বাস্তবে ভিডিও গেমের রেস্তোরাঁ

নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া কিংবা দুই হাজারের প্রথম দশকে বেড়ে ওঠা শহুরে প্রজন্মের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে ভিডিও গেমস। কম্পিউটারের সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেমসে মেতে থাকার ঘটনা কমবেশি সবার জীবনেই আছে। বাস্তব ঘটনা থেকে ভিডিও গেমস তৈরি হওয়ার দৃষ্টান্ত আছে, কিন্তু ভিডিও গেমস বাস্তবে রূপ নেওয়া, এমন ঘটনা খুবই কম আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো কমিকনে গত সপ্তাহে ঠিক তাই হয়েছে। ভিডিও গেম ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’র বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘ক্লাকিং বেল’কে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন কয়েকজন তরুণ।

ভিডিও গেমের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘ক্লাকিং বেল’কে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন কয়েকজন তরুণ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ফিকশনাল রেস্তোরাঁ বাস্তবে তৈরি করাটা নতুন কিছু নয়। আগেও কার্টুন সিরিজ ‘দ্য সিম্পসনস’ থেকে ‘মোস ট্যাভার্ন’ কিংবা ‘ফ্যামিলি গাই’ থেকে ‘দ্য ড্রাঙ্কেন ক্ল্যাম’ বাস্তবে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ভিডিও গেমসের জগৎ স্পর্শ করেনি তেমন কেউ। সেটাই করে দেখিয়েছেন ইন্টারনেটে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ‘বয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ গ্রুপের তিন বন্ধু। তাঁরা রেস্তোরাঁর আউটলুক থেকে শুরু করে বসার স্থান, ড্রেস—এমনকি মেনু পর্যন্ত গেম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানিয়ে ফেলেছেন। অনুপ্রাণিত বললেও কম বলা হয়। পুরোটাই একেবারে গেমের আদলে তৈরি করা।

বাস্তবের ‘ক্লাকিং বেল’ বনাম গেমের ‘ক্লাকিং বেল’
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’ সিরিজের তৃতীয় গেম ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো: সান অ্যাড্রেস’-এ প্রথম ‘ক্লাকিং বেল’-এর আবির্ভাব। আগের গেমগুলোতে যেখানে ফোকাস ছিল গল্প, সেখানে প্রথমবারের গল্পের বাইরেও মূল চরিত্রকে নিজের মতো করে সাজানোর সুযোগ করে দেন নির্মাতারা। আর তারই অংশ হিসেবে যোগ করা হয় এই ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ। যেখানে চাইলেই গেমের যেকোনো চরিত্র সেজে ভূরিভোজে মেতে উঠতে পারেন যে কেউ।

‘ক্লাকিং বেল’-এর মেন্যু কার্ড
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

‘ক্লাকিং বেল’ও অবশ্য নতুন কিছু নয়। বরং বাস্তব জগতেরই প্যারোডি। বিখ্যাত ফাস্ট ফুড চেইন ‘কেএফসি’ ও ‘টাকো বেল’কে এক করে তৈরি করা হয়েছিল ‘ক্লাকিং বেল’।
ছোটবেলা থেকেই ভিডিও গেমস আর পপ-কালচারের বিশাল ভক্ত ‘বয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’–এর সদস্যরা। বিশেষ করে ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো: সান অ্যাড্রেস’ তাঁদের ভীষণ প্রিয়। ছোটবেলা থেকেই এই গেমের আদলে কিছু তৈরির ইচ্ছা ছিল। সেই সুযোগটা আসে ২০২১ সালের একই সময়ে, সান ডিয়েগো কমিকনে। ‘ক্লাকিং বেল’-এর কর্মীদের ইউনিফর্মে কমিকনে অংশ নেন তাঁরা। সঙ্গে ছিল ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো’ দুনিয়ার কোমল পানীয় ‘স্প্রাংক’। ভেতরে শুধু পানি থাকলেও তার কসপ্লে সাড়া জাগায় অনেককে।

তখন থেকেই শুরু হয় পরিকল্পনা, কীভাবে একে আরও বড় করে তোলা যায়।
সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন ছোটবেলার দুই বন্ধু‌, ম্যাকএনজি ও তাঁর স্বামী জেরেমি। সান ডিয়েগোতে ‘স্মোকিং জেস বারবিকিউ’ নামে তাঁদের নিজেদের একটি রেস্তোরাঁ আছে। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই ভিডিও গেমের জগৎকে একেবারে বাস্তবে তুলে এনেছেন তিন বন্ধু। এই সুবাদে ২১ থেকে ২৪ জুন—চার দিন অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা।

গেমের প্রধান চরিত্র ট্রেভর এই রেস্তোরাঁয় খেতে পারবেন না
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

চার দিনের জন্য ‘স্মোকিং জেস বারবিকিউ’ হয়ে যায় ‘ক্লাকিং বেল’। দেখে মনে হয়েছিল সান ডিয়েগোর বুকে নেমে এসেছে লস সান্তোস (জিটিএ গেমসের শহর)। গেমের মতো করেই তৈরি করা হয়েছিল মেনু কার্ড, সার্ভও করা হয়েছে গেমের মতো করে। ছিল ওয়েটারদের জন্য মুরগির মাথার মতো বিশেষ হেডপিস। এমনকি গেমের মতোই ‘গ্র্যান্ড থেফট অটো: ফাইভ’-এর মূল চরিত্র ট্রেভর ফিলিপসকে কোনো খাবার বা পানীয় সার্ভ না করার অঙ্গীকারনামাও ছিল। এ ছাড়া ছোটখাটো রেফারেন্স; যেমন হলুদ ছাতা, স্লোগান, প্রতিপক্ষ রেস্তোরাঁর নামে নিন্দা—সবকিছু মিলে সত্যিই অনন্য এক অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছিল বাস্তবের ‘ক্লাকিং বেল’।