ঢাকার কাছেই গোলাপগ্রাম

বাগানে ফুটে আছে শত শত গোলাপ
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কারও মাথায় গোলাপের রিং, কারও খোঁপায় গোঁজা গোলাপ। অনেকে মালা করে গলায় পরেছেন গোলাপ। কেউবা হাঁটু গেড়ে প্রিয় মানুষটিকে উপহার দিচ্ছেন গোলাপ। এ যেন গোলাপের রাজ্যে এসে পড়েছি। সর্বত্রই গোলাপ আর গোলাপ। ঢাকা থেকে সামান্য দূরেই সাদুল্লাহপুর। সেখানেই দেখা গেল এসব দৃশ্য। এই এলাকায় শুধু বিরান জমিতেই নয়, প্রায় প্রতিটা বাড়ির আঙিনাতেই ফুটে আছে গোলাপ। তাই এলাকার নাম হয়ে গেছে গোলাপগ্রাম।

সংহতি ও আদৃতা দুই বন্ধু, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিলেন গোলাপগ্রাম
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শুধু গোলাপই নয়, এখন হলুদ গাঁদা, জারবেরা, ক্যালেন্ডিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান জাতের ফুলের চাষ করা হয়। বেড়াতে এসে অনেকেই বাগানে ঢুকে ছবি তুলতে গিয়ে ফুলগাছের ক্ষতি করেন। তাই গোলাপগ্রামের ফুলের বাগানের চারপাশে হালকা নীল নেটের বেড়া। আশপাশের শিক্ষাথীরা এখানে নিয়মিত বেড়াতে আসেন। ফুলের রিং মাথায় পরে তরুণীরা ছবি তোলেন। রাজধানীর মিরপুর থেকে স্বামী মারুফুল হোসেনকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সদ্য বিবাহিত সুমাইয়া আক্তার। বললেন, ‘যেদিকে তাকাই, সব জায়গাতেই গোলাপ আর গোলাপ। দেখলেই মন ভালো হয় যায়। নিজেকে মনে হচ্ছে গোলাপের রানি।’ বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা গৃহিণী সাদিয়া মির্জার সঙ্গে কথা হলো, ‘রাজধানীতে বেড়ানোর জায়গা নেই। তাই সামান্য দূরে এই গ্রামের স্বাদ নিতে গোলাপগ্রামে আসা।’ শুধু ফুল দেখতে নয়, ফুল কিনতেও এসেছেন তিনি।

এমন সরু পথ ধরেই হেঁটে যেতে হয়
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন সংহতি ও আদ্রিতা। মা–বাবাসহ বাড়ির ছোট–বড় সদস্যকে সঙ্গী করে এসেছেন এই দুজন। অনেকে আবার দুপুরের খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন, এখন সবুজ মাঠে বসে খাচ্ছেন। অনেকটা চড়ুইভাতির মতো। এলাকার মানুষ জায়গাটিকে পরিপাটি আর পরিষ্কার করে রেখেছেন। লেকপাড়সহ পুরো এলাকাটি পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন। ক্লান্ত হয়ে গেলে জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আছে সবুজ ঘাস। একফাঁকে গরম গরম জিলাপি আর সিঙারার স্বাদও নিতে পারেন। আছে ফুচকার টং।

ফুল সংগ্রহ করছেন একজন চাষী
ছবি: ছুটির দিনে

খানিক বাদে বাদে আছে ফুলের দোকান। বাগান থেকে ফুল তুলে এনে এসব দোকান থেকেও বিক্রি হয়। ফুলচাষিরা দিনে দুবার ফুল তোলেন। সকালে ও বিকেলে। ঝুড়িভর্তি ফুল নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের ফুলের বাজারে। সেখান থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পৌঁছে যায় ফুল। গোলাপগ্রামে প্রতিটা গোলাপ পাইকারি ৩ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হয়। অন্য ফুলও ৪ থেকে ১০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়। শুধু ফুলই নয়, জমি থেকে সদ্য তোলা ফুলকপি, শিম, বাঁধাকপি, টমেটো, টক–মিষ্টি বরই, বেল, পেঁপে এমন অনেক কিছুই পাওয়া যায়।

এ সময় গোলাপগ্রামে গেলে হলুদ গাঁদারও দেখা মিলবে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

যেভাবে যাবেন

সদ্য তোলা গোলাপ নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন একজন ফুলচাষী
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঢাকা থেকে নৌকায় যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল একসময়। তবে শীতের শুষ্ক মৌসুমে সেই ব্যবস্থা আর নেই। কারণ, তুরাগ নদ শুকিয়ে চৌচির। বাসে যেতে পারেন। বাস থেকে পরে অটো বা রিকশায়। এরপর পায়ে হেঁটে পুরো গ্রাম ঘুরতে হবে। গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু পথের পাশ ঘেঁষে অসংখ্য গোলাপের বাগান দেখতে পাবেন। ঢাকা থেকে যেতে হলে প্রথমে মিরপুর ১ নম্বর সেকশন গিয়ে বাস বা অটোতে মাজার গেটের কাছে দিয়াবাড়ি মোড়ে নামতে হবে। এই মোড়ের কাছেই দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট বা বিরুলিয়া ব্রিজ। ব্রিজ পার হয়ে পূর্ব দিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত বাইকে করে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রঙিন পরিপাটি মনোরম গোলাপগ্রাম সাদুল্লাহপুর।