যাস

পড়ার বইয়ের বাইরেও কিন্তু অনেক বই আছে, যা পড়ার অভ্যাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। আপনার পছন্দের বিষয়ের ওপর কিছু পড়তে পারেন, আবার মজার কোনো বইও পড়তে পারেন। কোনো না কোনো বইয়ের পাতায় মনোযোগ স্থির করার অভ্যাসটা পরে পাঠ্যবইয়ে মন বসাতেও কাজে দেবে।

সূত্র: হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল