বিনা পয়সায় বিদেশ ভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব

প্রতীকী ছবি

দেশ–বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর, বিপুলা এই পৃথিবীকে জানার আগ্রহ আছে আমাদের অনেকেরই। এ ইচ্ছেপূরণে অধিকাংশ মানুষের জন্যই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ। ভিসা প্রসেসিং, ফ্লাইটের খরচ, হোটেল ভাড়া, খাওয়াদাওয়াসহ আরও নানা কারণে বিদেশ ভ্রমণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল। কিন্তু আপনি জানেন কি একটু চোখ–কান খোলা রেখে, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু পদক্ষেপ নিলে একেবারেই স্বল্প খরচে, ক্ষেত্রবিশেষে কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব? এখন প্রশ্ন হলো যদি সম্ভব হয়েই থাকে, তাহলে সেটা কীভাবে?

বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ

প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা রকম কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এসব প্রোগ্রাম থেকে নানান বিষয়ে জ্ঞানলাভের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মেশার এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এগুলোর কিছু সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কোনো কোনো প্রোগ্রামে আবার গুনতে হয় মোটা অঙ্কের রেজিস্ট্রেশন ফি। তবে সব প্রোগ্রামেই মেধাবী এবং সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের জন্য কমবেশি স্কলারশিপ বা ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকে, যার আওতায় প্রার্থীকে বিনা মূল্যে অংশগ্রহণের সুযোগ তো দেওয়া হয়ই, উপরন্তু আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, ভিসা প্রসেসিংসহ সব ধরনের খরচ আয়োজক কর্তৃপক্ষ বহন করে। কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খরচ না হলেও, আংশিক খরচ বহন করা হয়। এ ধরনের প্রোগ্রামের সুযোগ সম্পর্কে জানতে চোখ রাখতে পারেন https://www.youthop.com/, https://opportunitydesk.org/, https://opportunitiescorners.info/ ইত্যাদি সাইটে।

বিদেশে পড়াশোনা

প্রতীকী ছবি

আপনি যদি উচ্চশিক্ষার্থে দেশের বাইরে পড়তে যান, তাহলে খুব সহজেই সেই দেশ এবং এর আশপাশের দেশগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, একটা লম্বা সময় ধরে অবস্থান করার ফলে সেখানকার মানুষ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও পাবেন। দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রায়ই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ বা বৃত্তির সুযোগ থাকে। এসব বৃত্তি পেলে টিউশন ফি, ফ্লাইট, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা বিমা ইত্যাদির খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হয় না।

স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি

পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়। এসব কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবকের ফ্লাইট, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদির খরচ কখনো সম্পূর্ণরূপে, কখনো আংশিকভাবে সংস্থার তরফ থেকে বহন করা হয়। এগুলোতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একাধারে মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন, দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং উপরি পাওনা হিসেবে নতুন একটি দেশ ও জাতিকে খুব কাছে থেকে দেখতে ও জানতে পারবেন। তা ছাড়া আপনি যদি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা কোম্পানিতে চাকরি নিতে পারেন তাহলে শুধু বিদেশ ভ্রমণই নয়, বেশ ভালো অঙ্কের অর্থও উপার্জন করতে পারবেন। তবে এসব প্রোগ্রাম, স্কলারশিপ বা চাকরি যা–ই বলি না কেন, এগুলো বেশ প্রতিযোগিতামূলক। শুধু দক্ষ এবং যোগ্য হলেই এগুলোতে টিকে যাওয়া সম্ভব।

স্পন্সরশিপ

আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন কারণে ট্রাভেলারদের স্পন্সর করে থাকে। অর্থাৎ কোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার ভ্রমণের যাবতীয় খরচ দেওয়া হবে, বিনিময়ে আপনাকে তাদের বিজ্ঞাপন করে দিতে হবে। এ ধরনের সুযোগের খোঁজও রাখতে পারেন। সাধারণত একটু জনপ্রিয় ট্রাভেলারদের কোম্পানিগুলো এ ধরনের স্পন্সরশিপের অফার দিয়ে থাকে।

ট্রাভেল ব্লগিং এবং ভ্লগিং

আপনার যদি লেখার হাত ভালো হয়, ভালো ছবি তুলতে পারেন এবং ভিডিওগ্রাফির দক্ষতা থাকে, তাহলে আজ থেকেই আপনার ভ্রমণের গল্প ব্লগিং বা ভ্লগিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরুন সবার সামনে। এতে করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার ব্লগিং বা ভ্লগিং সাইট থেকে আয় করতেও পারবেন। যদি আপনার ব্লগিং বা ভ্লগিং সাইটটি অনেক মানুষ ভিজিট করে অর্থাৎ আপনি জনপ্রিয় হন, তাহলে আপনার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সরশিপ পাওয়াও সহজ হবে।

কাউচসার্ফিং

প্রতীকী ছবি

কাউচসার্ফিং মূলত একটি মোবাইল অ্যাপ। এর মাধ্যমে আপনি কোন দেশে গেলে সেখানে কম খরচে এমনকি বিনা খরচেও থাকতে পারবেন। এ অ্যাপে মূলত হোস্ট এবং সার্ফার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। আপনি যখন কোনো দেশে যাবেন, সেই দেশের কোনো স্থানীয় হোস্টের বাসায় কম খরচে বা বিনা খরচে থাকার সুযোগ করে দেয় কাউচসার্ফিং। তবে কাউচসার্ফিং থেকে হোস্ট সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। ভেরিফায়েড এবং ভালো রিভিউ পাওয়া হোস্টদের কাছে থাকা যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কম খরচের অপশন খুঁজুন

কোথাও বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন কম খরচের অপশনগুলোর সুযোগ নেওয়ার। যেমন প্লেনের টিকিট যত আগে কাটবেন খরচ তত কম পড়বে। দামি হোটেলে না থেকে হোমস্টে বা কাউচসার্ফিংয়ের মতো অপশন বেছে নিন। স্থানীয় খাবারদাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করলেও বিদেশ ভ্রমণের সময় খরচ কমানো সম্ভব। তা ছাড়া কোনো জায়গায় ভ্রমণের আগে সেই জায়গা নিয়ে ভালোমতো পড়াশোনা করে নিন। সেখানকার ম্যাপ, কোন কোন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে আলাদা টিকিট লাগে না বা খরচ কম, কোথায় ছাড় চলছে এগুলোর খোঁজখবর করে গেলে আপনার ভ্রমণের খরচ কমার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার আশঙ্কাও কমবে।

ছবি: পেকজেলসডটকম