জীবন বাঁচাবে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের এই পরীক্ষা

প্রায়ই ইলেকট্রিক শক বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর পাই আমরা। অথচ সামান্য সাবধানতা বাসাবাড়িতে ঘটা অসংখ্য দুর্ঘটনা থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। বাড়িতে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা যাচাই করার উপায় জেনে রাখুন।

বাড়িতে নিয়মিত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা যাচাই করা জরুরিছবি: পেক্সেলস

বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের চেকলিস্টে যে পরীক্ষা রাখা উচিত

বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেতে সহজ একটি কাজ করতে পারেন। ঘরে বসানো গ্রাউন্ড ফল্ট সার্কিট ইন্টারাপ্টার (জিএফসিআই) নামক যন্ত্রটি কাজ করছে কি না, মাঝেমধ্যে তা পরীক্ষা করে দেখুন। যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ বলছে, দেশটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার মৃত্যু এবং কমপক্ষে ৩০ হাজার আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০ শতাংশই শিশু। জিএফসিআই পরীক্ষাটি সহজ, সস্তা এবং দ্রুত করা যায়। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালন করতে পারেন সহজেই।

জিএফসিআই কী

জিএফসিআই হলো একটি সার্কিট ব্রেকার। এই সেফটি যন্ত্রটি মানুষকে বিদ্যুতায়িত হওয়া থেকে রক্ষা করে। বুঝিয়ে বলি। আপনি তার বা সকেটের দ্বারা বিদ্যুতায়িত হলে আপনার শরীরকে পরিবাহী বানিয়ে বিদ্যুৎ মাটিতে যায়। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের যন্ত্র এই প্রক্রিয়া ঘটার আগেই বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেয়। অন্যভাবে বললে, বাসার কোনো সকেটে যা-ই প্লাগ ইন করা হোক, জিএফসিআই সেটা পর্যবেক্ষণ করে। কোনো অসামঞ্জস্য বা ইলেকট্রিক শকের মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখলেই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে বাঁচা যায়। এর বাইরেও অন্য সুরক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে নতুন বাসায় উঠে জিএফসিআই না দেখলে বা সুরক্ষা নিয়ে মনে খটকা থাকলে ইলেকট্রিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভালো।

বাসাবাড়ির যেখানে পানি বেশি ব্যবহৃত হয়, সেখানে জিএফসিআই থাকলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বেশি
ছবি: পেক্সেলস

যন্ত্রটি রাখা হয় বাথরুম, রান্নাঘর, গ্যারেজ ও অন্যান্য ঘরে। সাধারণত এসব জায়গাতেই পানির প্রবাহ থাকে। কিন্তু পানির সঙ্গে এই যন্ত্রের সম্পর্ক কী? আদতে পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই বাসাবাড়ির যেখানে পানি বেশি ব্যবহৃত হয়, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বেশি।

কেন এই পরীক্ষা

আপনি নিশ্চয়ই চান বিপদের সময় সুরক্ষায় নিয়োজিত বৈদ্যুতিক যন্ত্রটি কাজ করুক। কিন্তু সেটিরও তো রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক—একটি জিএফসিআই যন্ত্রে দুই ধরনের উপাদানই থাকে। বয়স বা ত্রুটির কারণে এর যেকোনো একটি বা দুটিই অকেজো হতে পারে। তাই নিয়মিত এসব যন্ত্রের পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। জিএফসিআইয়ের কোনো অংশ বিকল হলে পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে। ফলে বিপদের আগেই সারিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে এই যন্ত্র ১০-২৫ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারে।

নিয়মিত এসব যন্ত্রের পরীক্ষা করে দেখা উচিত
ছবি: পেক্সেলস

জিএফসিআই পরীক্ষা না করলে কী হয়

একটি সচল জিএফসিআইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারে আপনার জীবন। কীভাবে? বাসার বৈদ্যুতিক সার্কিটগুলোতে পরিবাহিত বিদ্যুৎ মাপা হয় অ্যাম্পিয়ারে। অর্থাৎ সার্কিটটি তী পরিমাণ বিদ্যুৎ নিরাপদে সরবরাহ করতে পারে, সেই হিসাব। প্রচলিত বেশির ভাগ সার্কিট ১৫ বা ২০ অ্যাম্পিয়ারের। আপনার বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি এর সবটুকু বা কিছু অংশ ব্যবহার করে। যেমন একটি ব্লো ড্রায়ার সার্কিটের প্রায় পুরো ক্ষমতাই ব্যবহার করে। অন্যদিকে চার্জে দেওয়া আপনার ফোন ব্যবহার করে খুবই অল্প।

