শেষমেশ রক্তরাঙা কুয়াকাটায়

সবাই হয়তো একা হয়ে যায় আলাদা। জীবনের সেই পরতে নিজেকে আবিষ্কার করে। হয়তোবা কখনো নিঃসঙ্গ হয়ে; কখনোবা প্রকৃতি-মুগ্ধতার মৌতাতে প্রণত হতে হতে।

কুয়াকাটা সৈকতছবি: লেখক

জীবন চেয়েছিল জলের ধারাপাতে আলিঙ্গনের স্বাদ। একদিন তার স্বাদ মেটাতে বুঁদ হয়ে আমিও কি চাইনি সোঁদা গন্ধে ভেসে যাওয়ার রাজসিক অবগাহন? নাগরিক বিজ্ঞাপনের জনারণ্য ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে একটু টিপটিপ বৃষ্টিতে স্বস্তির সুবাতাস? চলছিল উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি। অফিস থেকে আগাম বেরিয়ে কোনো এক বৃহস্পতিবার, আয়েশি ভঙ্গিতে সিগারেট টানা শেষ হতে না হতেই মনে হলো এই বিলোল জীবনের গতিপথে পরাজিত সময় চাইছে মুক্তি। ইচ্ছার স্বাধীনতায় যখন পালানোর মন্ত্র, মস্তিষ্কের মেমোরি কার্ড থেকে তখনই পাই সংকেত। তাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ছুটে যাওয়ার নিমন্ত্রণ। সেমতে সামনে এসে দাঁড়ায় একটি ফোরস্ট্রোক সিএনজি। যানজটের ডালপালা ছেঁটে এগোতে এগোতে গাড়িটা ক্রমে আমাকে চিনিয়ে দেয় পুরোনো ঢাকা আর তার বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি।

পুরোনো ঢাকা
ছবি: প্রথম আলো

নদীমাতৃক দেশটিতে পুকুর থাকলে যেমন লাগে পুকুরঘাট, নদী থাকলেও লাগে নদীঘাট। জলই যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকার প্রবেশদ্বার তাই বুঝি নামকরণটা—‘সদরঘাট’। এত দিন নদী দখল আর তীরে গড়ে ওঠা কলকারখানা ও স্থাপনায় বুড়িগঙ্গার প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। সেখানে আজ সারি সারি কৃষ্ণচূড়া আর মাধবীলতা। দৃষ্টিনন্দন হয়ে যেন চোখ কাবু করে দিচ্ছে অনন্য পাতাবাহারের সৌন্দর্য। এর মধ্যে নদীঘাটের দিকে নানা রঙের নীড়ে–ফেরা মানুষের ভীড়ভাট্টা। হকার-কুলি, পান-সিগারেট বিক্রেতাদের মধ্যে বাড়তি মুনাফার হাতছানি। মধ্যবয়সী এক সুশ্রী নারী বিক্রি করছেন সদরঘাটের শাহি পান। মোলায়েম কণ্ঠের নিজস্বতায় জানালেন, পানবিলাসী যাত্রীদের জন্য একেকটা খিলিতে তিনি বহু পদের মসলা ব্যবহার করেন। পান মুখে দিলে মুখের ভেতরেই মিলিয়ে যাবে। চিবানোর সময় পিক ফেলার প্রয়োজন পড়বে না। যত চিবানো হবে, ততই মোলায়েম আর বাড়তি স্বাদ আসবে। একজন প্রবীণ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বেশ জোরালো ধাক্কা দিলেন। বোঝা গেল জোরে হাঁটতে গিয়ে তাঁর হাঁটু পায়ের সঙ্গে জুতসই সহযোগিতা করছিল না!

