কনে সাজুক নিজের পছন্দে

কনের সাজে একেক বছর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে একেক ধারা। তবে চলতি ধারা মেনেই যে কনেকে সাজতে হবে, বিষয়টি এমনও নয়। বরং কনে সেজে উঠুক নিজের পছন্দে—হোক সেটা হালকা বা জমকালো।

বিয়ের দিন হালকাভাবেও সাজতে পারেন কনে।মডেল: বর্ণ, শাড়ি: টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, গয়না: কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেস, সাজ: নুজহাত খান, স্থান কৃতজ্ঞতা: ক্যানভাস স্টুডিও, ছবি: কবির হোসেন

বিয়ের সাজ কেমন হবে, এ নিয়ে কনের চেয়ে আশপাশের লোকজনের চিন্তাই যেন বেশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চলতি ধারাও আরেকটি চাপ। পাশাপাশি আছে প্রিয় তারকার বিয়ের সাজের ধারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি বিষয়ও বেশ চোখে পড়ে। হালকা সাজলে প্রশংসা পায়, জমকালো সাজলে সমালোচনা। এখান থেকেও তৈরি হয়ে যায় আরেকটি ধারা।

জামদানি শাড়িতেও সেজে উঠতে পারেন কনে
ছবি: কবির হোসেন

নিজেদের সাজেও যেন অজান্তেই আরেকজনের সাজ খুঁজতে থাকেন ভক্তরা। অথচ বিয়ের দিনের সাজটি বেছে নেওয়ার অধিকার শুধু কনেরই আছে। পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান জানালেন, বিয়ের কোন অনুষ্ঠানে হালকাভাবে সাজবেন, কোনটায় ভারী—পুরো সিদ্ধান্তই কনের শখ ও রুচির ওপর নির্ভর করা উচিত।

হলুদের আয়োজনে এভাবেও সাজতে পারেন কনে।
শাড়ি: মানাস, গয়না: রঙ্গবতী

কনের হালকা সাজের একটি ধারা এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে জমকালো সাজও হারিয়ে যায়নি। জামদানি যেমন আছে, তেমনি আবার আছে বেনারসির চাকচিক্য। কনের গায়ে সাবেকি গয়নার নকশা যেমন শোভা পাচ্ছে, তেমনি আধুনিক নকশায় গড়া গয়নাও আছে। সব মিলিয়ে এই বিয়ের মৌসুমে এক কনের সাজে দেখা যেতে পারে নানা ধারা। যেমন হলুদের সাজে সাধারণত ফুলের গয়নাই বেছে নেওয়া হয়। তবে অনেক কনেই এখন রুপার গয়নাও পরছেন। হয়তো চুলে রাখছেন কয়েকটি ফুল। চাইলে কনের পুরো গয়নাতেও রাখতে পারেন ফুলের ছোঁয়া। অনেকের বিয়ে হয় ঘরোয়াভাবে। সে ক্ষেত্রে বিয়ের দিন চাইলে লাল জামদানির সঙ্গে অল্প গয়নায় সাজতে পারেন কনে। জামদানির সঙ্গে সাধারণত হালকা মেকআপ মানিয়ে যায়। কনে চাইলে বিয়ের দিন জমকালো নকশার গয়নাতেও সাজতে পারেন। আবার মসলিনের ওপর ভারী কাজ করা শাড়ি ঘরোয়া বিয়ের পরিবেশে যেমন মানাবে, তেমনি আবার মঞ্চেও মানিয়ে যাবে। সঙ্গে থাকতে পারে কয়েক স্তরের ভারী নকশার গয়না। লাল রঙের বেনারসী শাড়িও মানাবে ভারী গায়নার সঙ্গে।

অনেক কনেই এখন রুপার গয়না পরছেন
ছবি: কবির হোসেন

মেকআপের বেজ হালকা রেখে গাঢ় রঙের লিপস্টিকে সাজ হতে পারে সম্পূর্ণ। বউভাতের সাজে কেউ যদি হালকাভাবে সাজতে চান, হালকা রঙের পোশাকের দিকে যেতে পারেন, জানালেন, নুজহাত খান। লেহেঙ্গার সঙ্গে কম নকশার গয়না এবং পরিপাটি চুলের সাজ থাকতে পারে। চোখের সাজে থাকতে পারে হালকা নাটকীয়তা। অনেকভাবেই সাজা যায়। বিয়ের বিশেষ দিনটি কনের কাছে আরও বিশেষ করে তুলবে তাঁর পছন্দ করা সাজ।

চোখের সাজে থাকতে পারে নাটকীয়তা
ছবি: কবির হোসেন

বিয়ের মেকআপের মূল বেজটি এখন হালকাই রাখা হয়। প্যানকেক ব্যবহার করে সাজার দিন অনেক আগেই চলে গেছে। অনেক কনে পুরো সাজ হালকা রেখে চোখে আনতে চান স্মোকি ভাব। কেউ আবার চোখের সাজ হালকা রেখে ঠোঁটে পরতে চান লাল লিপস্টিক। মেকআপে স্নিগ্ধ ভাব রাখতে চাইলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে যথাযথ বিশ্রাম নিতে হবে। মেকআপ যেহেতু হালকা হবে, চেহারায় থাকতে পারবে না ক্লান্ত ভাব। খাওয়া, ঘুম, ত্বকের যত্নে থাকতে পারবে না কোনো কমতি।

বউভাতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন লেহেঙ্গা
পোশাক: সাফিয়া সাথি, গয়না: কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেস, ছবি: কবির হোসেন

কনের সাজে হালকা ভাব রাখলে মেকআপ আর পোশাকেও থাকতে পারবে না রঙের কোনো চড়া উপস্থিতি। নুজহাত খান বলেন, ‘গয়না ভারী হলেও সমস্যা নেই এক্ষেত্রে।’ অন্যদিকে জমকালো সাজের কোনো নির্দিষ্ট ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে কনে যেন স্বাচ্ছন্দ্য থাকেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভারী নকশার পোশাক, চড়া মেকআপ, জমকালো নকশার গয়না পরার পরও যেন নিজের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

বিয়ের দু-তিন মাস আগে থেকেই ত্বক এবং চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত। মাসে দুবার চুলের ট্রিটমেন্ট, ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করাতে পারলে ভালো। মাসে একবার ফেসিয়াল করানো প্রয়োজন। তাহলে ত্বকের ভেতর থেকে আভা আসবে। সম্ভব হলে ওয়াক্সিং করা যেতে পারে। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর যতটা সম্ভব ত্বক পরিষ্কার করতে চেষ্টা করুন। আইল্যাশ আর লেন্স খুলে নিন। এরপর মেকআপ তোলার তেল দিয়ে মালিশ করে মেকআপ তুলে ফেলুন। মেকআপ হালকা হোক বা ভারী, বিয়ের কনে হিসেবে নিজের ভালো লাগাকেই গুরুত্ব দিন।