ঘাট ছাড়ার কয়েক মিনিট পরই মনে হলো, নদী থেকে সাগরে প্রবেশ করলাম যেন। চারদিকে অথই জল। দূরে ছোট ছোট দ্বীপ। কিছুদূর যেতেই পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোট ছোট বাড়ি। অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ছোট্ট ট্রলারে আমরা চারজন এগিয়ে চলেছি।
জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য আর মাথার ওপর নানা জাতের পাখিদের ওড়াউড়ি, কী মনোরম! কাপ্তাই হ্রদে আরও খানিকটা পথ যেতেই একটা সোনালি মূর্তির দেখা পেলাম। আমরা যখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, মাঝি বললেন, এটি স্বর্ণমন্দির। সেখানে আমরা নেমে পড়লাম। মন্দির ঘুরে দেখলাম।
মন্দির ঘুরে আবার ট্রলারে উঠে পড়ি। এবার কাপ্তাই হ্রদের জলরাশি বেশ স্বচ্ছ। সবুজ পাহাড়ের প্রতিচ্ছায়ায় জলও হয়েছে সবুজ। সবুজ পাহাড়ের মোহনা, কী নান্দনিক! এমন মোহনা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। চোখ টেনে নিচ্ছে, মনও। প্রায় ৪৫ মিনিটের পানিভ্রমণ শেষে হ্রদের অংশ প্রবেশ করেছে পাহাড়ের ভেতর। মাঝি বললেন, এটিই সুবলং ঝরনা, মায়াবি ঝরনা। তবে শীতকালে পানি একেবারেই কম। বর্ষাকালের রূপ ভেবে রোমাঞ্চিত হলাম। একটু চোখও বুলিয়ে নিলাম। নামলাম সেখানে। ২০ টাকার টিকিট কেটে ঝরনায় প্রবেশ করতে হয়। এখানে একটি ক্যানটিন আছে। হালকা চা-নাশতা সেরে নিলাম সেখানে।
আবার যাত্রা শুরু। পাহাড় উপত্যকার জলপথ দিয়ে আরও ১০ মিনিট যেতেই ছোট বাজার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প এখানে। বলে রাখি, এরপর যেতে হলে সেনাবাহিনীর অনুমতি প্রয়োজন হয়। অনুমতি নিয়ে আমরা মোহনা ও দ্বীপ পাশ কাটিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর বড় স্থাপনা দেখতে পেলাম। মাঝি বললেন, এটা সুবলং আনসার ক্যাম্প। পাহাড়ের গায়ে জল-পাহাড়বেষ্টিত এই ক্যাম্প দেখতে বেশ সুন্দর।
এবার ফেরার পালা।
বিকেল ও গোধূলিবেলায় কাপ্তাই হ্রদের দৃশ্য মনভোলানো। মাঝপথেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। জেলেরা আলো জ্বালিয়ে মাছ ধরছেন। দ্বীপগুলোতে আলো জ্বলছে। মাথার ওপর রাতজাগা পাখিদের ওড়াউড়ি। প্রায় দেড় ঘণ্টার রোমাঞ্চকর জলভ্রমণ শেষে রিজার্ভ বাজারের লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছালাম।
যাঁরা যেতে চান
রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারসংলগ্ন লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ভাড়া করতে হবে। ছোট-বড়ভেদে লঞ্চ ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু। ১০-২০ জন ভ্রমণ করা যাবে। কোন কোন জায়গায় যাবেন তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। স্পিডবোটেও যেতে পারবেন। পাঁচ-ছয়জনের ভাড়া দুহাজার টাকা থেকে শুরু।
তারও আগে ট্রেন বা বাসে চট্টগ্রামে যেতে হবে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে পাহাড়িকা বা শান্তি পরিবহনের বাসে ১২০ টাকা ভাড়ায় রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজারে। একটু এগিয়ে গেলেই লঞ্চঘাট।
রিজার্ভ বাজারসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আবাসিক ও খাবার হোটেল পাবেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের বাড়িতেও থাকতে ও খেতে পারবেন।
লেখক: উপপরিচালক, বিআরডিবি, কুষ্টিয়া।