ভয়ের কথা হলো, মাত্র ০.১ থেকে ০.২ অ্যাম্পিয়ারেই একটা মানুষ গুরুতর আহত হতে পারেন বা মৃত্যু হতে পারে।

জিএফসিআইয়ের নকশা এমনভাবে করা হয়, যেন এটি ০.০০৪ থেকে ০.০০৬ অ্যাম্পিয়ারের মধ্যেই কাজ করে। ফলে বিপদের আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

প্রতি মাসে একবার পরীক্ষা করলেই হয়। তবে বেশির ভাগ মানুষ কখনোই এই পরীক্ষা করে না। এই কাজে মানুষের অবহেলা এতই বেশি যে ২০১৫ সাল থেকে জিএফসিআই যন্ত্রের ভেতরে একটি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। ফলে এটি নিজেই নিজের অবস্থা মূল্যায়ন করতে পারে।

আরও পড়ুন

যেভাবে পরীক্ষা করবেন

পরীক্ষাটি ৫ সেকেন্ডের কম সময় নেবে। কিন্তু এটি করার আগে জিএফসিআই সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখতে হবে। যন্ত্রটির ওপরে দুটি বোতাম আছে। ‘টেস্ট’ ও ‘রিসেট’। থাকতে পারে এক বা একাধিক নির্দেশক (ইন্ডিকেটর) লাইট। সাধারণত সবুজ দিয়ে সচল ও প্রস্তুত; হলুদ দিয়ে পরীক্ষাধীন এবং লাল দিয়ে ত্রুটি বোঝায়।

পরীক্ষা করার সময় একটি ‘ক্লিক’ ধরনের শব্দ শোনার পর বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়া উচিত। তখন ‘রিসেট’ বোতাম একটু বাইরে বের হয়ে রিসেট হওয়ার অবস্থায় আসবে। যদি এসব না হয় বা লাল আলো জ্বলে থাকে, তাহলে জিএফসিআই বা তারে ত্রুটি থাকতে পারে।

বোতাম চাপুন

এই প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো যন্ত্রের দরকার পড়ে না। তাই এটা সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উপায়। যন্ত্র নির্মাতারাও তাই এই পরামর্শ দেন। এতে প্রয়োজন হবে ছোট বাতি বা রেডিও এবং কাঠের চপস্টিক।

একটি ছোট বাতি বা রেডিও প্লাগ ইন করে জিএফসিআই চালু করুন। কোনো পরিবর্তন হলে লিখুন। এবার ‘টেস্ট’ বোতাম চাপুন। শক্ত মনে হলে কাঠের চপস্টিক ব্যবহার করুন (ধাতব কিছু নয়)। এরপর একটি শব্দ হয়ে বাতি বা রেডিও বন্ধ হবে। এ সময় নির্দেশক (ইন্ডিকেটর) লাইট থাকলে তার পরিবর্তন ঘটবে। আবার একটি ‘ক্লিক’ শব্দ ও বাতি চালু না হওয়া পর্যন্ত রিসেট বোতাম চাপুন।

এ ছাড়া ‘জিএফসিআই টেস্টার’ ব্যবহার করেও পরীক্ষা করা যায়। তবে এটি প্রাথমিক পরীক্ষাপদ্ধতি হওয়া উচিত নয়।

যে পদ্ধতিই ব্যবহার করুন না কেন, রিসেট বোতাম চেপেও রিসেট করতে সক্ষম না হলে জিএফসিআই পুনরায় পরখ বা পরিবর্তন করতে হবে। এসব কাজে মোটামুটি দক্ষ হলে খুব সহজেই এই পরীক্ষা করতে পারেন। তবে বিদ্যুতের যেকোনো ছোট কাজেও পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন