গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে যে দুটি বিশ্ব রেকর্ডের আবেদন করবেন আশিক

৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেন আশিক
ছবি: আশিক চৌধুরীর সৌজন্যে

আশিক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বিমান থেকে লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালান গত ২৫ মে। তাঁর এ প্রচেষ্টা সেখানে উপস্থিত থেকে তত্ত্বাবধান করেছেন ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের এক বিচারক। আকাশে রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডের রেকর্ড পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি সম্প্রতি আশিকের লাফের বিস্তারিত পরিসংখ্যান তাঁকে পাঠিয়েছে। এতে দেখা যায়, আশিক দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন।
গতকাল ৮ জুন প্রথম আলোকে আশিক চৌধুরী জানান, ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেন তিনি। ৩৭ হাজার ২৯৭ ফুট উচ্চতায় নেমে আসার পর জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন। এরপর ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পতাকা ধরে রাখেন। ৪ হাজার ৪৯৮ ফুট উচ্চতায় আসার পর ভূমিতে অবতরণের জন্য তাঁর পিঠে থাকা প্যারাস্যুট খোলেন আশিক।
এসব উপাত্ত তুলে ধরতে আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আশিকের এ প্রচেষ্টায় আর্থিক সহযোগিতা করছে ইউসিবি। সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো।

গতকাল প্রথম আলোকে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি শাখায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারব। শাখা দুটি হলো “লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রিফল” ও “গ্রেটেস্ট ডিসটেনস ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ”।’ শিগগিরই এ আবেদন জমা দেবেন আশিক।

গত বছর স্কাইডাইভারের লাইসেন্স পেয়েছেন এই তরুণ
ছবি: আশিক চৌধুরীর সৌজন্যে


বর্তমানে রেকর্ড দুটির মালিক ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানা। আশিকের মতো জিতিনও গত বছরের ১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হন। ‘লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রিফল’ শাখায় তাঁর সময় ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড, যেখানে আশিক ছিলেন ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড। ‘গ্রেটেস্ট ডিসটেনস ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’-এর ক্ষেত্রে জিতিনের রেকর্ড ১১ হাজার ২৫৬ মিটার বা প্রায় ৩৬ হাজার ৯২৯ ফুট। আশিকের ৩৭ হাজার ২৯৭ ফুট।
আশিক চৌধুরীর এই রেকর্ড গড়ার উদ্যোগের নাম ‘দ্য লার্জেস্ট ফ্ল্যাগ ফ্লোন ইন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’। ভূপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী জায়গাকে বলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। আশিক রেকর্ড গড়তে প্রায় ৭ বর্গফুট আকারের পতাকা নিয়ে লাফ দেন।

আরও পড়ুন

গত ২৫ মে মেমফিসে ভোরের আলো ফুটতেই বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন আশিক চৌধুরী। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় বিমান থেকে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে লাফ দেওয়ারও এক ঘণ্টা আগে আকাশে উড়তে হয়েছিল আশিককে। এই ঘণ্টাখানেক সময় শরীর থেকে সব নাইট্রোজেন অপসারণের জন্য অক্সিজেন মাস্ক পরে তাঁকে বিমানে বসে থাকতে হয়েছে। একই বিমানে আশিকের সঙ্গে ছিলেন আরও চারজন। তাঁর মধ্যে একজন আশিকের আলোকচিত্রী, বাকি তিনজন অন্য একটি রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সাধারণত ৩৫ হাজার ফুটের নিচ দিয়ে চলাচল করে। এর ওপরে উঠতে দরকার হয় বিশেষায়িত বিমান। পাইপার শাইয়ান টার্বো ৪০০ এলএস বিমান দিয়ে আশিক রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। মেমফিসের উইংস ফিল্ড বিমানঘাঁটিতেই এ ধরনের বিশেষ বিমান পাওয়া যায়। সেখানকার আবহাওয়াও এই রেকর্ড গড়ার জন্য অনুকূল।

আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার
ছবি: খালেদ সরকার


আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের তিনি সহযোগী পরিচালক।
যুক্তরাজ্যে এক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রাইভেট পাইলট হিসেবে লাইসেন্স পান আশিক চৌধুরী। এরপর থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির অধীন স্কাইডাইভিংয়ের ওপর লম্বা প্রশিক্ষণ নেন। গত বছর অর্জন করেন স্কাইডাইভারের লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দেখিয়ে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশে স্কাইডাইভিং করতে পারবেন আশিক।
বিমান থেকে লাফ দিয়ে সফলভাবে মাটিতে নেমে আসার পর প্রথম আলোকে আশিক চৌধুরী বলেছিলেন, ‘কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরে আমি খুব নির্ভার বোধ করছি। আশা করি, দেশের জন্য বড় একটা রেকর্ড হবে।’
সেটাই মনে হয় এবার সত্যি হতে চলেছে।