সেবা ও পণ্য কিনুন তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে

ছবি: সংগৃহীতগ্রাফিকস: রজত কান্তি রায়

করোনাকাল যখন চেপে বসেছে মানুষের ওপর, অর্থনীতি যখন ঝুঁকির মুখে, সেই ক্রান্তিকালেই তরুণেরা শুরু করেছেন নতুন নতুন উদ্যোগ। তরুণদের এসব উদ্যোগে ব্যর্থতার হার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সফলতার গল্পও। কেউ কেউ করোনাকালে স্বল্প মেয়াদে বিচিত্র সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাতে মানুষের উপকার যেমন হয়েছিল, তেমনি তাঁরাও অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা লাভবান হয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার সফল উদ্যোগগুলোকে আরও বড় করার স্বপ্ন দেখছেন। তেমনি কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে আমাদের এ আয়োজন।

রাখিব

‘রাখিব’ এর উদ্যোক্তা জি এম আতিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংকে আপনার লকার নেই, কিন্তু বিশেষ কারণে স্বল্প মেয়াদের জন্য ঢাকা ছাড়তে হবে। কিছু জিনিস রেখেছেন কোথাও, আর কিছু জিনিসপত্র নিয়ে পরেছেন বিপাকে। কোথায় রাখবেন? করোনাকালে বন্ধুদের এমন অবস্থা দেখেই শুরু হয়েছিল নতুন উদ্যোগ ‘রাখিব’। রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে বিভাগের ছাত্র জিএম আতিকুর রহমান বন্ধুদের সহযোগীতার জন্যই শুরু করেছিলেন এ উদ্যোগ।

ছোটবেলা থেকেই জি এম আতিকুর রহমান বন্ধুদের মধ্যমণি। পড়াশোনা থেকে শুরু করে নানা কাজে এগিয়ে যান নিঃস্বার্থভাবেই। রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়ে তা যেন দায়িত্বে পরিণত হলো। সিআর বলে কথা! করোনার ছুটি বাড়তে থাকায় আতিকুরের বন্ধুরা ঢাকার বাসা ছাড়তে লাগলেন একে একে। বন্ধু সাবরিনা স্বর্ণা ঢাকার বাসা ছেড়ে বগুড়ায় থাকবেন। বিপত্তি বাধল জিনিসপত্র নিয়ে। এমন ঘটনা ঘটল আরও কয়েকজন বন্ধুর ক্ষেত্রে।

জি এম আতিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

এ সমস্যা সমাধানে ত্রাতার ভূমিকা নিলেন আতিকুর। সবার পরামর্শ নিয়েই ছোট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সব বন্ধুর খাট-তোশক রাখা শুরু করলেন। তখনই আতিকুরের মাথায় এল ব্যবসার আইডিয়া। ‘ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভাবলাম, আমি তো ব্যবসা শুরু করতে পারি। তাতে অন্যদের উপকারও হলো। মোহাম্মদপুরের বছিলায় পাঁচ রুমের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে এক বন্ধু আর ছোট ভাইকে নিয়ে শুরু করলাম ‘রাখিব’।’ বলছিলেন আতিকুর।

আতিকুর ফেসবুক পেজ খুলেই শুরু করেন ব্যবসা। প্রসারে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন। তবে শিক্ষার্থী দেখে কেউ খুব একটা পাত্তা দেননি বলে জানালেন। তবে ক্রমেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে থাকে ‘রাখিব’। বর্তমানে ৫৫টি পরিবারের যাবতীয় সরঞ্জাম আছে আতিকুরদের হেফাজতে।

আতিকুরের ‘রাখিব’তে খাট রাখলে মাসে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। ফ্রিজে ৫০০ আর তোশকে ৭০। এ ছাড়া পড়ার টেবিল ২০০ থেকে ৫০০, জাজিম ১৭০ থেকে ৭০০, আলমারি ২০০ থেকে ১২০০, কম্পিউটার ৫০০, ল্যাপ্টপ ৪০০, মনিটর/টিভি ৫০০ থেকে ৬০০ এবং সোফা ২০০ থেকে ৯০০ টাকা। এ ছাড়া ফ্রিজ চালু রাখলে ৬৫০ আর বন্ধ থাকলে ৫০০ টাকা। এসি রাখা যায় ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়।

