যে নৌকার ছবি তুলে সেরা হলেন আরিফ

আলোকচিত্রটির শিরোনাম ‘দ্য স্টোরি অব প্রিজার্ভিং হেরিটেজ’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নদীর পাড়ে সারিবদ্ধ বাঁশ। বাঁশের সঙ্গে বাঁধা একটি নৌকা। সেই নৌকা ঘিরে কাজ করছেন একদল শ্রমিক। আলোকচিত্রী মো. আরিফুজ্জামান–এর ছবিটি গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক্সপোজার ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডসের ট্রাভেল বিভাগে সেরা হয়েছে। ছবির পেছনের গল্প শোনালেন তিনি।

‘দ্য স্টোরি অব প্রিজার্ভিং হেরিটেজ’ নামের ছবিটিছবি: মো. আরিফুজ্জামান

নৌকার নাম ‘মালার’। যেটির সঙ্গে মিশে আছে প্রায় তিন হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই নৌকা সংরক্ষণ করেছে পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘কনটিক’। প্রায় ৯৬ ফুট লম্বা আর ২৩ ফুট প্রস্থের ‘মালার’–এর ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট পাল। নৌকাটি কার্যকর রাখতে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সংস্কারের প্রয়োজন হয়। ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা সংস্কারে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শ্রমিক আছেন পাবনার নগরবাড়ীতে। ২০১৯ সালে সেখানেই নৌকাটি নেওয়া হয় সংস্কারের জন্য।

আরিফ বলেন, ‘আমি এই উদ্যোগের সঙ্গে পেশাগতভাবে যুক্ত আছি প্রায় এক যুগ হলো। পেশগত কাজের বাইরে ২০১৬ সাল থেকে ছবি তুলি। মালার নৌকার ওপরও ছবি তুলেছি আলোকচিত্রী জীবনের শুরু থেকেই। মালার নৌকাটি সংস্কারের খবরে তাই ছুটে যাই নগরবাড়ী ঘাটে। নৌকার সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখার পাশাপাশি প্রামাণ্যচিত্র তৈরিই ছিল উদ্দেশ্য।

পুরস্কার হাতে আলোকচিত্রী মো. আরিফুজ্জামান (মাঝে)
ছবি: সংগৃহীত

‘নগরবাড়ীর যমুনা নদীর পারের একটি চরে রাখা ছিল বিশাল নৌকাটি। প্রায় এক মাস ধরে কাজ চলছে। বাঁশের ছাদ খুলে নতুন করে সংস্কারের কাজ হয়েছে। কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক।

‘শ্রমিকেরা নৌকার ডান পাশে বাঁশ পুঁতে ওপরে উঠছেন। নৌকাটি পানিতে ভাসানো হবে। সে জন্য দড়ি বেঁধে ওপরে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। শ্রমিকদের দুঃসাহসিক ওই কর্মযজ্ঞ দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলাম! তাঁদের কিছু ছবিও তুলি তখন।

‘সংস্কার কর্মযজ্ঞ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের কাজে আমি আরও কয়েকবার হাজির হয়েছি নগরবাড়ী। প্রায় তিন মাস ধরে চলেছে এ সংস্কারপ্রক্রিয়া। পুরো কাজ শেষে নৌকাটা ভাসানো হয়েছে নদীতে, এতে প্রায় ৪০০ শ্রমিক কাজ করেছেন।

‘সেসব ছবি থেকেই ‘দ্য স্টোরি অব প্রিজার্ভিং হেরিটেজ’ শিরোনামের ছবিটি পাঠিয়েছিলাম প্রতিযোগিতায়। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতায় “ট্রাভেল” শাখায় আমার ছবি সেরা হয়েছে। এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে? সেই সঙ্গে আমাকে গর্বিত করেছে আরও একটি ব্যাপার, সেটি হচ্ছে ছবির মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্য ভিনদেশে তুলে ধরতে পারা। এ ব্যাপারে ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঐতিহ্যবাহী নৌকাটি টিকিয়ে রাখতে তিনিই মূল ভূমিকা পালন করেছেন।’