ভিটামিন সি কেন দরকার? কতটা খাবেন?

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ভিটামিন সিমডেল: সাফা কবির। ছবি: প্রথম আলো

ভিটামিন সি, যা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত, মানবদেহের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এটি পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন, অর্থাৎ আমাদের শরীর এটি জমা করে রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিন খাদ্য বা পানীয়ের মাধ্যমে এই ভিটামিন গ্রহণ করা জরুরি। শরীরের অভ্যন্তরীণ বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সচল রাখতে ভিটামিন সির ভূমিকা অনস্বীকার্য।

লেবুতে পাবেন ভিটামিন সি
মডেল: সাফা কবির। ছবি: প্রথম আলো

ভিটামিন সি কেন আমাদের প্রয়োজন

ভিটামিন সির প্রয়োজনীয়তার প্রধান কারণগুলো হলো

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন ও কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে সহজেই ঠান্ডা, সর্দি-কাশি বা অন্যান্য সংক্রমণ থেকে শরীর রক্ষা পায়।

শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে (এজিং প্রসেস) ধীর করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন

কোলাজেন উৎপাদন
ত্বক, হাড়, দাঁত, মাড়ি এবং রক্তনালিগুলোর প্রধান উপাদান হলো কোলাজেন। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সরাসরি সাহায্য করে, যা ক্ষত নিরাময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভাইরাল জ্বর হলে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
ছবি: পেক্সেলস

আয়রন শোষণ
খাদ্যে থাকা আয়রন সহজে শোষণ করতে শরীরকে সাহায্য করে ভিটামিন সি। যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে এবং কতটা গ্রহণ করা প্রয়োজন
ভিটামিন সির সবচেয়ে ভালো উৎস হলো তাজা ফল ও সবজি। তাপ দিলে এই ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়, তাই ভালোভাবে পরিষ্কার করে কাঁচা বা সামান্য রান্না করে খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

আরও পড়ুন

প্রধান উৎসগুলো

ফল
আমলকী, পেয়ারা, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, কাগজিলেবু, তেঁতুল ইত্যাদি।

সবজি
টমেটো, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম (বিশেষ করে লাল রঙের) এবং বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে
মডেল: সায়মা, ছবি : নকশা

দৈনিক প্রয়োজনীয় মাত্রা

স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ভিটামিন সির প্রয়োজনীয় মাত্রার নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো—

  • জন্ম থেকে ৬ মাস (শিশু): ৪০ মিলিগ্রাম

  • ৭-১২ মাস (শিশু): ৫০ মিলিগ্রাম

  • ১-৩ বছর (শিশু): ১৫ মিলিগ্রাম

  • ৪-৮ বছর (শিশু): ২৫ মিলিগ্রাম

  • ৯-১৩ বছর (শিশু): ৪৫ মিলিগ্রাম

  • ১৪-১৮ বছর (কিশোর): ৭৫ মিলিগ্রাম

  • ১৪-১৮ বছর (কিশোরী): ৬৫ মিলিগ্রাম

  • প্রাপ্তবয়স্ক (পুরুষ): ৯০ মিলিগ্রাম

  • প্রাপ্তবয়স্ক (নারী): ৭৫ মিলিগ্রাম

  • অন্তসত্ত্বা নারী: ৮৫ মিলিগ্রাম

  • স্তন্যদানকারী নারী: ১২০ মিলিগ্রাম

  • ধূমপায়ী ব্যক্তি: ১৩৫ মিলিগ্রাম

সাধারণত প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে সহজেই এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে কোনো বিশেষ স্বাস্থ্যগত কারণে বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য যদি আপনার অতিরিক্ত ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তা গ্রহণ করা উচিত। প্রাকৃতিক উৎস থেকে ভিটামিন সি গ্রহণ করাই হলো সুস্থ থাকার সেরা উপায়।

আরও পড়ুন