টিকটকে ভাইরাল গার্ল ম্যাথ বিষয়টা আসলে কী?

মনে করুন, একটা মেয়ে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা নেকলেস কিনেছেন। যেটা কেনাটা অর্থনৈতিকভাবে তাঁর জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এখন তাঁর জীবনসঙ্গীকে নেকলেস কেনার কথাটা তিনি কীভাবে বলবেন? বলবেন, ‘শোন, আমি না আজ ৭৫ হাজার টাকা বাঁচিয়েছি। কীভাবে? এই নেকলেসটা না কিনলে আমাদের তো বিচ্ছেদ হয়ে যেত। তখন “ডিভোর্স লয়্যার”কে ১ লাখ টাকা দিতে হতো! কিন্তু মাত্র ২৫ হাজার টাকা দিয়ে আমি এই নেকলেসটা কিনেছি। বিয়ের পর তো কিছুই কিনিনি। বহুদিনের শখ ছিল।’ বিশ্বাস করুন বা না করুন, এই ধরনের যুক্তি, মানসিক সমীকরণ ‘গার্ল ম্যাথ’ হিসেবে জনপ্রিয়! কেননা, এই ধরনের যুক্তির সঙ্গে নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মেয়েই সহমত পোষণ করে।

গার্ল ম্যাথ পশ্চিমা তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে অনলাইনে জনপ্রিয়তা পাওয়া একটা ধারণা
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

গার্ল ম্যাথ পশ্চিমা তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে অনলাইনে জনপ্রিয়তা পাওয়া একটা ধারণা। তরুণদের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাোযোগমাধ্যম টিকটকে ব্যাপক জনপ্রিয়, ট্রেন্ডি একটা শব্দ হলো ‘গার্ল ম্যাথ’। টিকটক থেকে, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল গার্ল ম্যাথের বিভিন্ন রিলস। গার্ল ম্যাথের সঙ্গে আসলে গণিত বা হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই। এটা স্রেফ মেয়েদের হিসাব-নিকাশের মজার মজার যুক্তি। গার্ল ম্যাথের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে ‘বয় ম্যাথ’, ‘বয়ফ্রেন্ড ম্যাথ’, ‘বাইকার ম্যাথ’, ‘গার্লফ্রেন্ড ম্যাথ’ এই টার্মগুলোও পরিচিতি পেয়েছে।

গার্ল ম্যাথের সঙ্গে আসলে গণিত বা হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই। এটা স্রেফ মেয়েদের হিসাব-নিকাশের মজার মজার যুক্তি
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

যা কিছুর দাম ৫০ টাকার কম, সেগুলো একরকম ফ্রি। আপনি কোনোকিছু কেনার পর সেটা আবার ফেরত দিচ্ছেন। ফেরত দিয়ে যে জিনিসটা পেলেন, সেটা ফ্রি–ই পেলেন! কেননা, যেটা ফেরত দিচ্ছেন, সেটা তো ফেরত দেওয়ার কথা ছিল না। সেই টাকা দিয়ে নতুন কিছু কিনতে পারার মানে হলো সেটা ফ্রি পাওয়া। আপনি যদি ১ হাজার টাকার একজোড়া স্যান্ডেল কেনেন আর সেটা ১০০ দিন পরেন, এর মানে আপনি দিনে স্যান্ডেলের পেছনে মাত্র ১০ টাকা খরচ করেছেন! যেটা একরকম ফ্রি!

গার্ল ম্যাথের সঙ্গে আসলে গণিত বা হিসাববিজ্ঞানের সম্পর্ক নেই
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

বিষয়টা হলো, অনেক মেয়ে কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন। এই ‘শপোহলিক’ মেয়েরা তাঁদের এসব কেনাকাটাকে নানাভাবে ‘জাস্টিফাই’ করেন। দুশ্চিন্তাকে দূর করা  সেখান থেকেই মূলত যুক্তিগুলোর উদ্ভব। সেটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে নানা ক্ষেত্রেও। ‘উইমেনস মানি উইজডম’ পডকাস্টের মেলিসা ফ্রাডেনবার্গ বলেন, গার্ল ম্যাথের যুক্তিগুলোকে খুব গুরুত্ব দিয়ে নেওয়ার কিছু নেই। বাড়াবাড়িরও কিছু নেই। বরং একটা কথোপকথন শুরুর জন্য গার্লম্যাথ সেরা! এটা স্রেফ মজা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যে পরিবারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নারীরাই নিয়ে থাকেন, এটা স্পষ্ট। দৈনন্দিন কেনাকাটা, জামাকাপড়, খাবার—ওগুলো অনেক নারীই করে থাকেন।

একনজরে গার্ল ম্যাথের কয়েকটা উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক:


১. যা কিছুর দাম ৫০ টাকার নিচে, এগুলো ফ্রি!


২. আপনি যদি ছাড়ে জিনিস না কেনেন, তার মানে টাকা হারালেন।


৩. আপনি যদি কোনো জিনিস ফিরিয়ে দিয়ে নতুন কিছু কেনেন, তাহলে পরের জিনিসটা ফ্রি পেলেন।


৪. একদিন কেএফসি, বিএফসি বা নিদেনপক্ষে নর্থ অ্যান্ড বা গ্লোরিয়া জিন্সে কফি না খাওয়ার অর্থ হলো আপনি টাকা বাঁচালেন! বিষয়টা এমন যেন খরচটা হওয়ারই ছিল।


৫. আপনার প্রিয়, শখের বা পছন্দের কিছু কিনলেন, এর মানে সেটা ধরার মতো কোনো ব্যয় নয়...সেটা নিয়ে কখনোই আফসোস করবেন না। কেননা, শখের দাম লাখ টাকা!


৭. টাকা খরচ করতে কষ্ট হচ্ছে? কার্ডে পে করুন!

টিকটকে ‘হ্যাশট্যাগ গার্ল ম্যাথ’ দিয়ে সার্চ করলে আপনি ৫০ কোটিরও বেশি ভিডিও পাবেন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

টিকটকে ‘হ্যাশট্যাগ গার্ল ম্যাথ’ দিয়ে সার্চ করলে আপনি ৫০ কোটিরও বেশি ভিডিও পাবেন। এই যুক্তিগুলোর সঙ্গে আসলে কেনাকাটার ভালো সিদ্ধান্ত, খারাপ সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো শুধুই মজার করার জন্য। আর অনেক ক্ষেত্রে এসব হিসাব–নিকাশ কাজের বলেও মত দেন অ্যাফোর্ড অ্যানিথিং পডকাস্টের সঞ্চালক পওলা পান্ট।


‘টিচ ইউ টু বি রিচ’ পডকাস্টের সঞ্চালক রমিত শেঠি অবশ্য বলেছেন, অর্থ সঞ্চয় করতে চাইলে গার্ল ম্যাথ থেকে দূরে থাকাই ভালো।