বাজেটের মধ্যে সাজ–পোশাক
যেভাবে আড়াই হাজার টাকায় কিনবেন নতুন শাড়ি, গয়না, জুতা, ব্যাগ ও ব্লাউজ
দুই থেকে আড়াই হাজার টাকাতেই শাড়ি, গয়না, জুতা, ব্যাগ, ব্লাউজ! এই সীমিত বাজেটই নিমন্ত্রণের সাজ পোশাকে নিজেকে করে তুলতে পারেন জমকালো।
‘এলসি (লেটারস অব ক্রেডিট) বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর এই দামে আর কাপড় পাবেন না,’ বিক্রেতার কাছ থেকে এই হুমকি শোনার পরও আমি নির্বিকার। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দামাদামি চালিয়ে গেলাম আরও ১০ মিনিট। শেষমেশ মাঝামাঝি রফা হলো। শাড়ি বানানোর জন্য ১ হাজার ৩২০ টাকায় কিনে নিলাম ৬ গজ কাপড়।
বিশেষ একটা মিশন নিয়ে আজ সদাইপাতি করতে বের হয়েছি আমরা। আড়াই হাজার টাকার মধ্যে নিমন্ত্রণের সাজপোশাক কিনব।
বাজারে সবকিছুর দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হিমশিম দশা। তাই বলে দাওয়াত বা অনুষ্ঠান তো আর থেমে নেই। আর এসব অনুষ্ঠানে তো এক পোশাকে বারবার যাওয়া যায় না, মাঝেমধ্যে দরকার পড়ে নতুন পোশাক। ব্র্যান্ডের দোকান আছে, কিন্তু দাম তো অনেক। সমাধান দিতে পারে মৌচাক, গাউছিয়া, নিউমার্কেট। খোঁজার মতো খুঁজতে জানলে এখানেই পেয়ে যাবেন নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই সাজপোশাক। তৈরি করে ফেলতে পারবেন দাওয়াত বুঝে পছন্দমতো লুক।
পকেটে টাকা কম থাকলেও সাজপোশাক জমকালো করা সম্ভব, সেটাও একদম বাজেটের মধ্যে। ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় শাড়ি, গয়না, জুতা, ব্যাগ, ব্লাউজ—সবই কেনা সম্ভব। তালিকা হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট পণ্যের অলিগলিতে ঘুরে কিনে নিতে পারবেন কানের ঝুমকা, গায়ের কাতান কিংবা পায়ের নাগরা। আমাদের বাজেট ছিল আড়াই হাজার টাকা করে সাড়ে সাত হাজার টাকায় তিনটি সাজ। ঊর্ধ্বগতির বাজারে পাব কি না, শঙ্কা ছিল। কিন্তু এই তিন মার্কেট ঘুরে বাজেটের মধ্যেই সব পাওয়া গেল। তবে কোনোটিতে কম লেগেছে, কোনোটিতে তুলনামূলক বেশি। ব্লাউজ তো বাড়িতেই থাকে। তবে না থাকলেও চাইলে এই বাজেটের মধ্যেই করে নিতে পারেন। তবে নতুন ব্লাউজ বানাতে হলে দর্জির মজুরী বাজেটের বাইরে হয়তো চলে যাবে।
ছাই রঙের কাতান শাড়িটির সঙ্গে নাগরা, মাথার পাথরের ব্যান্ড, কানের দুল—যেকোনো জমকালো দাওয়াতে চলে যাবে। অন্যদিকে সবুজ শাড়িটির সাজ আনুষ্ঠানিক দাওয়াতের জন্য আদর্শ। ছিমছাম গয়নায় সাজ সম্পূর্ণ। মেরুন রঙের শাড়িটি বিয়ে কিংবা ঘরোয়া দাওয়াতেও মানিয়ে যাবে। এই শাড়ি সপুরা সিল্কের ছয় গজ কাপড় কিনে বানানো। পাড় এবং ব্লাউজের জন্য একই নকশার কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। মৌচাক মার্কেট ঘুরে কেনা হয়েছে কাচ বসানো গয়না আর শাড়ির কাপড়।
সাদা ব্যাগটি অনায়াসে কাতান এবং জর্জেট শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যাবে। কালো রঙের হিলওয়ালা জুতাজোড়া সব কয়টি শাড়ির সঙ্গেই মানানসই। একইভাবে নাগরা জোড়া পরা যাবে মেরুন আর ছাইরঙা শাড়ির সঙ্গে। একই গয়না একাধিক শাড়ির সঙ্গেও ঘুরেফিরে পরা যাবে। একটু চিন্তা করলেই ৭ হাজার ৫০০ টাকার ভেতরে সহজেই চার-পাঁচটি সাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন, সেটাও হবে মানসম্পন্ন। তবে যে–ই বাজারেই যান না কেন, দরদামে তুখোড় হতে হবে, আর চেহারায় থাকবে নির্বিকার ভাব। পণ্য না কিনতে পারলে মন খারাপ করবেন, এটা বিক্রেতা আঁচ করতে পারলেই সব শেষ। ২০০ টাকার জিনিস কিনতে হবে ৭০০ টাকায়।
দুই দিন তিনটি মার্কেট ঘুরে কেনাকাটা করার সময় অল্প দামের মধ্যে বেশ চমক লাগানো পণ্যই চোখে পড়েছে। হ্যাঁ, এদের বেশির ভাগই দেশের বাইরের। চায়না হলে দাম বেড়ে যায়, দেশীয় হলে কমে আসে ১০০-১৫০ টাকা। কেনার সময় বিনা মূল্যে পাবেন ধাক্কাধাক্কি, গরম, চিৎকার, চিপাগলি, পায়ের নিচে ময়লা। তবে এই সবকিছু ছাপিয়ে গাউছিয়া, নিউমার্কেট আর মৌচাকের কাপড়, গয়না মনে করিয়ে দেয়, জিনিস দামে কম হলেই সব সময় খারাপ না।