যুক্তরাষ্ট্রে যাবে ‘বাক্সের বাইরে’র ছবি
দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘শিশু পল্লী প্লাস’। গাজীপুরের শ্রীপুরের এই প্রতিষ্ঠান অসহায় মা ও শিশুদের পুনর্বাসনকেন্দ্র। এখানেই তিন দিনের সমকালীন চিত্রাঙ্কন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। দেখে এসেছেন সাদিক মৃধা
সবুজ ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে দিনা জামান। তাঁকে ঘিরে শতাধিক শিশু। সবার হাতে রংতুলি। রংতুলিতে একেকজন এক রং মিশিয়ে নিয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের কাছে ডেকে ‘যা ইচ্ছা আঁকো’ বলে উৎসাহ জোগালেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মার্কিন শিল্পী। তারাও একে একে গিয়ে দিনার গায়ের সাদা পোশাকে আঁকতে শুরু করল। কেউ আঁকল প্রজাপতি, কেউ ফুল, কেউ পাখি, কেউবা আবার বাংলা-ইংরেজি বর্ণ। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলল এই আঁকিবুঁকি। ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন দিনা জামান।
‘বাক্সের বাইরে’ নামের সমকালীন শিল্প কর্মশালার অংশ হিসেবে ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি শিশু পল্লী প্লাসের ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন শিল্পী দিনা জামান। তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশের আরও আট ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট। বাংলাদেশের ‘গড়ি’ ও যুক্তরাষ্ট্রের রয় জি বিভের সহযোগিতায় কর্মশালাটি পরিচালনা করেন দিনা। কর্মশালার শেষ দিনে শিশু পল্লী প্লাসের বকুলতলা আর্ট গ্যালারিতে সাঁটানো হয় শিল্পীদের আঁকা শতাধিক চিত্রকর্ম। কোনোটি জলরঙে আঁকা, কোনোটি অ্যাক্রিলিক। ছিল মিক্স মিডিয়া কিংবা কালেকটিভ ম্যাটেরিয়ালে তৈরি শিল্পকর্ম।
এ প্রদর্শনী উপলক্ষে সেদিন বকুলতলায় জড়ো হয়েছিল শিশু পল্লী প্লাসের মা ও শিশুরা। আয়োজন করা হয়েছিল ‘আর্ট টক’ নামে অনুষ্ঠান। শিশু পল্লী প্লাসের আর্ট ডিজাইন ক্রিয়েটিভ লার্নিংয়ের পরিচালক মিলন রবের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চিত্রশিল্পী দিনা জামান। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য চিত্রাঙ্কন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আলোচনা করেন চিত্রশিল্পীরা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে মঞ্চ মাতায় শিশু পল্লী প্লাসের ছিন্নমূল শিশুরা। একপর্যায়ে দেয়ালে সাঁটানো ছবিগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে হইহুল্লোড় করে প্রদর্শনীতে ছুটে যায় শিশুরা। সঙ্গে তাদের মায়েরা। ঘুরে ঘুরে সবাই প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখেন। দেয়ালের কিছু ছবিতে বাংলাদেশের চিরায়ত রূপ। কিছু ছবিতে সমসাময়িক সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ। বিমূর্তধারার ছবিও ছিল।
শিশু পল্লী প্লাসের মতো জায়গায় আর্ট ওয়ার্কশপ আয়োজন করা সম্পর্কে চিত্রশিল্পী দিনা জামান বলেন, ‘এখানে আশ্রয় পাওয়া শিশুরা পারিবারিক বিভিন্ন বিপর্যয় দেখেছে। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। মনে জমে গেছে ভয়। এগুলো ভাঙতে হলে তাদের একটু গতানুগতিক সময়ের বাইরে আসতে হবে। তাদের চিন্তাচেতনা জাগ্রত করতে; সাহসী, স্বাধীন, সৃষ্টিশীল করতে আমরা এ আয়োজন করেছি। নাম দিয়েছি “বাক্সের বাইরে”।’
শিশু পল্লী প্লাসে প্রদর্শিত ছবিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শন করার পরিকল্পনা আছে, জানালেন দিনা জামান।