আইল্যাশ এক্সটেনশনের জানা-অজানা

মেক্সিকান পেইন্টার ফ্রিদা কাহলো চোখ খুবই ভালোবাসতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি, শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক। তবু আমি আমার চেহারার ভেতর চোখ আর ভ্রু সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। চোখ আর ভ্রু ছাড়া আমার আর কিছুই পছন্দ নয়। বোধ হয় আমার মাথা খুব ছোট।’ ফ্রিদার মতো আপনিও যদি একজন চোখপ্রেমিক হন, তবে এই লেখা আপনার জন্য। আপনি যদি চোখ ভালোবাসেন, তবে অবশ্যই আপনার অন্যতম পছন্দের কাজ হলো অন্যের চোখ পর্যবেক্ষণ করা। আমিও তেমনই একজন। এই তো সেদিন জিরাফের চোখের পাপড়ি দেখে ভাবছিলাম, এত সুন্দর পাপড়িগুলো আমার হলে মন্দ হতো না!

আইল্যাশ এক্সটেনশনের মূল ফোকাস হলো পাপড়িকে লম্বা, পুরু আর ঘন দেখানো
ছবি: পেকজেলসডটকম

চোখের সাজের একটা বড় অংশ নির্ভর করে আইল্যাশের ওপর। বাজারে নানা ধরনের আলগা ল্যাশ বা এক্সটেনশন পাওয়া যায়। তবে লাগানোর ভয় এবং স্থায়িত্ব কম হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যাঁরা আইল্যাশ লাগাতে অভ্যস্ত নন, তাঁরা ঝক্কিঝামেলা এড়াতে ল্যাশ এক্সটেনশন করে নিতে পারেন। আইল্যাশ এক্সটেনশনের প্রধান উপকরণ হলো সিনথেটিক, ফক্স মিঙ্ক কিংবা সিল্ক ফাইবার দিয়ে তৈরি কৃত্রিম পাপড়ি। এটি চোখের পাপড়ির ওপর একধরনের সেমি পারমানেন্ট আঠা দিয়ে বসানো হয়। ফলস আইল্যাশ আঠা দিয়ে আইলিডের স্কিনে বসানো হয়। তবে আইল্যাশ এক্সটেনশন বসানো হয় আপনার ল্যাশের ওপর। তাই এটি একটা ন্যাচারাল লুক দেয়। আর স্কিনেরও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আইল্যাশ এক্সটেনশনের ফলে পাপড়িকে লম্বা, পুরু আর ঘন দেখায়।

এক্সটেনশন সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে: মিঙ্ক, সিল্ক আর সিনথেটিক। অরিজিনাল মিঙ্ক ল্যাশ পশুর পশম দ্বারা তৈরি বলে এটি প্রায় সব জায়গায় বর্জনীয়। তবে ফক্স মিঙ্ক ল্যাশ মানুষের তৈরি। এটি আসল মিঙ্ক ল্যাশের মতো দেখতে হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক। তা ছাড়া এটি অন্য দুটি ধরন থেকে বেশি ন্যাচারাল লুক দেয়। এই ল্যাশ ওজনে হালকা হওয়ায় চোখে অস্বস্তি হয় না।

যাঁরা একটু বোল্ড লুক পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য সিনথেটিক ল্যাশ পারফেক্ট
ছবি: পেকজেলসডটকম

সিল্ক ল্যাশ সিনথেটিকের তুলনায় হালকা হয়। হালকা চকচকে ভাব থাকলেও ন্যাচারাল লুক দেয় এবং ল্যাশ লম্বা দেখায়। এটি ব্রাইডাল সাজের জন্য একদম পারফেক্ট একটি এক্সটেনশন। সিনথেটিক ল্যাশগুলো পলিশড অ্যাক্রিলিক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। তাই এগুলো অন্য দুই ধরনের থেকে বেশি চকচকে, পুরু এবং ড্রামাটিক। যাঁরা একটু বোল্ড লুক পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এই ল্যাশ পারফেক্ট।

আইল্যাশ এক্সটেনশন করাও কঠিন নয়। প্রথমে চোখের এরিয়া ভালোমতো পরিষ্কার করে চোখের ওপর ও নিচের পাতার বাইরের দিকে জেল প্যাচ লাগানো হয়। এগুলো সাদা স্টিকারের মতো। এতে চোখে পাপড়ি বসাতে সুবিধা হয়। এরপর ল্যাশগুলো ব্রাশের মাধ্যমে সুবিন্যস্ত করে নেওয়া হয়। এরপর পছন্দমতো কৃত্রিম ল্যাশ, ন্যাচারাল ল্যাশের ওপর ল্যাশ গ্লু (ল্যাশ লাগানোর বিশেষ ধরনের আঠা) দিয়ে লাগানো হয়।

আইল্যাশ এক্সটেনশনখানিকটা ব্যয়বহুল আর এটি করার পর আপনাকে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
ছবি: পেকজেলসডটকম

ন্যাচারাল লুকের জন্য প্রতিটি ল্যাশের মাঝে ১ মিলিমিটার ব্যবধান রাখা হয়। এবারে আবার স্পুলি দিয়ে ল্যাশগুলো আঁচড়ে নেওয়া হয়, কন্ডিশনার লাগানো হয়। সবশেষে জেল প্যাচ সরিয়ে চোখের এরিয়ায় রিলাক্সেশন ম্যাসাজ দিয়ে শেষ করা হয়। সাধারণত একবার আইল্যাশ এক্সটেনশন করালে সেটি ছয় থেকে সাত সপ্তাহ স্থায়ী হয়। মাঝে দুই বা তিন সপ্তাহ পর আবার রিফিল করালে ভালো। আমাদের দেশে ল্যাশ এক্সটেনশন করাতে ধরন অনুযায়ী ছয় থেকে সাত হাজার টাকা গুনতে হবে। তাই রেগুলার না করিয়ে কোনো উৎসব বা বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে করালে ভালো।

সতর্কতা

দিন দিন পুরুষদের মাঝেও জনপ্রিয় হচ্ছে আইল্যাশ এক্সটেনশনের ধারণা
ছবি: পেকজেলসডটকম

১. আইল্যাশ এক্সটেনশনের পরে অন্তত ৬ ঘণ্টার মধ্যে চোখে পানি লাগানো ঠিক নয়।
২. আইল্যাশ এক্সটেনশন করলে অবশ্যই আপনার ল্যাশকে যেকোনো ধরনের তেল থেকে দূরে রাখতে হবে। যেমন মেকআপ রিমুভার, যেকোনো অয়েল বেসড প্রোডাক্ট।
৩. কৃত্রিম ল্যাশ লাগালে মাশকারা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। তাই আই মেকআপ যতটা মিনিমাল করা যায়, তত ভালো।
৪. ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই স্পুলি দিয়ে ল্যাশ ব্রাশ করে নিতে হবে।
৫. অযথা চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. অ্যালার্জি থাকলে এটি করার কারণে ইরিটেশন হতে পারে। তাই না করাই শ্রেয়।
৭. এই পদ্ধতি খানিকটা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।
৮. যেহেতু এটি ন্যাচারাল ল্যাশের ওপর গ্লু দিয়ে বসানো হয়, তাই আপনার ন্যাচারাল ল্যাশের ক্ষতি হতে পারে।