‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ জিনিস কেনার প্রচলন বাড়ছে কেন

অনলাইনে মাত্র দেড় হাজার টাকায় (পড়ুন প্রায় বিনা পয়সায়) একটা ট্রেডমিল কিনেছিলেন আবির। দিব্যি বছর দুয়েক ব্যবহার করেছেন। তারপর দুই হাজার টাকায় আবার বিক্রি করে দিয়েছেন! এ ছাড়া ঘড়ি, স্মার্টওয়াচ, মোবাইল, ফ্যান, স্পিকার, চুলের ড্রায়ার, আসবাব—এসব অনলাইন থেকে কিনতেই থাকেন আবির। এই বেসরকারি চাকুরে বললেন, ‘আমি হুটহাট সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কিনি। খুব কমই খারাপ জিনিস পেয়েছি। এমন সব জিনিস কিনে ব্যবহার করেছি, যেগুলো একদম আনকোরা নতুন হিসেবে কেনা আমার চিন্তারও বাইরে!’

জনপ্রিয়তা পাচ্ছে থ্রিফট শপিং
ছবি: পেক্সেলস

আবির জানান, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের বিপরীতে একটা ‘চিপা গলি’ আছে। সেখানে সেকেন্ড হ্যান্ড ইলেকট্রনিক পণ্যের বেশ কিছু দোকান আছে। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের পাশের রাস্তায় সন্ধ্যা ছয়টা বাজলেই বসে যায় এ রকম দোকান। আবার রাত ১০টার আগেই সেগুলোর বেচাকেনা শেষ। সেগুনবাগিচা আর পুলিশ প্লাজার পেছনে পাওয়া যায় সেকেন্ড হ্যান্ড আসবাব। ফ্যাশন পণ্য রাজধানীর মতিঝিল, পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে কম-বেশি সবখানেই পাওয়া যায়। ‘ভ্যান শপিং’ বলে একটা টার্মও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উচ্চবিত্তরাও নিয়মিত গাড়ি থেকে নেমে ভ্যানের ওপরের এসব পণ্য কিনে নিয়ে যান।

আপনি কখনো টাকা দিয়ে অন্যের ব্যবহার করা জিনিস কিনেছেন? এ রকম প্রশ্নে অনেকেই একসময় নাক সিটকাত। ভ্রু কুচকে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হওয়াটাই এখন কঠিন।

থ্রিফট শপিং এখন সারা বিশ্বের বাস্তবতা। ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ মার্কেট থেকে পোশাক কেনা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ঘটনা। দেশ, জাতি, শ্রেণি নির্বিশেষে এখন অনেকেই থ্রিফট শপিং করেন। অনেকে এটাকে ভিনটেজ শপিংও বলেন। তবে কোনো পোশাক বা ব্যবহার্য পণ্য ভিনটেজ হতে হলে এটাকে অন্তত ২০ বছরের পুরোনো হতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে ট্রেন্ডে আসার আগে থেকেই বাংলাদেশে সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেট ছিল। তবে তখন একটা বিশেষ শ্রেণিই মূলত সেখান থেকে কেনাকাটা করতেন। এখন সেকেন্ড হ্যান্ড শপের সংখ্যা বেড়েছে। সব শ্রেণি, পেশার মানুষের কাছে থ্রিফট শপিং এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। পোশাক থেকে শুরু করে মুঠোফোন, আসবাব বা ব্যবহার্য নানা কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড দোকান থেকে কিনছেন তাঁরা।

থ্রিফট শপিঙে পাওয়া যায় নামকরা ব্র্যান্ডের অনেক জিনিস
ছবি: পেক্সেলস

কেন জনপ্রিয়তা পেল থ্রিফট শপিং? এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পরিবেশ দূষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ গার্মেন্টসশিল্প। এই বিষয়ে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। মহামারিকাল এ ক্ষেত্রে অনেকেরই চোখ খুলে দিয়েছে। মানুষ আরও বেশি করে পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে। তাই একদিকে যেমন টেকসই ফ্যাশনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে থ্রিফট শপিং। ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ রুখতে যেন প্রতিরোধের দেয়াল তুলে দিয়েছে থ্রিফট শপিংয়ের জনপ্রিয়তা।

ইন্টারনেটকেন্দ্রিক যোগাযোগব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আসায় এখন সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য বেচাকেনাও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ। যেমন আপনার ঘরের ব্যবহার্য যে জিনিসটি এখন আর বিশেষ কাজে লাগছে না, মোবাইলে একটা ছবি তুলে তুলে দিতে পারেন বিক্রয় ডটকম বা আপনার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটার হ্যান্ডলে। থ্রিফট শপিং জনপ্রিয়তা পাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো দাম অর্ধেকে নেমে আসা বা নামমাত্র দামে পাওয়া। ইনস্টাগ্রামে ‘ইশশ’ নামে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড শাড়ি বিক্রির প্ল্যাটফর্ম আছে। এখানে শাড়ির দাম নির্ধারণের নীতিমালায় আছে, কোনো শাড়ি যদি অন্তত একবার পরা হয়, তাহলে এর দাম অর্ধেক হয়ে যাবে।

সব শ্রেণি, পেশার মানুষের কাছে থ্রিফট শপিং এখন অনেকটাই স্বাভাবিক
ছবি: পেক্সেলস

ফেসবুকে বাই অ্যান্ড সেল ইন ঢাকা বাংলাদেশ, কালারস ঢাকা, এস্থেজ ডট বিডি, ইনস্টাগ্রামে দ্য থ্রিফটশপ বিডি, বাংলাদেশ থ্রিফট—এখান থেকে হরহামেশাই চলছে কেনাকাটা। বাংলাদেশ থ্রিফটের ইনস্টাগ্রামে যোগাযোগ করে জানা যায়, সাধারণত একটা পণ্যের ছবি পোস্ট করার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার ভেতরেই সেটি বিক্রি হয়ে যায়। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবেও বিক্রি করেন পণ্য। আবার সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে মেলাও করেন। সেখান থেকে নামমাত্র মূল্যে প্রায়ই নানা পণ্য কেনেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি। ফ্যাশনিস্তা হিসেবে ক্যাম্পাসে, বন্ধুমহলে তাঁর নামডাক আছে। বৃষ্টি বলেন, ‘একটু খোঁজ রাখলেই হয়। আমি খুব সহজেই, কম দামে ফ্যাশনেবল পণ্য কিনি। আমার ব্যাগ, পোশাক, গয়না দেখে অন্যরা জিজ্ঞেস করে যে এগুলো কোন ব্র্যান্ড থেকে নেওয়া!’