আরাম ও স্টাইল দুই-ই পাবেন যে পোশাকে

কাফতান এখন দাওয়াতেরও পোশাকমডেল: তাসনিয়াত ফারিণ, ছবি: নকশা

ঢিলেঢালা হওয়ায় গরমের জন্য আদর্শ এক পোশাক কাফতান। সমুদ্রপাড়ের কড়া রোদ হোক কিংবা বাড়ির ভেতরের গরম, কাফতানেই আরাম। আরামদায়ক কাট আর নকশার জন্য পাশ্চাত্যে মূলত ঘরের বাইরেই পরা হয় কাফতান। আমাদের দেশে ঘরে পরার পোশাক হিসেবেই পরিচিত ছিল বেশি।

যেকোনো শারীরিক গঠনে মানিয়ে যায় কাফতান
ছবি: নকশা

যেকোনো শারীরিক গঠনে মানিয়ে যাওয়ায় এখন আমাদের দেশেও এটি বাইরের পোশাক হিসেবে সমাদর পাচ্ছে। কাফতানের হাতায় ও গঠনে দেখা যাচ্ছে প্রজাপতি, বাদুড়ের পাখনা, অফ শোল্ডার কওল, ড্রেপ কাফতান, ড্রেপ কওল কাফতান, পুল ওভার কাফতান, কেপ কাফতান, ওপেন শোল্ডার কাফতান ইত্যাদি নতুন নতুন কাট।

কাফতানের মজার কিছু বিষয়

১. কাফতান প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। পরে অটোমান সাম্রাজ্যে দ্রুত এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। মরক্কোর বিচারকেরা যখন কাফতান পরা শুরু করেন, তখন এটি ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসজুড়ে কমবেশি প্রতিটি সংস্কৃতির ঢিলেঢালা কাফতান কাটের মতো পোশাকের সংস্করণ রয়েছে। অটোমান সুলতানরা ১২ থেকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে তাঁদের কর্তৃত্ব ও সামাজিক অবস্থান তুলে ধরতে দামি কাপড় দিয়ে তৈরি চমৎকার কাফতান পরতেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে প্রায়ই সেনাপতি ও দর্শনার্থীদের সুন্দর কাফতান উপহার দিতেন সুলতানরা।

বাড়িতে পরার জন্য দরকার আরামদায়ক কাপড়ের কাফতান
মডেল: সুনেহরা, ছবি: নকশা

২. ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকের গোড়ার দিকে পশ্চিমেও কাফতানের কদর বেড়ে যায়। ক্রিশ্চিয়ান ডিওর ও ব্যালেন্সিয়াগার মতো ব্র্যান্ডগুলোর ফ্যাশন শোতে এই পোশাক প্রদর্শিত হতে থাকে। পাশ্চাত্যের ব্র্যান্ডগুলো মূলত সিল্কের ওপর হাতের কাজ যুক্ত করে। ১৯৬০ দশকের শেষ দিকে ফ্যাশন আর সংগীত এক হয়ে ওঠে। ‘ফ্রি লাভ অ্যান্ড রক এন রোল’ প্রজন্ম কাফতানকে ভালোবাসতে শুরু করে। সারা দিনই তারা কাফতান পরে থাকত। এর আগে মূলত বাড়ির দাওয়াতে ধনী গৃহিণীরা কাফতানে সাজতেন। প্রথম দিকে ভারী সিল্কের কাপড় দিয়ে ডিজাইন করা হতো কাফতান। ষাটের দশকের শেষে কাফতানগুলো ফিনফিনে কাপড় দিয়ে বানানো শুরু হয়।

৩. ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ দশক পর্যন্ত কাফতান বেশির ভাগ দামি ব্র্যান্ডের ক্যাটওয়াক থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়, পরিবর্তে হয়ে ওঠে রিসোর্ট পরিধান।

কাফতানের মাধ্যমে বোহিমিয়ান লুকও তৈরি করা যায়
ছবি: নকশা

৪. ১৯৯৬ সালে গুচি ব্র্যান্ডের বসন্ত সংগ্রহের জন্য লম্বা কাফতানকে খাটো করে হাজির করে ডিজাইনার টম ফোর্ড। কাফতানের মাধ্যমে যে বোহিমিয়ান ও অভিজাত—দুটি রূপই ফুটিয়ে তোলা যায়, ধীরে ধীরে সেটা উপলব্ধি করতে পারে ডিজাইনাররা। এটার মাধ্যমে একই সঙ্গে শালীনতা ও আধুনিক ফ্যাশনের লুক পাওয়া যায় দেখে দিন দিন দুনিয়াজুড়ে বেড়ে চলেছে এর কদর।

কাফতানে টাই–ডাই করা
ছবি: নকশা

৫. সমুদ্রপাড়ের কাফতানের কাপড়টি যত হালকা হবে, ততই ভালো। গরম কম লাগবে, আবার শরীরও ঢাকা থাকবে। সমুদ্রপাড়ে কাফতানের সঙ্গে পায়ে থাকুক স্পঞ্জের স্যান্ডেল। হাতে চটের বড় ব্যাগ, চোখে সানগ্লাস। আবার বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে যদি কাফতান পরতে চান, তাহলে এর কাপড়টি হতে পারে সিল্ক কিংবা সহজে কুঁচকাবে না, এমন কোনো কাপড়। বোহিমিয়ান লুক আনতে চাইলে পায়ে গলিয়ে নিতে পারেন স্যান্ডেল, সঙ্গে থাকতে পারে শোল্ডার ব্যাগ আর বড় রোদচশমা। গরমে বন্ধুদের দাওয়াতেও কাফতান আদর্শ সাজ। জমকালো দাওয়াতে সিল্ক বা কাজ করা আছে, এমন কাফতান বেছে নিন। এ ক্ষেত্রে কাফতানের কাটে থাকুক একটু আটসাট ভাব। পায়ে হিল, ভারী গয়না দিয়ে সাজলেই চলে আসবে দাওয়াতের লুক। হাতের ব্যাগটিতেও থাকুক জমকালো পাথরের নকশা।

দাওয়াতের জন্য মানাবে এ ধরনের ভারী কাজ করা কাফতান
ছবি: নকশা

৬. অনুষ্ঠান এবং জায়গা অনুযায়ী সব সময় কাফতানের কাপড় বেছে নিতে হবে। কাফতানের দৈর্ঘ্য বিষয়েও একই কথা। মাঝারি দৈর্ঘ্যের ছাপা নকশার কাফতান অফিসের জন্য মানানসই। মাঝারি লম্বার কাফতানের সঙ্গে পরতে পারেন জিনস কিংবা টাইটস। আরামে কাটবে সারা দিন। দাওয়াতে, বিচে কিংবা কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মানাবে লম্বা কাটের কাফতান।

সূত্র: ডুয়ে, লাভ ইয়র ড্রেস, ভোগ