সুন্দরবন, পারাবত, সুরভি, কীর্তনখোলা, অ্যাডভেঞ্চার, মানামি রোমাঞ্চ–জাগানিয়া নামের মতোই জাহাজগুলোও সুন্দর আর প্রশস্ত। ঢাকা থেকে সড়ক আর জলপথ দুভাবেই কুয়াকাটা যাওয়া যায়। জলপথ নিরাপদ আর আনন্দদায়ক। জানা গেল, ঢাকা থেকে প্রতিদিন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে তিন থেকে চারটি জাহাজ পটুয়াখালী ও বরিশালের দিকে ছুটে যায়। ভাড়াও সাশ্রয়ী। রেলপ্রধান এলাকায় বড় হয়েছি, সড়কপথের সঙ্গেও রয়েছে নিবিড় সম্বন্ধ। এর মধ্যে আবার উড়োজাহাজে চড়ে অনেক দেশে উড়ান দিয়েছি। শৈশবে ভরা বর্ষায় উত্তেজনাসমেত নৌকায়ও বসেছি বটে, তবে এক্ষণে মনে হচ্ছে, তা থেকে লঞ্চ বা জাহাজে চড়ার মুগ্ধতা একেবারেই ব্যতিক্রমী।

সদরঘাট
ছবি: প্রথম আলো

আমি নিয়েছি সুরভি নামক জাহাজটির সিঙ্গেল কেবিন। ভেতরে রয়েছে নগদ অর্থমূল্যে খাওয়াদাওয়ার ভরপুর সুব্যবস্থা। গ্রীষ্ম মৌসুম। জাহাজের ডেকে বসেছেন অনেকেই। এখানেই পরিচয় হলো ঢাকার নারিন্দার যুবক ইকবাল হাসানের সঙ্গে। গিটার বাজিয়ে সুর ধরলেন। তাঁর আবার জনাকয়েক বন্ধুবান্ধব। এই দলের পাশেই ক্লান্তির ভারে যাঁরা জাহাজের ডেকে ঝিমাচ্ছিলেন, দেখলাম গলা মেলানোর পাশাপাশি শরীরটাও নাড়িয়ে নিলেন কেউ কেউ। একজন জানালেন, আইয়ুব বাচ্চুর ‘এই রুপালি গিটার ছেড়ে একদিন...’ গানটি মন্দ না! ক্ল্যাসিক না হলেও সর্বজনীন আবেদন তো রয়েইছে।

অন্য পাশে তাকাই। গভীর রাত অথচ মার্বেলের মতো চোখ নিয়ে কতিপয় যুবক রীতিমতো আসন গেড়ে জেগে আছেন যোগাসনের ভঙ্গিতে। মনে হলো তাঁরা সবাই কিছুক্ষণ আগেও ছিলেন পরস্পরের অপরিচিত; তাস পেটাতে পেটাতে হয়েছে বন্ধুত্ব। ওখান থেকে পান-সিগারেট শেয়ার হচ্ছে দিব্যি, পরে হয়তো টাকাপয়সার লেনদেনেও গড়াতে পারে সম্পর্কগুলো। সিঁড়ির তলদেশে দেখা গেল শ্যামবর্ণ, ব্রণজর্জরিত কিছু যুবতীর সঙ্গে, যাঁরা কিনা আইশ্যাডো, লিপস্টিক, কাজল, মাসকারায় সুসজ্জিত হয়ে জুতসই খদ্দের খুঁজছেন। মধ্যরাতপ্রেমী এই আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে, জীবননাটকের পরতে পরতে কী বিচিত্র রোমাঞ্চ! পথ ভিন্ন হলেও এখানে ভিক্ষুক, যৌনকর্মী, হিজড়া, উকিল, ডাক্তার, প্রকৌশলী, করপোরেট ব্যবসায়ী—জীবিকার আগুনে দগ্ধ হতে হতে সবাই একেকজন পাকা অভিনেতা। এই যুদ্ধে সবারই লক্ষ্য জুতসই খদ্দের। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবাই চাইছেন প্রতিক্ষণ আপডেটেট থাকতে।

বরিশাল শহর
ছবি: লেখক

আঁধার চিরে সে মুহূর্তে সূর্যোদয়। ভোরের আকাশে এক স্নিগ্ধ কুসুম। বরিশালে পদার্পণ। লঞ্চ টার্মিনালে নেমে বুক ধড়ফড় করল না, বরং প্রশান্তির হিমেল বাতাসে শরীর হয়ে উঠল চাঙা। খুঁজে পেলাম ইজিবাইকে চড়ে বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘বলাকা’। ইজিবাইকচালক মোস্তফা জানালেন, বিভাগীয় শহর হলেও বরিশালে বহুতল ভবন হাতে গোনা। এখানে এখনো প্রাতর্ভ্রমণে বের হলে পুকুরগুলোয় শাপলা আর পদ্মফুলের সহাবস্থান দেখে নয়ন জুড়ানো যায়।

বাড়িগুলো দেখেছিলাম আর মনে পড়ছিল বিখ্যাত কবি সৈয়দ আলী আহসানের ‘আমার পূর্ব বাংলা’ কবিতাটি। প্রতিটি বাড়ির সামনেই সুপরিসর আঙিনা। যানজট নেই, সুনসান নীরবতার শহর। রাস্তা থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখতে পাই বাড়ির সামনের ন্যাড়া উঠোনটায় শিউলিগাছে বসে একটি দোয়েল আপন মনে শিস দিচ্ছে। চোখে পড়ছিল মোড়ে মোড়ে প্রচুর মিষ্টির দোকান। কিছুসংখ্যক লুচি, সঙ্গে সবজি, ডাল ও পায়েসের আলাদা পদ। যাকে এই অঞ্চলে থালি বলা হয়। তবে নেপালি থালির মতো গুণগত মানে অতটা সুস্বাদু নয়। যথারীতি রসনাবিলাস সেরে বাইরে দাঁড়িয়ে আগন্তুকের চোখ দিয়ে জীবনানন্দের প্রিয় শহরটাকে পরখ করে নিচ্ছি। মনে হলো, বহু সময় ধরে আমার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার পর প্রবীণ লোকটি আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলেন না। মুচকি হেসে জানতে চাইলেন, ‘আমনে হাঁ কইররা তাহায়ে কিহ দেহেন? আমনে কি এ হওরে নয়া? পথাম আইলেন? আমনের বাড়ি কহানে?’

বরিশাল লঞ্চঘাটে লেখক
ছবি: লেখক

অবশ্য এই অভিজ্ঞতা আমার নতুন নয়। আমার তাকানোর ভঙ্গিই লোকজনের সন্দেহ উসকে দিতে যথেষ্ট। আমার হেতুবাদ শ্রবণের পরে অবশ্য তিনি বেশ লজ্জিত হলেন! এবং অভিভাবকত্ব নিয়ে পটুয়াখালী যাওয়ার সহজ উপায়ও বাতলে দিলেন। স্থানীয় লোকদের ভাষাভঙ্গিতে বিনোদনের পাশাপাশি যুগপৎ আন্তরিকতাও অনুভব করলাম। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে যেতে দুটো ফেরি অতিক্রম করলাম। রাস্তা অসাধারণ মসৃণ। ঝকঝকে।

আতপ্ত দুই চোখ পুড়ছে। মধ্যাহ্ন শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। স্থানীয় লোকজনের মনে কৌতূহলমিশ্রিত আনন্দের তুফান। ট্যুরিজমকেন্দ্রিক শ্রমজীবীরা বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। আয়–রোজগারের আশায়। শত শত নীরব মানুষে রাস্তা জনাকীর্ণ। লাগেজ বা বোঁচকা-বুঁচকির মতোই সোনামণিরা শহুরে স্মার্ট নারীদের কোলেকাঁখে সুযোগমতো চড়ে বসেছে। লাগেজ সংগ্রহের নিমিত্তে প্রচণ্ড তৎপরতা, পরিবারের পুরুষসঙ্গীরা বিলাসবহুল এসি বাস থেকে লাফিয়ে নেমে আগেই কর্তৃত্বের আজান দিয়ে রেখেছেন। স্বঘোষিত উন্মাদনা থেকে খানিকটা করে এগিয়ে এসে মেহমানদের স্বাগত জানিয়ে কুকুরগুলো আবার ফিরে যাচ্ছে প্রভুর আস্তানার দিকে। যাত্রীবোঝাই রিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস নানা ব্র্যান্ডের। তার সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা সাকুরা পরিবহন—রাস্তায় মোড়ে নাটকীয় যানজট তৈরি করেছে। প্রকৃত বয়ানে এখনকার চিত্রকল্পটি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার। যেটা কিনা দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে ওঠা সুবিখ্যাত বিচ নগরী। বলা হয় উপমহাদেশে এটাই একমাত্র বিচ, যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই পরিপূর্ণতায় উপভোগ্য। পর্যটকদের জন্য সারা বছর ধরে অবিশ্রাম বিনোদন জোগানো, সাগরকন্যা কুয়াকাটার গ্রামের বাড়ির নাম কিন্তু লতাচাপলী।

