লাল-সবুজ দেখলেই মনে হয় বাংলাদেশ
দেশের বাইরে থাকেন এমন অনেকের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ছোট ছোট জিনিসে থাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া। চাবির রিং কিংবা কফির মগে আঁকা থাকে দেশের মানচিত্র কিংবা পতাকা
আলাদা করে লাল বা সবুজ রঙের নিজস্ব একটা অর্থ আছে। কিন্তু লালের সঙ্গে সবুজ বা সবুজের সঙ্গে লাল রংটি দেখলেই মাথায় আসে একটি নাম—বাংলাদেশ। সেটা বিশ্বের যে জায়গাতেই অবস্থান করি না কেন। বাঙালির মনে এ দুটি রং গেঁথে গেছে। স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ করে ‘নকশা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে চোখ বোলাচ্ছিলাম। দিবসটি ধরে লেখা প্রতিবেদনগুলোর ছবিই বলে দিচ্ছিল, বাংলাদেশকে পোশাকে একসময় পতাকার দুটি রঙের মাধ্যমেই তুলে ধরা হতো। সেই ধারণা অনেকটাই বদলে গেছে, এখন কবিতার লাইন, বাংলা অক্ষর দিয়েও আমরা প্রকাশ করছি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর গর্ব।
তবে নকশায় নতুনত্ব এলেও এই রং দুটিও রয়ে গেছে। বরং পোশাকের পাশাপাশি ঘরের সাজে কিংবা আলোকসজ্জাতেও ঢুকে পড়েছে লাল-সবুজ। খেলার সময় দেশে বা বিদেশের মাটিতে লাল-সবুজ টি-শার্ট এখনো গায়ে জড়িয়ে থাকে। বিদেশের মাটিতে দেশকে তুলে ধরার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কীই-বা হতে পারে। কে ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান জানালেন, এ বছরও বেশ কিছু পুরোনো নকশা নতুনভাবে আবার করা হয়েছে। তবে জনপ্রিয়তার কারণে পতাকা, মানচিত্রের নকশাসহ টি-শার্টের পুনরাবৃত্তি আবার করতে হচ্ছে। পাশাপাশি নতুনভাবে গানের লাইন দিয়েও নকশা করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের পোশাক। ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি লাইনগুলো দেখা যাচ্ছে টি-শার্টে। তরুণেরাই বেশি আকৃষ্ট হন এ ধরনের নকশায়। লাল শাড়ির সঙ্গে সবুজ ব্লাউজ কিংবা সবুজ কামিজের সঙ্গে লাল ওড়না মিলিয়ে পরাটা অনেকটাই সাধারণ এখন। তবে আধুনিকভাবেও অনেকে লাল-সবুজ প্যান্ট আর টপসের ওপর লম্বা জ্যাকেট পরে ফেলছেন।
দেশের বাইরে থাকেন এমন অনেকের দৈনন্দিন ব্যবহার্য ছোট ছোট জিনিসে থাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া। চাবির রিং কিংবা কফির মগে আঁকা থাকে দেশের মানচিত্র কিংবা পতাকা। ফ্রিজের দিকে চোখ গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ছোট একটা চিহ্ন আটকে আছে ধাতব দরজার ওপরে ম্যাগনেট হিসেবে। এ যেন দেশ ছেড়ে গেলেও চেতনাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার মতো। দেশের সীমান্ত পার করার সময় আমাদের ব্যাগেও থাকে লাল-সবুজ স্মারক, উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য। জাতীয় পতাকার এই রং দুটির প্রতি অন্য রকম একটা আবেগ কাজ করে। সেটা দেশের বাইরে গেলে আরও বেশি অনুভব করা যায়।
বিশেষ দিনগুলোতে শিশুদের মাথায় পরিয়ে রাখা যায় ছোট্ট ক্লিপ কিংবা হাতে হ্যান্ডব্যাগ। শিশুদের পড়ার টেবিলে দিনটিতে অনেক অভিভাবকই পেনসিল বাক্সে সাজিয়ে দিতে পারেন ছোট মাপের পতাকা। টি-শার্টেও থাকতে পারে পতাকার ছবি। আর তিন-চার দিন পর রাস্তায় বের হলেই যেমন মন ভালো হয়ে যাবে। রিকশা, গাড়ি কিংবা অটোরিকশায় বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। মাথায় থাকবে ব্যান্ডানা। শিশুদের হাতে ছোট পতাকা। এদিন বদলে যায় ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারটিও। অন্য কিছুর চেয়ে লাল-সবুজ আছে, এমন কিছু দিলেই বোঝা যায়, উপলক্ষ ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বর। দেশকে তুলে ধরে, এমন নকশার পোশাক পরা যায় সারা বছরই। তবে বিশেষ দিনগুলোতে এই রং দুটির কথাই যেন আগে ভাবনায় আসে। হৃদয়ে লাল-সবুজ রং ধারণ করলে পোশাকেও রংটির বহিঃপ্রকাশ হয়ে যায় আপনা-আপনি।