জি এম আতিকুর রহমান এবং তাঁর কর্মীবাহিনী
ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য জিনিসেও নির্ধারিত মূল্য রেখেছেন মাসিক হিসাবে। তবে আতিকুরের উদ্দেশ্য শুধুই টাকা নয়। করোনার প্রকোপে ঢাকা ছাড়ার আগে নিরাপদ জায়গায় শখের জিনিস রাখতে পারলে যে তৃপ্তি পায় মানুষ, তাতেই বেশি খুশি হন আতিকুররা।

ব্লু মুন রেস্টুরেন্ট এন্ড পিৎজা কর্নার

পছন্দের জিনিসকে কেন্দ্র করে যখন কেউ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সেটা অনন্য হয়ে উঠতে পারে। প্রচুর রেস্টুরেন্ট আছে আপনার চারদিকে। কিন্তু সব রেস্টুরেন্টের খাবার কি ভালো লাগে? অথবা আমরা কি সব রেস্টুরেন্টে খেতে যাই? সেইসব রেস্টুরেন্টেই খেতে যাই, যেগুলোর খাবার সুস্বাদু, পরিবেশ ভালো। রেস্টুরেন্টের উদ্যোক্তা যখন নিজেই খাবার তৈরি করেন সে খাবার সুস্বাদু হতে বাধ্য। রেদওয়ানের ব্লু মুন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পিৎজা কর্নার সে রকমই একটি রেস্টুরেন্ট।

রেদওয়ান ইসলাম অপেক্ষা করছিলেন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার। যশোরের মুসলিম এইড ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্সের এ শিক্ষার্থী নিজেকে গড়ছিলেনও সেভাবেই। ফলাফল পেলেই ছুটবেন স্বপ্নের পানে। হঠাৎই করোনা সে স্বপ্নে আঘাত হানে প্রবলভাবে। করোনার ছুটিতে মাসখানেক পেরোতেই হতাশ হয়ে পড়েন রেদওয়ান। ভাবতে থাকেন সময়টাকে কাজে লাগানোর।

রেদওয়ান ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

নানা রকম মুখোরচক খাবার নিয়ে রেদওয়ানের আগ্রহ সে ছোটবেলা থেকেই। ভাবেন, খাবার নিয়েই কিছু একটা করার। যেই ভাবা সেই কাজ। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে জমানো কিছু টাকা নিয়ে দ্বারস্থ হন এক বন্ধুর। পরিবারও ছেলের উদ্যোগে এগিয়ে আসে। শুরু হয় ব্লু মুন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পিৎজা কর্নার।

রেদওয়ান বলছিলেন, ‘চাকরিবাকরির লাইন নাই। আর যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কবে পড়াশোনা শেষ করব আর কবে চাকরি করব, তার তো হিসাব নাই। তাই ভাবলাম অন্তত কিছু একটা করি। তাতে কিছু টাকাও আয় হবে, পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়াও হবে।’

ব্লু মুন স্পেশাল বার্গার
ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসের সামনে শুরু হয় রেদওয়ানের রেস্টুরেন্ট। তবে করোনাকালে বেশির ভাগ বিক্রিই চলছে অনলাইনে। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডুইচ, পাস্তাসহ নানা সেট মেন্যু দিয়ে দিনকে দিন পরিচিতি পাচ্ছে ব্লু মুন রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পিৎজা কর্নার। এ ঝক্কি সামলাতে রেদওয়ানের রেস্টুরেন্টে বর্তমানে যুক্ত হয়েছেন চারজন। রেদওয়ানের ভাঙা স্বপ্নেও জোড়া লাগতে শুরু করেছে, সে কথা হাসিমুখেই জানালেন তিনি।

রেদওয়ানের রেস্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার দেওয়া যাবে তাঁদের ফেসবুক পেইজে

রেদওয়ানের রেস্টুরেন্টে ফ্রাইড চিকেন আছে নানা পদের। এগুলো পাওয়া যাবে ৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। নানা পদের ফ্রাইড রাইস পাওয়া যায় ৭০ থেকে ৩৩০ টাকায়। বার্গার পাওয়া যাবে ৭০ থেকে ১৯৯ টাকায়। হরেক পদের কারি পাওয়া যাবে ৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এ ছাড়া পিৎজা ২৩০ থেকে ৭৪৯, পাস্তা ১২০ থেকে ২৫০, কফি ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।