পেছনে তাকাতেই দেখি কিলিয়ান এমবাপ্পে

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন ফরাসি ফুটবল তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেছবি: রাশেদুল ইসলাম

ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পড়াশোনা করেছি। একসময় জাতীয় দলে খেলার সুযোগও হলো। কিন্তু জাতীয় দলের ছোট্ট ক্যারিয়ারে বিশ্বখ্যাত কোনো স্টেডিয়ামে নিজে খেলা বা অন্য দলের খেলা দেখার সুযোগ হয়নি।

তারপর তো একসময় ক্রীড়া সাংবাদিকতা শুরু করলাম। বর্তমানে ফুটবল ক্লাব ফর্টিস এফসি লিমিটেডের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি। ক্লাবের হয়েই হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে আছি। এখানে অলিম্পিক সলিডারিটির স্কলারশিপ নিয়ে আন্তর্জাতিক কোচিং কোর্স করছি। এর মধ্যেই ১৮ থেকে ২১ এপ্রিল টানা ছুটি পেলাম। এই সুযোগে কোর্সমেটরা বিভিন্ন দেশে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ল। আমার ইচ্ছা অন্য, বড় পরিসরে কোনো ফুটবল ম্যাচ দেখব।

সাংবাদিকতা করার সময় ক্রীড়া তারকাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছা হতো। কখনো সফলও হয়েছি, কখনো ব্যর্থ। তবে কাজটা করতে গিয়ে দেশ-বিদেশে একটা যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। এখনো ফুটবল অঙ্গনের অনেকের সঙ্গেই যুক্ত আছি। সেই পরিচয়ের সুত্রেই রিয়াল মাদ্রিদের এক কর্তার কাছে স্পেনের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচ দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আন্তরিকতার সঙ্গেই তিনি কিছু তথ্যের সঙ্গে আমার ক্লাবের নাম ও পদবি জেনে নিলেন। তাঁর পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বার্নাব্যুতে স্বাগতও জানালেন।

তারপর আর সেই কর্তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। ১৬ এপ্রিল টিভিতে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম আর্সেনালের ম্যাচ শুরুর অপেক্ষায় আছি। এমন সময় রিয়াল মাদ্রিদের অফিশিয়াল মেইল। তারা আমাকে ২১ এপ্রিলের রিয়াল মাদ্রিদ বনাম অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের ম্যাচটির পাস পাঠিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবের সভাপতি শাহিন হাসানকে অবগত করে নিশ্চিত করলাম বিমানের টিকিট।

উত্তেজনায় নির্ধারিত দিন চার ঘণ্টা আগেই পৌঁছে গেলাম স্টেডিয়ামে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গিয়ে বুঝলাম, আমার চেয়েও বেশি উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সমর্থকেরা। খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই মাঠে ঢোকার সুযোগ হলো। চোখের সামনে মখমলের মতো সবুজ ঘাসের মাঠ আর থাকে থাকে সাজানো গ্যালারি দেখে মনে হচ্ছিল অষ্টমাশ্চর্য!

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর গ্যালারিতে লেখক

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেওয়ার্মআপ করতে খেলোয়াড়েরা মাঠে নামতেই দর্শকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। তারপর শুরু হলো খেলা। উত্তেজনার চোটে খেলা দেখায় মনোযোগই দিতে পারছিলাম না। তবে তার মধ্যেও কিছু বিষয় খেয়াল করেছি। যেমন প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকা অবস্থায় লুকা মদ্রিচের ওয়ার্কলোড নেওয়ার ক্ষমতাটাটা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। একই সঙ্গে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের কোচ ভালভার্দে যেভাবে ডাবল ট্রিমিং কৌশল শিখিয়ে দিয়ে দ্রুতগতির ভিনিসিয়ুসকে আটকালেন, সেটিও উপভোগ করেছি।

ম্যাচের বিরতি শুরু হলে কী করব না–করব, ভাবতে ভাবতেই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি মাথার ওপর নির্ধারিত জায়গায় বসে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁকে ঘিরে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী। লা লিগার আগের ম্যাচে লাল কার্ড পাওয়ায় এমবাপ্পের এই ম্যাচ খেলা হবে না আগেই জানতাম। বার্নাব্যুতে এসে এমবাপ্পের খেলা দেখা হবে না—এ নিয়ে মনঃকষ্টে ছিলাম। ফরাসি তারকার দর্শন পেয়ে সেই কষ্টও দূর হলো। মুঠোফোন হাতে নিয়ে নিচ থেকে কয়েকটা ছবিও তুললাম। তবে তাঁকে নিয়ে আমার আশপাশের দর্শকদের দেখি তেমন হেলদোল নেই। শুধু কাছাকাছি বসা এক বালক এমবাপ্পের দিকে একটা জার্সি এগিয়ে দিলেন। জার্সি টেনে নিয়ে স্বাক্ষরও করে দিলেন এমবাপ্পে। বুঝতে পারলাম বার্নাব্যু, রিয়াল আর রিয়ালের খেলোয়াড়েরা তাদের কাছে রোজ দেখা মানুষের মতো।

ম্যাচটি ১-০ গোলে জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। যোগ করা সময়ে ভালবার্দের দুর্দান্ত ভলিতে আসে এই জয়। এমন একটি ম্যাচ উপভোগের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য রিয়াল মাদ্রিদকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়—ধন্যবাদ, রিয়াল মাদ্রিদ।

আরও পড়ুন