‘তিন শর মাল এক শ, শুধু মেসির জন্য’

‘তিন শর মাল এক শ, “শুধুমাত্র” কোম্পানির প্রচারের জন্য।’

রাস্তায় বাল্ব বিক্রেতাদের মুখে এমনটা শুনেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এবার জানা গেল, তিন শর মাল এক শ, আর এই ছাড় কেবল মেসির জন্য!

বাংলাদেশে মেসিপ্রীতি এই মুহূর্তে কোথায় পৌঁছে গেছে, তা ফেসবুকে একবার ঢুঁ দিলেই যথেষ্ট। নারী–পুরুষনির্বিশেষে ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে সবাই বনে গেছেন লিওনেল মেসি। রাস্তায় বের হলেই ধাক্কা খাবেন ১০ নম্বর জার্সি গায়ে একেকজন ‘মেসি’র সঙ্গে। কাতার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে রাতে, কিন্তু ঢাকার রাস্তায় বিশ্বকাপের উন্মাদনা চলছেই ।

বিকেলে ছবি তুলতে গিয়ে দেখা গেল, আর্জেন্টিনার জার্সি আর নেই। কেবল ঝুলছে ‘নেইমার জুনিয়র’
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঢাকার কাঁঠালবাগান ঢাল থেকে হেঁটে কারওয়ান বাজারের দিকে আসছি। কারওয়ান বাজার নিত্যপণ্য আর কাঁচাবাজারের জন্য বিখ্যাত হলেও ফুটপাত থেকে কম দামে পোশাক পাওয়ার ভালো স্থান। বিশ্বকাপের শুরু থেকে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার হোম আর অ্যাওয়ে জার্সি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও সংগত কারণেই সময়ের সঙ্গে শেষ কয়েক দিনে তা কেবল আর্জেন্টিনার জার্সিতে এসে ঠেকেছে। এমনকি বিশ্বকাপ শেষেও পরদিন সকালে দেদারে চলছে আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি। কানে এল, ‘তিন শর মাল এক শ, শুধু মেসির জন্য’। ‘দুই শ টাকা ছাড়, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতার জন্য দুই শ টাকা ছাড়।’ মানে আর্জেন্টিনার যে জার্সিগুলো রয়ে গেছে, সেগুলো আজ বিক্রেতারা কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর সেটি নাকি কেবল মেসির জন্য। মেসির হাতে বিশ্বকাপ ওঠার খুশিতে নাকি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় উপলক্ষে তিন শ টাকার জার্সি দুই শ টাকা ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা!

এখানে হাতেগোনা তিন–চারটি আর্জেন্টিনার জার্সি আছে অবিক্রিত
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

তখন বেলা ১টা ২০ মিনিট। পথের ধারে এক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। একটা জার্সি ধরতেই বললেন, ‘এইটা আর এক পিসই আছে। আপনার সাইজের হইব না, অন্য মাল দেখেন।’ জানতে চাইলাম, ‘জার্সি আজ কী পরিমাণ বিক্রি হলো?’ বললেন, ‘আর্জেন্টিনার যা ছিল, সব মোটামুটি শেষ।’ এক ক্রেতা আর্জেন্টিনার জার্সি কিনে রাস্তায়ই পরিবর্তন করে পরনের পোশাক প্যাকেটে পুরলেন।

আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়, সেটিই আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন এই বিক্রেতা, আজ তাঁর মাস্কের দামেও আছে বিশেষ ছাড়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এর আগেই জানা গিয়েছিল, বিশ্বকাপ কাতারে হলেও জার্সি বিক্রিতে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। সে সময় অন্য ব্যবসায়ীরাও বনে গিয়েছিলেন ‘মৌসুমি জার্সি বিক্রেতা’। এদিকে আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর রাতারাতি বেড়ে যায় জার্সির চাহিদা। আর্জেন্টিনার জার্সি তৈরি করে স্পোর্টস ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস। তাই বিশ্বব্যাপী মেসিভক্তরা ভিড় জমান তাদের শোরুমগুলোয়। কিন্তু সম্প্রতি সব অ্যাডিডাসের শোরুম থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল লিওনেল মেসির ১০ নম্বর জার্সি। কেননা, বিশ্বব্যাপী আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি হয়েছে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। তাই বেশ বিপাকে পড়েছিল এই জার্মান স্পোর্টস ব্র্যান্ড।