টাকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন কীভাবে

সবাই টাকা জমানোর প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জানেন, কিন্তু কতজন টাকা জমান? এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় হাত উঠেছে গুটিকয়েক
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

টাকার প্রশ্ন এলেই আমাদের সবার একটাই অভিযোগ, টাকাও কি উদ্বায়ী পদার্থ? নইলে মাসের শুরুর এত টাকা মাস শেষ হওয়ার আগেই কীভাবে ফুড়ুত হয়ে যায়? তো টাকার সঙ্গে এই শত্রুতা দূর করে, টাকাকে বন্ধু বানানোর কি কোনো উপায় আছে? আছে। ছোট ছোট  কাজ বা অভ্যাসই পারে টাকা নামের সোনার হরিণকে খাঁচায় আটকে রাখতে।

সেভিংসের শুরু হোক আজ থেকেই

টাকা জমানোর প্রশ্ন এলেই দেখা যায় সবাই এর পক্ষে। সবাই টাকা জমানোর প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জানেন, কিন্তু কতজন টাকা জমান? এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় হাত উঠেছে গুটিকয়েক। সেভিংস কথাটা শুনতে যত সহজ লাগে, কাজটা ঠিক ততটাই কঠিন। আর এই কঠিন কাজ করতে হলে আপনার জীবনের অনেক শখ, আহ্লাদও বিসর্জন দিতে হয়। কিন্তু সেভিংস এমন একটা ওষুধ, যেটা খেতে বিস্বাদ হলেও ফল অত্যন্ত মিষ্টি। তাই করতে হবে বা করা উচিত—এসব ধাপ পেরিয়ে আজ থেকেই শুরু হোক টাকা জমানো।

শুরু করবেন কীভাবে

সেভিংস শুরু করার সময় আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুল করি সেটা হলো, টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে সেভিংস শুরু করি। বেশির ভাগ সময়ই এমন সেভিংসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা জমা করবেন, এমন মানসিকতা দিনের পর দিন ধরে রাখা কঠিন। তাহলে সমাধান কী? টাকার অঙ্ক না লিখে নিজের লক্ষ্য সামনে রেখে টাকা জমানো শুরু করুন। আপনার একটা গাড়ি কেনার খুব ইচ্ছা? তাহলে গাড়ির জন্য টাকা জমানো শুরু করুন। এভাবে টাকা জমালে একদিকে যেমন বেশি টাকা জমানো সম্ভব, তেমনি ওই লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত ছোটখাটো বিলাসিতাও ত্যাগ করা সহজ হয়।

সবচেয়ে ভালো হয়, লক্ষ্যগুলো তিন ভাগে ভাগ করে ফেলুন। দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি আর স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য। এরপর সব কটির খরচ হিসাব করে ওই পরিমাণ টাকা জমানোর মানসিকতা ঠিক করে ফেলুন।

ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলুন, কিনুন মাটির ব্যাংক

ব্যাংকে টাকা জমাতে পারেন। একটি, দুটি ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) তো আপনার থাকতেই পারে। যুক্ত হতে পারেন বিমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও। আর সচরাচর টাকা জমানোর জন্য হাতের কাছেই রাখতে পারেন একটি মাটির ব্যাংক।


শুধু টাকা জমানোই যথেষ্ট নয়, বিনিয়োগ করুন

শুধু সেভিংসের টাকা দিয়ে সব লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব না–ও হতে পারে। কাজেই টাকা শুধু জমিয়ে না রেখে বিনিয়োগও করতে পারেন। তবে বিনিয়োগের সময় বেশি লাভের দিকে না তাকিয়ে নিরাপত্তার দিকটাও মাথায় রাখা জরুরি।

টাকা খরচ করুন ৫০: ৩০: ২০ নিয়মে

এটা খুব জনপ্রিয় একটা নিয়ম। সেভিংসের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার পর আপনার কাজ হলো, খরচ আর জমার মধ্যে একটা সমন্বয় করা। সহজ করে বললে, মাস শেষে যে বেতন আপনি পান, সেখান থেকে ৫০ ভাগ ব্যয় করবেন বাসাভাড়া, বিদ্যুতের বিল, খাওয়াদাওয়াসহ (যেসব খরচ প্রতি মাসে একই রকম) প্রয়োজনীয় খাতে। ৩০ ভাগ রাখবেন হুট করে যেগুলো কিনতে হয়, চিকিৎসা, ইমার্জেন্সি খাতে আর নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য। আর বাকি ২০ ভাগ রাখতে হবে জমানোর জন্য। সময়ের সঙ্গে জমানো খাতের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

খরচ কমাবেন কীভাবে

সমস্যা হলো, খরচ কমাতে না পারলে এত এত নিয়ম দিয়ে কোনো লাভ নেই। আর কম টাকায় চলতে পারা ‘কিপটেমি’ নয়, বরং খুব সুন্দর আর প্রয়োজনীয় একটা দক্ষতা। এই দক্ষতা অর্জন করতে হলে নিচের কাজগুলো করতে পারেন।

১. ৩০ দিন অপেক্ষা করুন

বড় কিছু কেনার আগে ৩০ দিন অপেক্ষা করুন। যদি ৩০ দিন পরও মনে হয়, জিনিসটা আপনার লাগবেই, তবেই কেবল সেটা আপনার কেনা উচিত।

২. ক্রেডিট কার্ডের বদলে ডেবিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করাটা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ; বরং ডেবিট কার্ডে কেনাকাটা করুন। টাকা শেষ হয়ে গেলে চাইলেও আর কিনতে পারবেন না। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনি ক্যাশে কেনাকাটা করতে পারেন।

৩. তালিকার বাইরে কিছু নয়

তালিকা করে নিয়ে তারপর কেনাকাটা করতে বসুন। এমনকি অনলাইন কেনাকাটার সময়ও লিস্টের বাইরে কিছু কেনা থেকে বিরত থাকুন।

৪. ছাড়ে কিনুন

কখন, কোথায় ছাড় দেওয়া হচ্ছে, খেয়াল রাখুন। তবে ছাড় পেয়েই যথেচ্ছ কেনাকাটা না করে, শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসটা কিনুন।

৫. বদভ্যাস আজ থেকেই বাদ

সিগারেট, বাইরে খাওয়ার ঝোঁক, অনলাইনে হুটহাট কেনাকাটা, খাবার অর্ডার, এলোমেলো হাতখরচের স্বভাব, গণপরিবহনে না চড়ে উবার ব্যবহার—এগুলো আজ থেকেই বাদ দিন।

মোটামুটি এসব অভ্যাস রপ্ত করতে পারলেই দেখবেন টাকার সঙ্গে কোন দিক দিয়ে যেন আপনার বন্ধুত্বটা হয়েই গেছে। আর টাকা এমন এক বন্ধু, যে প্রয়োজনে বা বিপদে কখনোই আপনাকে নিরাশ করবে না।


সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Photo by Karolina Grabowska from pexels.