থ্রিফট শপ থেকে কেনাকাটায় কিছুটা হলেও পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারছি

থ্রিফট শপে অল্প ব্যবহৃত পোশাক বা পণ্য বাজেটের মধ্যেই কেনা যায়।
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

আগস্টের শুরুতে সপরিবার যখন কানাডায় আসি, তখন এখানে তাপমাত্রা ছিল বেশ আরামদায়ক। যেহেতু আমরা এসেছিলাম প্রচণ্ড গরমের দেশ থেকে, তাই নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছিল।

দেশ থেকে আনা হালকা সোয়েটার, ওভারকোট ও জুতা তখন বেশ কাজে দিয়েছিল। কিন্তু হেমন্ত শুরু হতেই টের পেলাম, এসবে চলবে না, শীত আসছে। আমার তিন বছর বয়সী যমজদের জন্য ঠিকঠাক প্রস্তুতি যদি না নিই, তাহলে পরে মুশকিলে পড়তে হবে।

পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, আমার এ সমস্যার সমাধান হতে পারে থ্রিফট শপ। ধারণাটা এখানে বেশ জনপ্রিয়। যে কেউই চাইলেই তাঁর অল্প ব্যবহৃত বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস (যা অন্যের ব্যবহার উপযোগী) নির্দিষ্ট থ্রিফট শপে দান বা বিক্রি করতে পারেন।

নিজের অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহৃত পণ্য বিক্রি করা যায় এখানে
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সেসব পণ্য থেকে যে কেউ তাঁর দরকারি জিনিসটি অত্যন্ত কম মূল্যে কিনে নিতে পারবেন। নিজের অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহৃত পণ্য যে বিক্রি করে দেওয়া যায় এবং তাতে অনেকেই উপকৃত হন, দেশে ফেসবুকে পণ্য ডিক্লাটার গ্রুপে যুক্ত থাকায় এ বিষয়ে কিছুটা আইডিয়া আগে থেকেই ছিল।

দেশ ছাড়ার আগে এমনই এক ফেসবুক পেজের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের ব্যবহৃত পোশাক ও বই দানও করেছি।

থ্রিফট শপের ধারণাটা কানাডায় বেশ জনপ্রিয়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

কয়েকটা থ্রিফটের দোকান ঘুরে কেনাকাটা করে বুঝলাম, নতুন পোশাকের বদলে এখান থেকে একই ধরনের অল্প ব্যবহৃত পোশাক বা পণ্য বাজেটের মধ্যেই কেনা যায়। পাশাপাশি হাতে ধরে দেখে নিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কেনাটাও ভালো লাগল। কানাডা এসে আমার যমজদের ৯০ ভাগ শীতের পোশাক ও জুতা এখান থেকেই কিনেছি। নিজেও ওভারকোট, জ্যাকেট ও জুতা কিনেছি।

এসব দোকান থেকে শুধু যে পোশাক কেনা যায়, তা নয়। হরেক রকমের জিনিসও এখানে পাওয়া যায়। যেমন ঘর সাজানোর জিনিস, রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ, তৈজসপত্র ও বই। এ রকম দোকান থেকেই প্রায় অর্ধেক মূল্যে রান্নার দুটি পাত্র কিনেছিলাম। এগুলো নতুন কিনতে হলে আমাকে চড়া দাম দিতে হতো। পাশাপাশি টেবিল ক্লথ ও বিছানার চাদরও নিয়েছি।

অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি এখানে কেনাকাটায় কিছুটা হলেও পরিবেশের ক্ষতি কমানো যায়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

অনেকেই অন্যের ব্যবহৃত পণ্য বা পোশাক ব্যবহার করাটাকে ভালোভাবে নেন না। তবে আমার খারাপ লাগে না; বরং মনে হয় অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কিছুটা হলেও তো পরিবেশের ক্ষতি কমাতে পারছি। আজকের ফাস্ট ফ্যাশন পরিবেশের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সেখানে যেসব জিনিস কারও প্রয়োজনে আসছে না, তা যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে উপকৃত হন, তবে পকেটের চাপ যেমন কমে, তেমনি তুলনামূলকভাবে পরিবেশদূষণও কম হয়।

তবে থ্রিফট শপ থেকে কেনার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখা ভালো। দেখা যায়, কম মূল্যের কারণে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কেনা হয়ে যায়, যা হয়তো বাসাতেই পড়ে থাকে। আবার এ ধরনের কেনাকাটায় নিজের পছন্দসই পণ্যটি পেতে ধৈর্য ধরতে হয়।

হরেক রকমের জিনিস থ্রিফট শপে পাওয়া যায়
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

থ্রিফট শপগুলো নিয়ে কিছু সমালোচনাও আছে। অনেকেই মনে করেন, স্বল্প আয়ের মানুষ এসব দোকান থেকে আগের মতো তাঁদের দরকারি জিনিস কিনতে পারছেন না। কারণ, অনেকে মনে করেন, দোকানগুলো এখন অনুদানে বা অল্প অর্থের বিনিময়ে কারও স্বল্প ব্যবহৃত জিনিস কিনে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে। তবে সব দোকানেই যে এমনটা হয়, তা কিন্তু নয়।

তবে সবকিছুর পরও আমার মতো মানুষের কাছে থ্রিফট শপ আশীর্বাদ। যেখান থেকে নিজের স্টাইল ও সুবিধামতো পণ্য ও পোশাক কম মূল্যে কেনাকাটা করতে পারি। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারছি।