তিনি ‘প্লাস্টিক ম্যান’

পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র সেনেগালের রাজধানী ডাকার। ডাকারের একপাশে সমুদ্রসৈকত। সেই ইয়ারাখ বিচের ধার ধরে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, নানা প্যাকেট, ময়লা আর আবর্জনা প্রতি মুহূর্তে গিয়ে মিশছে সমুদ্রে। যেভাবে বিশ্বের মহাসমুদ্রগুলো পরিণত হচ্ছে মহাভাগাড়ে, তারই যেন উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই সৈকত। সেখানেই গায়ে নানা ধরনের প্লাস্টিকের ব্যাগ, টুপি, বোতল আর আবর্জনা গায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এক যুবক। মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। নানা কথা বলেন। লোকটার নাম মদ্যু ফল।

তিনি ৪৯ বছর বয়সী মদ্যু
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

৪৯ বছর বয়সী মদ্যুকে শুরুতে অনেকেই ভেবেছিল পাগল। তারপর কিছু গণমাধ্যম মদ্যুর কথা শুনল। তিনি একজন পরিবেশযোদ্ধা। সমুদ্রদূষণ আর পরিবেশদূষণ রোধে কাজ করছেন। মানুষকে প্লাস্টিক ব্যবহার না করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। পেশায় কৃষক মদ্যুর জীবনের একটাই লক্ষ্য, সেনেগালকে দূষণমুক্ত করা। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই পরিবেশযোদ্ধা বলেন, ‘প্লাস্টিক যে শুধু সাগরের জন্য ক্ষতিকর তাই–ই নয়, মানুষের জন্য, মানবসভ্যতার বিকাশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। মানুষ তো পরিবেশেরই অংশ। পরিবেশই যদি না টেকে, মানুষ কীভাবে টিকবে? আমার যুদ্ধ পরিবেশ বাঁচানোর যুদ্ধ নয়। আমার লড়াই নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লক্ষ্যে।’

৪৯ বছর বয়সী মদ্যুকে শুরুতে অনেকেই ভেবেছিল পাগল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

আল–জাজিরার প্রতিবেদন ও ছবির গল্পের পর বিশ্বের বড় বড় গণ্যমাধ্যম লিখেছে মদ্যুকে নিয়ে। সেসব প্রতিবেদনে মদ্যুকে বলা হচ্ছে ‘দ্য প্লাস্টিক ম্যান’। মদ্যু একটা সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছেন। নাম ‘ক্লিন সেনেগাল’। ২০২০ সালে সেনেগাল সরকার আইন করে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে। কিন্তু এই সমুদ্রসৈকতই বলে দেয়, সেই আইনের বিশেষ প্রয়োগ নেই। সৈকতের পাড়ে ঘুরে ঘুরে মদ্যু বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনকে আগ্রাহ্য করতে পারবেন না। আমাদের নিজেদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে বদল আনতেই হবে। আমরা যদি নিজেদের ছোট ছোট অভ্যাস বদলাতে পারি, বিশ্ব ইতিবাচকভাবে বদলে যাবে।’

পেশায় মদ্যু কৃষক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে