পাহাড়, সমুদ্র, জলপ্রপাত, চা-বাগান সবই মিলল সেখানে

আলেপ্পের হাউসবোট
ছবি: লেখক

দক্ষিণ ভারতে ঘুরতে যাওয়ার কথা সেভাবে কখনো ভাবনায় আসেনি। সহকর্মী মহিউদ্দিন নিলয় কেরালা-তামিলনাড়ু যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন শুনে আমিও আগ্রহী হলাম। ইন্টারনেট ঘেঁটে এলাকা সম্পর্কে জানলাম। তখন মনে হতে থাকল, অবশ্যই দক্ষিণ ভারতে যাওয়া উচিত!

গত ডিসেম্বরের গোড়ার কথা। খুব স্বল্প সময়ের সিদ্ধান্তে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করি। প্লেনের টিকিট তখনো কাটা হয়নি। টিকিটের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ভিসা পেতেও দেরি হচ্ছিল। তত দিনে দুনিয়ায় চলে এসেছে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন। ছড়াতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

একসময় ভারতের ভিসা পাই। মোট পাঁচজন। টিকিটের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। করোনার কারণে আর ঘরবন্দী থাকতে ইচ্ছা করছিল না। ‘কী আছে জীবনে’ ভেবে টিকিট কনফার্ম করি। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় চড়ে বসি কলকাতাগামী ফ্লাইটে। কয়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেঙ্গালুরুর ফ্লাইট ধরি।

বেঙ্গালুরু পৌঁছাতে রাত দেড়টা বেজে যায়। হোটেলে ঢুকি দুইটার পর। ক্ষুধায় তখন পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে। হোটেলে আছে শুধু স্যান্ডউইচ। শসা ও টমেটোর সেই খড়খড়ে স্যান্ডউইচ কোনোমতে গলা দিয়ে নামিয়েই ঘুম।

বেঙ্গালুরুর যে হোটেলে ছিলাম, সেখানেই সকালের নাশতা সেরে নিই। ২১০ রুপিতে বুফে ব্রেকফাস্ট। ইডলি, দোসা, সাম্বার, পাঁপড় থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারতীয় কয়েক পদ। সঙ্গে ছিল ইউরোপীয় পদও।

মুন্নারের পাহাড়ে হাতি–পরিবার
ছবি: লেখক

সারা দিন বেঙ্গালুরু শহর ঘুরে রাতেই তামিলনাড়ুর পাহাড়ি শহর ওটির উদ্দেশে রওনা দেব—পরিকল্পনা ছিল এমনই। হোটেলের ক্যাব ভাড়ার চেয়ে উবার সাশ্রয়ী মনে হলো। হোটেল ছেড়ে দিয়ে লাগেজ নিয়ে উঠে পড়ি উবারে। প্রথম গন্তব্য ‘টিপু সুলতান’স সামার প্যালেস’। ১৭৯১ সালে মহীশুরের শাসক টিপু সুলতান বানিয়েছিলেন এই ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য।

উবার চালক মোহাম্মদ বাসিত আসামের ছেলে। বয়স ২৩ থেকে ২৪৷ বাংলা বলতে পারে। বাংলাদেশি যাত্রী পেয়ে মহাখুশি। কৈশোরে বাড়িপালানো বাসিত ১২ বছর ধরে বেঙ্গালুরুতেই থাকে। জীবনের গল্প শোনানোর পাশাপাশি আমাদের ঘুরতে আসার গল্প শুনতেও সে আগ্রহী।

সামার প্যালেস ঘুরতেই দুপুর গড়িয়ে গেল। বাসিত নিয়ে গেল শহরের এক বিখ্যাত রেস্তোরাঁয়। কেউ খেল দক্ষিণ ভারতীয় থালি। কেউ নিয়েছে সবজি খিচুড়ি। সঙ্গে তাজা ফলের জুস ও লাচ্ছি। বেঙ্গালুরুর বোটানিক্যাল গার্ডেন বেশ বড়। হেঁটে পুরো উদ্ভিদ উদ্যান দেখতেই লাগবে কয়েক ঘণ্টা। তাই সন্ধ্যায় ঢুকে পড়ি শহরের বিখ্যাত শপিং মলে। ক্রিসমাসের তখনও তিন থেকে চার দিন বাকি। পুরো শহরেই উৎসবের আমেজ। শপিং মলগুলো সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে সান্তা ক্লজের স্লেজ গাড়ির আদলে।

আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের বাসে ওটি যাওয়ার কথা। উবার চালক বাসিত প্রস্তাব দেয় ওর গাড়িতেই ওটি যাওয়ার। সারা রাত গাড়ি চালিয়ে সকালে পৌঁছে দেবে। উচ্ছল তরুণ বাসিতকে ভালো লেগেছে সবার। তাই সবাই রাজি হয়ে যাই। সন্ধ্যায় শহরের বিখ্যাত মলে কেনাকাটা চলে। রাতের খাওয়ার জন্য বসি বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে ব্যস্ততম রেস্তোরাঁর একটি, সোশ্যালে। আলোছায়ায় বসে তুর্কি কাবাব আর রুটি খেতে খেতে রাতের বেঙ্গালুরু শহর দেখতে ভালোই লাগছিল।

সারা রাত গাড়ি ছুটেছে। গন্তব্য পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা ওটি। সকালের নাশতা সেরে নিই ওটির প্রবেশমুখের এক হোটেলে। পরোটা-সবজি, পুরি-সবজি। সঙ্গে ধোঁয়া-ওঠা এক মগ কফি। হোটেলের বদলে ওটিতে আমরা থাকি এয়ার বিএনবি থেকে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে।

দলেবলে ওটির বোটানিক্যাল গার্ডেনে
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের ওটি ঘোরানোর জন্য বাসিত থেকে যায়। কিশোরবেলার কুছ কুছ হোতা হ্যায়, রাজা হিন্দুস্তানি থেকে হালের বরফির মতো সিনেমায় দেখেছি ওটি শহর। এ শহরকে বলা হয় ‘কুইন অব হিল স্টেশন’। দিন চলে যায় বোটহাউস ও সরকারি রোজ গার্ডেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়। সন্ধ্যা কাটে সমতল থেকে সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত ওটি হিল স্টেশনে। ব্রিটিশ আমলের স্টেশনে সে ছাপ স্পষ্ট।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওটির রাতে আমাদের দেখা হয় বিখ্যাত দাদুর সঙ্গে। কেএফসির এই সফেদ দাদু কোথায় নেই?

ওটি থেকে কেরালার মুন্নারে

পরদিন সকালে ওটি থেকে কেরালার মুন্নারের উদ্দেশে রওনা দিই। এবারও আমাদের সঙ্গী বাসিত ও তার গাড়ি। প্রায় ৯ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা, কিন্তু এতটুকুও ক্লান্তি লাগেনি। প্রকৃতির সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। পথের দুই পাশের পাহাড়, খানিক পরপর ছোট-বড় ঝরনা। মনে হচ্ছিল, এই দৃশ্য ফ্রেমবন্দী করতে পারে—এমন লেন্স এখনো তৈরিই হয়নি।

মুন্নার শহরের কাছাকাছি পৌঁছাতেই সন্ধ্যা নামে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরের দিকে উঠছিলাম, মনে হচ্ছিল, মেঘের ভেতরে ঢুকছি। মেঘের ভেতরে চলছে গাড়ি। মুন্নারকে মনে হচ্ছিল রূপকথার মেঘের শহর।

মুন্নার শহরের ভেতরে নদীর পাশেই আমাদের হোটেল। শহরটা বিখ্যাত চা-বাগানের জন্য। ভোরে ঘুম ভেঙেই চোখে পড়ে হোটেলের পেছনের নয়নাভিরাম চা-বাগান।

মুন্নারের সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্যটনকেন্দ্রটি জিরো পয়েন্ট নামে পরিচিত। মুন্নার শহর থেকে এই জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তার দুই ধারেই চা-বাগান। যত দূর চোখ যায় সবুজ পাতায় মোড়া। আর আচমকা সাক্ষাৎ হয় হাতির পালের সঙ্গে। মুন্নারে বেশ কয়েকটি ড্যাম বা বাঁধ আছে। মাত্তুপেটি ড্যাম নামের জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। এর একপাশে সুবিশাল মাত্তুপেটি লেক, আরেক পাশে পাহাড়। পর্যটকদের জন্য লেকে জেট স্কির ব্যবস্থা আছে।

মুন্নারে কেএফডিসি ফ্লোরিকালচার সেন্টার, যা রোজ গার্ডেন নামেও পরিচিত
ছবি: লেখক

গাড়ি থামে কারমিলাগিরি এলিফ্যান্ট পার্কে। হাতির পিঠে চড়ে ঘোরার সুযোগ মেলে এখানে। পার্কের পাশেই কারমিলাগিরি সিএমআই পাবলিক স্কুলের ক্যাম্পাস। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ফুলবাগানে ঘেরা এই ক্যাম্পাসে ঢুকলে প্রাণ জুড়াতে বাধ্য। শহরের ফেরার পথে পড়ে কেএফডিসি ফ্লোরিকালচার সেন্টার, যা রোজ গার্ডেন নামেও পরিচিত। নানা জাতের বাহারি রঙের ফুলের দেখা মেলে এই বাগানে।

মুন্নার থেকে পরদিন ভোরে রওনা দিয়ে আলেপ্পে যাওয়ার কথা। কিন্তু দূরত্ব কিছুটা কমানোর জন্য সবাই সিদ্ধান্ত নিই, রাতেই মুন্নার থেকে রওনা দেব। হাইওয়ের পাশের কোনো হোটেলে রাতে থাকব। বেশ কয়েক কিলোমিটার চলার পর পথের ধারে একটা হোটেল পাই। সেখানেই রুমের ব্যবস্থা হয়।

পদের নাম আল-ফাহাম

হোটেলের মালিক আবদুস সালাম একসময় মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী ছিলেন। বাংলাদেশের অনেক এলাকার নাম জানেন। সদাহাস্যোজ্জ্বল সালামই আমাদের পরিচয় ঘটালেন আল-ফাহামের সঙ্গে। আল-ফাহাম দক্ষিণ ভারতের নিজস্ব খাবার না হলেও প্রায় সব রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়। আল-ফাহাম হচ্ছে কয়লায় পোড়ানো খাবার। চিকেন আল-ফাহাম বেশি বিখ্যাত। তবে মাছ ও গরুর মাংসের আল-ফাহামও পাওয়া যায়।

আল-ফাহামের সঙ্গে কী খাওয়া যাবে জিজ্ঞাসা করতেই সালামের জবাব, মান্দি আচ্ছা রাহেগা (মান্দি ভালো লাগবে)। মান্দি কী? সালাম কিচেন থেকে এক প্লেট মান্দি রাইস নিয়ে এলেন নমুনা হিসেবে। সোজা ভাষায় মান্দিকে বাসমতী চালের পোলাও বলা যায়। দক্ষিণ ভারতীয়রা আল-ফাহামের সঙ্গে মান্দি খেতে পছন্দ করে। তবে চিকেন আল-ফাহামের সঙ্গে রাইতা দিয়ে পরোটা অথবা চাপাতিই বেশি ভালো লাগে।

কেরালার আথিরাপাল্লি জলপ্রপাত
ছবি: লেখক

হিন্দি সিনেমার বিভিন্ন গানের দৃশ্যের শুটিং হওয়ায় কেরালার আলেপ্পের ব্যাক ওয়াটার হাউসবোট বেশ বিখ্যাত। নৌকাগুলো বেশ ছিমছাম, পরিপাটি। নৌকাগুলো চলে প্যাকেজে। দুপুর ১২টায় ঘাট থেকে যাত্রা শুরু, নদীতে ঘুরে রাতে নৌকাতেই থাকা, পরদিন সকাল নয়টায় ঘাটে নামিয়ে দেয়। কয়েক বেলা নৌকার বাবুর্চির হাতে কেরালার ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ মেলে। মাঝে এক ঘাটে দুপুরের খাবারের বিরতির সময় কেনা হয় রেড স্ন্যাপার।

নদীর দুই পাড়ে সারি সারি কেরালার বিখ্যাত নারকেলগাছ। শান্ত, স্নিগ্ধ নদীর পানি কেটে ছুটে চলে বাহারি নকশার নৌকাগুলো। হাউসবোটে যেদিন ছিলাম, সেদিন ২৪ ডিসেম্বর। ক্রিসমাসের আগের রাত। কেরালায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী মানুষ অনেক। আমাদের এই হাউসবোটের ম্যানেজার, চালক ও বাবুর্চি—তিনজনই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। সন্ধ্যায় ক্রিসমাস কেক এনে আমাদের অবাক করে দেয়। জানায়, এই বোটে প্রথম বাংলাদেশি যাত্রী আমরা। নেচেগেয়ে মাঝরাত পর্যন্ত চলে ক্রিসমাস উদ্‌যাপন।

বাহুবলী জলপ্রপাত

আলেপ্পে থেকে ফোর্ট কোচি দেড় ঘণ্টার যাত্রা। পথে যাত্রাবিরতি আলেপ্পে সমুদ্রসৈকতে। নিরিবিলি পরিবেশে সাগরের গর্জন কানে বাজে দূর থেকেই। ভারত মহাসাগরের এই সৈকত বেশ স্নিগ্ধ।

একসময় ফোর্ট কোচি ছিল পর্তুগিজ কলোনি। ছিমছাম ছোট এই শহরে পর্তুগিজ ঘরানার স্থাপনাই বেশি। এমনই এক স্থাপনার গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ ওল্ড লাইট হাউস বিস্ট্রো। একেবারে সমুদ্রের তীরে। খেতে বসে কানে আসে ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ। সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতেই ফোর্ট কোচি শহর ঘুরে দেখা যায়। রাতে পর্তুগিজ রাইসের সঙ্গে সাগরের তাজা মাছ দিয়ে উদরপূর্তি।

কেরালায় বেশ কিছু ঝরনা আছে। বাহুবলী, গুরুর মতো সিনেমার শুটিং হয়েছে কেরালার আথিরাপাল্লি জলপ্রপাতে। তবে জলপ্রপাতটি এখন ‘বাহুবলী জলপ্রপাত’ নামেই বেশি পরিচিত। আথিরাপাল্লিসহ কয়েকটি ঝরনা দেখতে গাড়ি ভাড়া করি। গাড়ির চালক বেশ সজ্জন লোক। নিজেই সব জায়গার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

লেকের পাড়ে গড়ে ওঠা রামাদা রিসোর্টের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর
ছবি: লেখক

আথিরাপাল্লি থেকে স্বল্প দূরত্বেই ভাজাচাল আর চারপা জলপ্রপাত। একেকটির জলপ্রপাতের সৌন্দর্য একেক রকম। ভাজাচালের উচ্চতা কম হলেও খরস্রোতা। কেরালা শহরে ফেরার পথে চালক গাড়ি থামালেন রাস্তার পাশের এক ধাবায়। কলাপাতা ধুয়ে নিয়ে টেবিলে বসে পড়লাম। মোটা চালের ভাতের সঙ্গে আচার, পাঁপড়, বিন, সবজি আর মুরগির মাংস। প্রতিটি খাবারেই কেরালার নিজস্বতা বোঝা যাচ্ছিল।

‘গডস ওন কান্ট্রি’

নিজেদের মধ্যে হিসাব করে দেখলাম, ট্যুরের নির্ধারিত বাজেটের বেশ কিছু টাকা রয়ে গেছে। সেই ভাবনা থেকে এক রাতের জন্য চলে গেলাম দক্ষিণ কুম্বালাম এলাকার রামাদা রিসোর্টে। পাঁচ তারকা এই রিসোর্ট ইন্টারন্যাশনাল চেইন। করোনার কারণে চলছিল বিশেষ ছাড়। লেকের পাড়ে গড়ে ওঠা রামাদা রিসোর্টের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর।

সন্ধ্যায় দল বেঁধে যাই ফেরার আগের করোনা পরীক্ষা করাতে। সবারই খিদে লেগেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছেই এক বিখ্যাত লেবানিজ কাবাবের রেস্তোরাঁ আছে। কাবাবের স্বাদ অতুলনীয়। মুখে দিতেই গলে যাচ্ছিল।

করোনার রিপোর্ট নিয়ে রীতিমতো ফাইনাল পরীক্ষার মতো টেনশন। সবাই একসঙ্গে ফিরতে পারব তো? রাতে একে একে মেসেজ আসে সবাই নেগেটিভ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মতো অবস্থা। সবাই ফুরফুরে মেজাজেই হোটেলের বুফে নাশতা সারি। রামাদার সুইমিংপুলে কিছুক্ষণ দাপাদাপির পর চেক আউট করে চলে আসি কেরালা শহরের এক হোটেলে।

দিনটি কেনাকাটার জন্য রাখা ছিল। কিন্তু দু-তিনটি শপিং মল ঘুরেও মনমতো কেনাকাটা করা হচ্ছিল না। এবার উদ্ধারে এগিয়ে আসে এক পারফিউম বিক্রেতা। পরামর্শ দেয় ‘পথিজ’-এ যাওয়ার। এটি অনেকটা সুপারশপ গোছের মল। ছয়তলা ভবনে কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে শাড়ি, গয়না, ঘড়ি—সব পাওয়া যায়।

কেনাকাটা শেষে হোটেলে ফিরে বেরিয়ে পড়ি রাতের খাবার পর্ব সারতে। রাস্তার পাশের এক ছোট হোটেলে টুল পেতে বসে সমুদ্রের মাছভাজা খেতে খেতে বিদায়ী আড্ডা চলে। অটোরিকশা নিয়ে চলে যাই কেরালার মেরিন ড্রাইভে। সমুদ্রপাড়ের হিমেল হাওয়ায় বসে মন কেমন যেন উদাস হয়ে যায়।

কেরালাকে বলা হয় ‘গডস ওন কান্ট্রি’। তবে শুধু কেরালা নয়, পুরো দক্ষিণ ভারত ঘুরতে ঘুরতে কথাটা মনের ভেতর গেঁথে যায়। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, চা-বাগান, জলপ্রপাত, হ্রদ—সবকিছুর উপস্থিতি এখানে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মনে থাকবে দক্ষিণ ভারতের মানুষের ব্যবহার।