কম দামে টেকসই আসবাব কিনতে চান?
কাঠের আসবাব টেকসই বটে, তবে অনেক দাম। বিপরীতে বোর্ডের আসবাব সহজলভ্য, দেখতেও ভালো। ইচ্ছেমতো নকশা করা যায়, আবার কাঠের আসবাবের মতো ভারীও নয়। ফরমাশ দিয়ে দ্রুত বানিয়ে নেওয়া যায়। এসব কারণে শহুরে ভাড়া বাড়িতে তো বটেই, গ্রামগঞ্জেও আজকাল বোর্ডের আসবাবের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বোর্ডের আরও বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে জানাচ্ছেন ফাবিহা ফাইজা হক
বিভিন্ন অফিস ও বাসার অন্দরসজ্জার পাশাপাশি বাসার আসবাব, ভেতরের দরজা, দরজার ফ্রেম, পার্টিশন, ফলস সিলিং, তাক ও প্যানেলে ব্যবহৃত হচ্ছে বোর্ড। টেকসই এবং সহজে নকশাযোগ্য হওয়ায় আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এসব বোর্ডের ওপর নির্ভর করছে। গাছের ডালপালা থেকে তৈরি প্যানেল বোর্ড বা পার্টিকেল বোর্ড হয়ে উঠছে কাঠের বিকল্প। খরচ কম, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হওয়ার কারণে কাঠের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্যানেল বোর্ড বা পার্টিকেল বোর্ড।
ডেপথ ওয়ার্কসের প্রধান স্থপতি শামসুল আরেফিন বলেন, বোর্ড দেখতে সুন্দর, একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব। বোর্ডের চেয়ে কাঠ বেশি টেকসই হলেও সঠিকভাবে সিজনিং করা না থাকলে শীত–গ্রীষ্মে বেঁকে যায়। সেই সঙ্গে কাঠের আকারও কমবেশি হয়ে যায়। কিন্তু বোর্ড একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কারখানায় প্রস্তুত করা হয়, তাই সেটা বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি নেই, আকারে কমবেশি হয় না।
বোর্ডের ধরন
মেলামাইন, ভিনিয়ার, এমডিএফ, পিভিসি, প্লাইউড—বাজারে নানা ধরনের বোর্ড পাওয়া যায়। কোথায় কেমন বোর্ড ব্যবহার করবেন, তা বাজেট, রুচি আর প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। ওক, চেরি, টিক, মেহগনি, রোজ, ম্যাপল, পাইন ইত্যাদি প্লাইয়ের ওপর ভিনিয়ার ভালোভাবে লাগিয়ে পলিশ করে ল্যাকার স্প্রে (আসবাব দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য) করা হয়। তবে এই ল্যাকারও ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন সেমি, গ্লসি বা ম্যাট। আপনার পছন্দ এবং ঘরের অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বোর্ডের আসবাব তৈরি করিয়ে নিতে পারেন।
বোর্ডের মাপ
সব বোর্ডেরই মাপ এক। ৮ ফুট বাই ৪ ফুট। তবে পুরুত্বে পার্থক্য আছে, ১ এমএম (মিলিমিটার) থেকে শুরু করে ২৪ এমএম পর্যন্ত পুরু বোর্ড পাওয়া যায়। আসবাব তৈরির জন্য সাধারণত ১৮ এমএম ও ১৬ এমএম পুরুত্বের বোর্ড ব্যবহার করা হয়। আসবাবের বডি তৈরির পর পেছনে সাধারণত ৬ এমএম পুরু গর্জন প্লাই ব্যবহার করা হয়।
কোথায় কেমন বোর্ড
আসবাব, অর্থাৎ আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, অফিস ক্যাবিনেট বাজেট অনুযায়ী যেকোনো বোর্ড দিয়েই করা যায়। ভারী ও মজবুত করতে চাইলে এমডিএফ বোর্ড দিয়ে করা যেতে পারে।
ফলস সিলিংয়ের জন্য পার্টিকেল বোর্ড বা প্লাইউড ব্যবহার করা হয়।
রান্নাঘরে যেহেতু পানির কাজ করা হয়, তাই কিচেন ক্যাবিনেটে ইকো বোর্ড বা মেরিন প্লাই ব্যবহার করা ভালো। এই বোর্ড পানিতে নষ্ট হয় না। টয়লেটেও এই বোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।
কেন বোর্ড ব্যবহার করব
পাতলা পাতলা কাঠের গুঁড়ার শিট একটার ওপর একটা জোড়া লাগিয়ে বোর্ড বানানো হয়। তাই বোর্ডের শক্তি ও স্থায়িত্ব কোনো দিক থেকেই কম নয়।
কাঠের তুলনায় বোর্ডের দাম অনেক কম। তাই সবাই পছন্দমতো বোর্ডের আসবাব কিনে অথবা বানিয়ে নিতে পারেন।
কাঠের চেয়ে হালকা। তাই এটি সরানো ও পরিবহন সহজ। বোর্ড দিয়ে যেকোনো ধরনের আসবাব তৈরি করা যায়। বোর্ডে যেকোনো নকশা, রং ও লেমিনেটিং করা যায়।
বোর্ড ব্যবহারে সতর্কতা
মেলামাইনের প্লাইউড বোর্ড অথবা ওক কাঠের তৈরি যেকোনো ধরনের আসবাব জানালা ও দেয়াল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কেননা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট ঢুকে আসবাবগুলো ভিজে যেতে পারে। ভিজে গেলেই বোর্ড ও ওক কাঠের তৈরি আসবাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জানালা ও দেয়াল থেকে এসব আসবাব দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
বোর্ড ও ওক কাঠের তৈরি আসবাব পরিষ্কার করার সময় অনেকেই অজ্ঞতাবশত ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে থাকেন। এটি একটি ভুল পদ্ধতি। ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করলে বোর্ডের আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি, নষ্টও হয় দ্রুত। তাই বোর্ডের তৈরি আসবাব পরিষ্কারের সময় শুকনা ও নরম কাপড় ব্যবহার করুন।
এ ধরনের আসবাব ভালো রাখতে কেরোসিন তেল ও সুতি কাপড়ের সাহায্যে কিছুদিন পরপর আসবাব মুছে নিন। বিভিন্ন রঙের বার্নিশ মিশিয়ে ছয় মাস বা তিন মাস পরপর ওক কাঠের তৈরি আসবাবগুলো পলিশ করুন। তাহলে এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর থাকবে, তেমনি স্থায়িত্বও বাড়বে। নিয়মিত পলিশ করলে আসবাবগুলো নতুনের মতো থাকবে।
যেকোনো ধরনের বোর্ডের ফার্নিচার, যেমন পারটেক্সের তৈরি আসবাব তৈরির সময়ই বোর্ডের কাটা অংশে ভালো করে পুটিং লাগিয়ে নিতে হবে। এতে বাতাস বা পানি জমে ফুলে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
দরদাম
পুরুত্ব ও গঠনের ওপর বোর্ডের দাম নির্ভর করে। ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে একটি বোর্ডের দাম।