চাঁদে প্রথম পা রাখা মানুষটি সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানতেন

চাঁদের হাজার বছরের নিঃসঙ্গতা প্রথমবারের মতো ঘুচিয়েছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। যে চাঁদ ছিল মানুষের রাতের আকাশে, গান, কবিতা আর গল্পে, সে চাঁদকে প্রথমবারের মতো ছুঁয়ে দিয়েছিলেন এই মার্কিন নভোচারী। চলুন, তাঁর সম্পর্কে কিছু ভিন্ন রকম তথ্য জানা যাক।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পান তিনি
ছবি: সংগৃহীত
  • ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া আর্মস্ট্রং উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পান মাত্র ১৬ বছর বয়সে, তখন তাঁর গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও ছিল না! ১৯৪৭ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হন পারডু ইউনিভার্সিটিতে, বিষয় ছিল অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৪৯ সালে পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। দুই বছর পর যোগ দেন কোরিয়ার যুদ্ধে। ১৯৫২ সালে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে আসেন বিদ্যাপীঠে। কয়েক বছরের মধ্যে যোগ দেন ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিকসে, ১৯৫৮ সালে যেটি রূপান্তরিত হয় নাসায়।

  • ১৯৫৬ সালের ২৮ জানুয়ারি জ্যানেটকে বিয়ে করেন আর্মস্ট্রং। ১৯৫৭ সালে তাঁদের কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান রিক। ১৯৫৯ সালে আসে প্রথম কন্যা ক্যারেন। মাত্র আড়াই বছর বয়সে মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে ক্যারেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। পরের বছরই তৃতীয় সন্তান মার্কের জন্ম হয়। কিন্তু মেয়ের মৃত্যুতে ভীষণ ভেঙে পড়েন আর্মস্ট্রং। অ্যাস্ট্রোনট প্রোগ্রামে যোগ দেন ১৯৬৩ সালে। পৃথিবীর কক্ষপথে পাড়ি দেন ১৯৬৬ সালে।

  • ১৯৬৯ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—চন্দ্রজয়ের মিশন হাতে নেন আর্মস্ট্রং। ২০ জুলাই চাঁদের মাটিতে পা রাখেন আর্মস্ট্রং, আর বলেন, ‘একজনের জন্য ছোট্ট পদক্ষেপ হলেও মানবজাতির জন্য বিশাল এক অগ্রযাত্রা।’ চাঁদ জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের ‘হিরো’ হিসেবে মর্যাদা পান আর্মস্ট্রং। কিন্তু তিনি নিজেকে কখনো ‘আমেরিকান হিরো’ ভাবতে পছন্দ করতেন না। তাঁর কাছে চন্দ্রজয় ছিল গোটা মানবজাতির অর্জন। 

নিল আর্মস্ট্রং
ছবি: সংগৃহীত
  • ১৯৭১ সাল পর্যন্ত নাসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর্মস্ট্রং। তারপর অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হয়ে যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটিতে। আট বছর শিক্ষকতা করেছেন। তারও পরে, ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কম্পিউটিং টেকনোলজিস ফর এভিয়েশন ইনকরপোরেটেডে।

  • আর্মস্ট্রং জীবন কাটিয়েছেন ভীষণ নিভৃতে। ২০০৫ সালে ৬০ মিনিটের এক সাক্ষাৎকারে চাঁদ নিয়ে বলেছিলেন, ‘সূর্যালোকে চাঁদের পৃষ্ঠটি অসাধারণ। জায়গাটি দারুণ। আমি তো সবাইকে সেখান থেকে ঘুরে আসতে বলব।’ একই বছর প্রকাশিত হয় আর্মস্ট্রংয়ের একমাত্র অনুমোদিত জীবনী ফার্স্ট ম্যান: দ্য লাইফ অব নিল এ. আর্মস্ট্রং।

  • ০১২ সালের আগস্টে আর্মস্ট্রংয়ের বাইপাস সার্জারি হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই—২৫ আগস্ট ৮২ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন আর্মস্ট্রং। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যারোল এবং দুই সন্তান। মহান এই নভোচারীর মৃত্যুর পর তাঁরা একটি বিবৃতি দেন, ‘যাঁরা জানতে চাইছেন, নিলকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য কী করা যায়, তাঁদের কাছে সামান্য অনুরোধ। এরপর বাইরে ঘুরতে বেরোলে রাতের ঝকঝকে আকাশে আপনার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকা চাঁদটিকে দেখলে নিল আর্মস্ট্রংয়ের কথা স্মরণ করবেন।’

সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম