‘বাংলাদেশি ব্লেড’ হামজা চৌধুরীর প্রেম, বিয়ে আর চুল নিয়ে কতটা জানেন
এটা হয়তো এরই মধ্যে জেনে গেছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংলিশ ফুটবলার হামজা চৌধুরী এখন থেকে খেলবেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে। আগামী ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে হামজার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটিতে খেলছেন তিনি, ক্লাবটির অধিনায়কত্ব করেছেন এবং জিতেছেন এফএ কাপ। হামজা এবার যোগ দিয়েছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডে, যাদের ডাকনাম ‘দ্য ব্লেডস’। হামজাকে তারা পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ‘বাংলাদেশি ব্লেড’ নামেও। আন্তর্জাতিক মানের এই বাংলাদেশি ফুটবলারের জীবনযাপন সম্পর্কে জেনে নিন আজ।
হামজার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন তাঁর মা ছেলের চঞ্চলতা দেখে ফুটবল কোচিংয়ে ভর্তির করানোর সিদ্ধান্ত নেন। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরী হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের মেয়ে। ছেলের ব্যাপারে ওই সিদ্ধান্ত যে কতটা ভালো ছিল, এখন তা প্রমাণিত।
ছোটবেলা থেকে হামজা ফুটবল খেলতে যতটা ভালোবাসেন, ঠিক ততটাই অপছন্দ করেন চুল কাটানোর জন্য সেলুনে যেতে। আফ্রো হেয়ারস্টাইল এখন তাঁর ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে। ফুটবল মাঠে বিশেষভাবে নজর কাড়ে তাঁর চুল।
স্কুলে পড়ার সময় হামজার পছন্দের বিষয় ছিল গণিত ও ইতিহাস। কিন্তু ফুটবল খেলে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন বটে। হামজার এই দোটানা অবস্থা শিক্ষকদেরও নজর এড়ায়নি। ফুটবলের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসায় কোনো কোনো শিক্ষক সমর্থন দিলেও কোনো কোনো শিক্ষক তাঁকে ক্যরিয়ারে একটা বিকল্প ভাবনা রাখার পরামর্শও দিয়েছিলেন।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দু-একবার বর্ণবাদের শিকারও হয়েছেন হামজা। তবে তাতে দমে যাননি। কীভাবে এমন পরিস্থিতি সামলাতে হয়, সেটা মায়ের কাছ থেকে ছোটবেলাতেই খুব ভালো করে শিখেছিলেন হামজা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোতে এশিয়ান খেলোয়াড়ের দেখা মেলে কদাচিৎ। মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী তাই গোটা এশিয়ার জন্যই এক বড় অনুপ্রেরণা বলা যায়। বিশেষ করে যাঁরা ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাঁদের জন্য তো বটেই।
হামজা চৌধুরী বিয়ে করেন ২০২০ সালে। স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরী অন্দরসজ্জাবিদ। তাঁদের তিন সন্তান।
ফুটবল খেলা ছাড়াও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন হামজা। পিয়ানো বাজানোর শখও আছে। রীতিমতো আয়োজন করে পিয়ানো বাজানো শিখেছেন ফুটবলের ব্যস্ত শিডিউলের ফাঁকে।
সাত বছর বয়সে লেস্টার সিটি একাডেমিতে যোগ দেন হামজা। এর পর থেকে সাফল্য তাঁকে আরও সামনে নিয়ে গেছে। লেস্টার সিটির হয়েই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পেশাদার ম্যাচে অভিষেক হয় কিশোর হামজার, সেবার খেলতে নামেন লিভারপুলের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন। ২০২১ সালে এফএ কাপ জেতা লেস্টার সিটি দলে ছিলেন হামজা।
শুধু নিজেই যে খেলেন, তা নয়; পরবর্তী প্রজন্মকে খেলাধুলায় আগ্রহী করতে নানা রকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন হামজা চৌধুরী। ২০২১ সালে ইএ স্পোর্টস নামে একটি গেমিং কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে হামজাকে। এই প্রতিষ্ঠানের ‘ইন্সপায়ার দ্য নেক্সট জেনারেশন’ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে শিশু–কিশোরদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করতে দেখা গেছে। ইএ স্পোর্টস হামজার ওপর একটি কমিকস বইও প্রকাশ করে, যেখানে এমন একজন এশিয়ান তরুণের ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলাকে দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই ক্যাম্পেইনে গিয়েও হামজা বারবার বলেছেন, ‘আমি আমার শিকড়, ঐতিহ্য, গায়ের রং বা চুল নিয়ে যদি স্বচ্ছন্দ না হই, তাহলে আমি একজন প্রকৃত খেলোয়াড়ই নই। নিজে যা, সেটাকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করতে পারাটাই প্রকৃত খেলোয়াড়ের স্পিরিট।’
হামজা ব্রিটেনের নুজুম স্পোর্টস কোম্পানির সঙ্গেও কাজ করেন। যারা মূলত মুসলিম খেলোয়াড়দের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করে। তারা ফুটবলে এশীয়দের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়াতে নানা রকম কাজ করছে।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এশীয়, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের যতটা সমর্থন পেয়েছেন, হামজা সেটা নিয়েও গর্ব বোধ করেন। তিনি বলেন, ‘হয়তো অনেকেই আমার খেলা দেখেননি কিন্তু আমি দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছেলে শুনে তাঁরা আমাকে নিয়ে গর্ব করছেন। বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার মেসেজ পাই।’
সূত্র: বিবিসি, এমআরপোর্টার ও সকারবাইবেল