বাণিজ্য মেলায় যাচ্ছেন? জেনে নিন কোন স্টলে কোন পণ্যের কেমন দাম

এই আলোকবাতির দাম শুরু ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে।ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শীতকাল বলে কথা, গায়ে শীত লাগছিল বলেই কিনা প্রথমে খুঁজতে থাকি শীত তাড়ানোর পোশাক আছে কই! তবে শীতপোশাক খুঁজে পাওয়ার আগেই চোখ আটকে গেল মেলার নানা স্টলে উপস্থিত দেশ-বিদেশের পণ্যগুলোয়। কোলাহলপূর্ণ জ্যামের শহর ছেড়ে কোলাহলহীন শহরে হচ্ছে এখন বাণিজ্য মেলা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে তৃতীয়বারের মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৪। মেলার স্টলগুলো হল এ এবং হল বি—এই দুই ভাগে বিভক্ত। স্টল আছে মূল ভবনের বাইরেও। তথ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৫০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল স্থান পাবে, এর মধ্যে দৃশ্যমান আছে ৩০৮টি দেশি ও ১১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল। অন্য স্টলগুলোর নির্মাণকাজ এখনো চলছে।

পোশাকের ওপর সুতার নকশা
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও ভারতীয় স্টলগুলোয় প্রাধান্য পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাশ্মীরি শাল, মাফলার। কাশ্মীরি শাল মিলছে ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকায়। মাফলার ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়। ওয়ানপিস, টুপিস, থ্রিপিস পাওয়া যাচ্ছে যথাক্রমে ১ হাজার, ১ হাজার ৫০০ ও ২ হাজার টাকায়। টেবিল ক্লথ ও রানার পাবেন ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। বিছানার চাদর আছে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। বটুয়া ঘরানার ব্যাগ থেকে শুরু করে ছোট–বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ পাবেন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।

নাগড়ার দাম শুরু ৫০০ টাকা থেকে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ভারতীয় জুতার দোকানগুলোয় শোভা বাড়াচ্ছে নাগরা, বিভিন্ন ধরনের চটি, চপ্পল ও স্যান্ডেল। দাম হাঁকছে ১ হাজার ৫০০ ও ২ হাজার ৫০০ টাকা। কোনো কোনো দোকানে আবার ‘দেইখা লন বাইছা লন’ যে জোড়াই নেবেন দাম একটাই, ১ হাজার ৬০০ টাকা। শিশুদের জন্যও আছে নাগরা জুতা, দাম ৫০০ টাকা।

ইস্তাম্বুলের স্টল ডাকবে কার্পেটের জন্য
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

তুর্কিস্তানের দোকান একটু আলাদাভাবেই নজর কাড়ে দৃষ্টিনন্দন সব আলোকবাতির জন্য। ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে দাম পড়বে লাখ টাকা পর্যন্ত। আছে বাদামি আভার ক্রিস্টাল প্লেট—৬টি ছোট ও ১টি বড় মিলে মোট ৭ পিসের এক সেটের দাম পড়বে ১২ হাজার টাকা। হাতে ফুটিয়ে তোলা নকশায় সিরামিকের বাটি, বিভিন্ন শোপিস, ফুলদানি, দেয়ালঘড়ি ইত্যাদি পাবেন ৩ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকায়। আছে সিরামিকে গড়া গয়নাও, দাম ১২ হাজার টাকা। হাতের আংটি ৭ হাজার টাকা। ব্রেসলেট ১ হাজার টাকা। মানিব্যাগ মিলবে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। আছে কার্পেটও, দাম পড়বে ১৫ হাজার টাকা।

তুর্কিস্তানের দৃষ্টিনন্দন আলোকবাতির
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ইস্তাম্বুলের স্টল ডাকবে কার্পেটের জন্য। ৩ ফিটের কার্পেট ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ ফিটের কার্পেট ৫ হাজার টাকা, ৫ ফিটের কার্পেট ৭ হাজার টাকা। প্রিন্টের ফ্লোরম্যাট ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সিনথেটিক কার্পেট আছে ৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। দুই দিকেই ব্যবহার করা যায়, এমন পাপোশ ও কার্পেট আছে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। ডোরম্যাট আছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। হাতে বানানো বিভিন্ন ওয়ালম্যাট পাবেন ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বড় আকারের কার্পেটের দাম পড়বে ৮৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর পাশেই কাশ্মীরি কার্পেটের দোকান। সিল্ক কার্পেট, উলের কার্পেট, সিনথেটিক কার্পেট, হাতে বোনা কার্পেটের মধ্যে ২ ফিট বাই ৩ ফিটের কার্পেটের দাম ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ ফিট বাই ১৩ ফিট কার্পেটের দাম পড়বে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত।

আছে নানা নকশার তৈজসপত্র
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ইরানি স্টলে নজর কাড়ছে অ্যাক্রিলিক ফাইবারের তৈরি রঙিন তৈজসপত্র। যা সহজে ভাঙবে না, ফাটবে না, রং উঠবে না, ব্যবহার করা যাবে মাইক্রো ওভেনেও। প্লেট, হাফ প্লেট, কোয়ার্টার প্লেট, স্যুপ, তরকারির বাটি, ফ্রুট বোল, ট্রে, মসলা রাখার বাক্স থেকে শুরু করে খাতায় দাগ টানার স্কেলও। রঙে ভিন্নতা থাকলেও আকারভেদে প্লেটের দাম ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বাটি ৫০ থেকে ২০০ টাকা, ভাতের বোল ১ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ফ্রুট বোল ৭০০ টাকা।

বাণিজ্য মেলার ছেলেদের পোশাকে অন্যতম আকর্ষণ থাকে ব্লেজারে। নানা রং–বৈচিত্র্যের সঙ্গে আছে চেক ও প্রিন্টের ব্লেজার ও কোটির সংগ্রহ। ব্লেজারের দাম শুরু ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে। নানা রঙের প্রিন্টের কোটির দাম শুরু ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে। প্যান্ট, কোটি ও ব্লেজারের সমন্বয়ে শিশুদের জন্য এক সেট পোশাকের দাম শুরু ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। শার্ট, প্যান্ট, টাই, কোটি ও ব্লেজারের সমন্বয়ে বড়দের জন্য পোশাক সেটের দাম পড়বে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ৩৯৫ টাকা থেকে আছে বিভিন্ন দামের আরামদায়ক লুঙ্গি।

ব্লেজারের সম্ভারে
Sabina Yasmin

সিরামিকসের নানা পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে ক্লে ইমেজ সিরামিকসের স্টল। আছে সিরামিকসের তৈরি চুড়ি, দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কানের দুল ১৫০ টাকা, কানের দুল ও গলার হার মিলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, মোমদানি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। হাতলছাড়া কাপ–পিরিচ ১৮০ টাকা, হাতলসহ ২৫০ টাকা, মগ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সিরামিকের বাটি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, কড়াই আকৃতির সিরামিকের বাটি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, সিরামিকের প্লেট ৪০০ টাকা। ৬টি প্লেট, ৬টি হাফপ্লেট ও ১টি ভাতের বোলের দাম পড়বে ৫ হাজার ৮০০ টাকা। সঙ্গে থাকবে আবার ১০ শতাংশ ছাড়।

নানা নকশার ব্যাগ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

পাটের ব্যাগ থেকে শুরু করে শতরঞ্জি, জুতা, কার্পেট, টেবিল রানার, টিস্যু বক্স এমনকি ক্যালেন্ডারও মিলবে সমাহারে। চামড়ার মানিব্যাগ মিলবে ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কার্ড হোল্ডার ৩৫০ টাকা, শোপিস ১ হাজার টাকা, চামড়ার তৈরি নামাজের জায়নামাজ মিলবে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। জয়িতায় জামদানি শাড়ি থেকে শুরু করে আছে সব রকমের পোশাক। এখানে শীতের পঞ্চ পাবেন ১ হাজার ৮০০ টাকায়, নকশিকাঁথা মিলবে ১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। বাঁশ, বেত, সিরামিক ও পিতলে গড়া ঘর সাজানোর বিভিন্ন শোপিসও পাবেন এখানে।

ক্লে ইমেজ সিরামিকসের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে এমন চুড়ি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
আছে বাঁশের তৈরি ল্যাম্প
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বিসিক বিপণন বিভাগের মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ফেরদৌসী সুলতানা বলেন, এখানে পাবেন জামদানি শাড়ি ৬ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা, রেশমি সিল্ক আছে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। হাতের কাজের টুপিস, থ্রিপিস আছে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। চামড়াজাত পণ্য আছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা। পাটজাত পণ্য আছে ২৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়। শতরঞ্জি পাওয়া যাবে ৪৫০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। পাশাপাশি পাবেন শীতল পাটি ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকায় আর মধু পাবেন ৫০০ টাকা কেজি।

‘বন্দীদের উৎপাদিত পণ্য কিনুন, বন্দী পুনর্বাসনে সহায়তা করুন’—এই স্লোগানে মেলায় প্রবেশ করে হাতের ডানে মূল প্রদর্শনী কেন্দ্রের বাইরে বসেছে বাংলাদেশ জেল কারা পণ্যের দোকান। কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, কুমিল্লার মতো দেশের বিভিন্ন জেলখানার বন্দীদের নিজ হাতে বানানো পণ্য বিক্রি হচ্ছে এখানে। আছে বাঁশ বেতের মোড়া, কুলা, চালুনি, চেয়ার, ফলের ঝুড়ি, ঢাকনা, ঝাড়ু, ঘুড়ির নাটাই, পাটের ব্যাগ, পাটের দোলনা, শোপিস। কাঁঠাল ও শাল কাঠ থেকে বানানো কাঠের চামচ, ডাল ঘুঁটনি, কাঠের হ্যাঙ্গার, টুল, ভর দিয়ে চলার লাঠি, বসার পিঁড়ি, পিঠা বানানোর বেলন। আছে শার্ট, টি–শার্ট, কোট, ব্লেজার, ট্রাউজার, লুঙ্গি, গামছা, কুশন কাভার, নকশিকাঁথাসহ আরও অনেক কিছুই। একটিবার ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন এখানে।

দেশীয় উপকরণে তৈরি নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে বাণিজ্য মেলায়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

২১ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। বয়স যাদের ১২ বছরের নিচে, তাদের জন্য ২৫ টাকা। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য আছে বিআরটিসির দোতলা বাসের বিরতিহীন বিশেষ সার্ভিস। ফার্মগেট থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি বাসভাড়া ৭০ টাকা আর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩৫ টাকা। যারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসতে চান, আছে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিশাল ব্যবস্থাও।