বসন্তের উৎসবে কি পরা হবে টাঙ্গাইলের শাড়ি
তাঁতের শাড়ি আমাদের উৎসবের দিনগুলোকে করে তোলে আরও রঙিন। সুন্দরভাবে সেজে ওঠার জন্যও যেন উৎসাহ দেয় তাঁতে বোনা শাড়িগুলো।
আটপৌরে শাড়ি হিসেবে টাঙ্গাইলের শাড়ির যে পরিচিতি আগে ছিল, সেটাকে বদলে দিয়েছেন আমাদের দেশের ডিজাইনাররা। তাঁরা দেখিয়েছেন, আপাতসাধারণ এই সুতির শাড়িও হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনের ধারক ও বাহক। তাই তো আমাদের তাঁতিদের হাতে বোনা এই শাড়ির দাপট এখন প্রতিটি উৎসবেই দেখা যায়। এই বসন্তও বইমেলার প্রাঙ্গণ, মেট্রোরেলের বগি, কর্মক্ষেত্রের চেয়ার কিংবা বাড়ির ছাদে দল বেঁধে ছবি তোলার মুহূর্তগুলো টাঙ্গাইলের শাড়ির রং আর নকশায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
তাঁতের শাড়ির মূল সৌন্দর্য আসলে কোথায়—টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী মুনিরা এমদাদের কাছে জানতে চাইলাম। ১৯৮২ সাল থেকে টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। জানান, তাঁতে বোনা এসব শাড়ি যেকোনো জায়গায় মানিয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রের জন্য যেমন আদর্শ, দাওয়াতেও তেমনি মানানসই, আবার কাঁচা বাজারেও অবলীলায় পরে যাওয়া যায়। এ কারণেই তাঁতের শাড়ি মেগা সিটির নারীদের মনেও জায়গা করে নিয়েছে। উৎসবের সময়ও দেখা যায় এই শাড়ির জয়জয়কার।
পয়লা ফাল্গুন কি পয়লা বৈশাখ, টাঙ্গাইলের শাড়ি পরলেই এসে যায় দেশিয় আমেজ। এই শাড়ির মান ও নকশা, দুই–ই বলে বাংলাদেশের কথা। ১২ হাতের এসব শাড়ি ৭০, ৮০ এমনকি ১০০ কাউন্টের সুতা দিয়েও বোনা হয়। শাড়ির ওপর কখনো থাকে বুটি, কখনো ফুলের নকশা, কখনো জ্যামিতিক নকশা, কখনো কখনো আবার কিছুই থাকে না। নকশাবিহীন শাড়িগুলোরও আছে আলাদা সৌন্দর্য। শাড়ি ও পাড়ের রং হয় আলাদা। বসন্তবরণে এ ধরনের শাড়ির আবেদন কিন্তু আলাদা। হাতে একগোছা চুড়ি আর মাথায় ছোট ফুল পরলেই সাজ সম্পূর্ণ।
অনেকেই মনে করেন যে তাঁতের শাড়ি মানেই শক্ত কাপড়। একদম ভুল ধারণা। এই শাড়ি বোনার সময় পাতলা মাড় দেওয়া হয়, এ কারণে কেনার পর নতুন শাড়ি খুললে খসখসে একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। তবে ধোয়ার পর এটি নরম হয়ে যায়, গরমে আরামও পাওয়া যায়। আমাদের এখানে এই শাড়ি জনপ্রিয়তা পাওয়ার এটিও একটি কারণ। ডিজাইনার ফায়জা আহমেদ বিষয়টিকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেন।
ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে কাপড়ের একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। এ দেশের আবহাওয়া আর মানুষের কথা মাথায় রেখেই এটা বানানো হয়। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা যখন তাঁতে কাপড় বুনতে থাকেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও প্রকৃতি থেকে রং আর নকশা বেছে নেন। বসন্তের উজ্জ্বল রংগুলো এ কারণেই ঘুরেফিরে দেখা যায়।
তাঁতিদের মন থেকে উঠে আসা মোটিফকে সব সময়ই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন মুনিরা এমদাদ। হয়তো রঙের ধরন বদলে দিয়েছেন কিংবা কোমরের কাছে নকশা হালকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মূল নকশায় তেমন একটা হস্তক্ষেপ করেননি তিনি।
দামেও সাশ্রয়ী টাঙ্গাইলের শাড়ি। বাজেট কম থাকলেও কিনতে পারবেন। তাঁতের শাড়ির সঙ্গে আটপৌরে সাজের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আলগা খোঁপা, হাতে চুড়ি, কপালে টিপ, ব্যস সাজ সম্পূর্ণ। তবে এই শাড়িতে চাইলে আধুনিকভাবেও সাজা সম্ভব। রুপালি বা সোনালি গয়না, কাঠ বা বিডসের গয়না মানিয়ে যায়। হলুদ, কমলা বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, চুল কোঁকড়া করে খোলা রেখে কিংবা আঁটসাঁটভাবে বেঁধেও সাজা যায়। মাথায় গুঁজে নেওয়া যায় নানা ধরনের ফুল। ডিজাইনার হিসেবে ফায়জা আহমেদও মনে করেন যে তাঁতের শাড়িকে চলতি ধারার স্টাইলের সঙ্গে উপস্থাপন করা যায়। নতুন নতুন উপস্থাপনা আর চিন্তাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের শাড়ির আঁচল, কুঁচি, পাড় কিংবা জমিনের নকশার মর্মই আলাদা। ধরলেই বোঝা যায় যে এটি টাঙ্গাইলের তাঁত। এটার ওপর ফুটিয়ে তোলা যায় নানা রকম নকশা। আমাদের তাঁতের শাড়ি যেন আমাদের উৎসবের দিনগুলোকে করে তোলে আরও অর্থবহ। ভালো লাগা ও ভালোবাসার পাশাপাশি সুন্দরভাবে সেজে ওঠার জন্যও যেন উৎসাহ দেয় তাঁতে বোনা শাড়িগুলো।