কুয়াকাটা সৈকতে লেখক
ছবি: লেখক

বেলা তিনটার পর থেকেই সমুদ্রের ধারের ভিড়টা গাঢ় হতে দেখা যায়। উৎসাহ সূর্যাস্ত দেখার। সূর্যাস্তে নত হওয়ার। তখনো থামে না সমুদ্রস্নানের হর্ষধ্বনি। হইচই। দিনভর তারই সঙ্গে ডিএসএলআর নিয়ে তাল মেলাচ্ছেন কুয়াকাটার ভাড়াটে শৌখিন ফটোগ্রাফাররা। নীল জলের মধ্যে মডেল হওয়ার যাবতীয় কসরত দেখিয়ে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত বাজিমাত করে ছবি তুলে দিচ্ছেন। আবার সন্ধ্যার পসরায়ও গাইড হিসেবে সঙ্গী হচ্ছেন। সেসবের ফাঁক গলে কখন যেন জলের কাছে প্রণত হয় সূর্যটা। সোনালি বালুর সমুদ্রসৈকত কিছুক্ষণের জন্য গোধূলির আলোর ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে কুসুমরঙা। ঢেউ-উন্মাতাল সেই নীলাভ সমুদ্র তখন বড় বেশি অচেনা। চাতক পাখির মতো ফ্রেমপ্রেমীরা দুপুর শেষের আগে থেকেই ক্যামেরা-ট্রাইপড নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এখনকার ছবিওয়ালাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে লাল কাঁকড়ারাও অন্যতম। সমুদ্রের পাড়ে এই কাঁকড়াদের লুকোচুরি-নৃত্য আর সেটা ধরতে অপেক্ষায় থাকা নতুন যুগের ক্যামেরার কবিদের যুযুধানে অনায়াসে গড়িয়ে যায় সময়।

১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নৈসর্গিক সৈকত ছাড়াও সীমা বৌদ্ধমন্দির, রাখাইনপল্লি, ক্রাব আইল্যান্ড, গঙ্গামতির জঙ্গল, ফাতরার বন, কেরানিপাড়া, লেবুরচর, শুঁটকিপল্লি, বিখ্যাত সেই কুয়া, যার নামানুসারে আজকের কুয়াকাটা। চোখের সামনে ভাসছিল স্থাপত্যসমূহ। সন্ধ্যায় যখন সূর্যাস্ত নিবিড়, তখন চোখ ফেরানো দায়! নীল জলে এত কারুকাজ। এত সুন্দর ঘোরলাগা প্রকৃতি! যেন মানুষের বিচিত্র আকাঙ্ক্ষার মধ্যে লালিমা ছড়িয়েই শান্ত হচ্ছে না; সব প্রাণে অনুভূতির জোয়ার বাঁচিয়ে রেখে আত্মপ্রেমের অনুশীলনও তাঁর নিত্যদিনের ধর্ম!

কুয়াকাটায় সুর্যোদয়
ছবি: লেখক

রাতে যখন সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন অদূরে মাছ দ্বারা তৈরি মসলাযুক্ত খাবারের ঘ্রাণও নাকে এসে তীব্রভাবে হামলে পড়ছিল। আর বালুরাশির ওপর ছড়ানো পরিত্যক্ত সাদা ঝিনুকের ওপর জোছনার আলোয় পা ফেলাটাও অন্য রকম এক দ্যোতনা। সে সুখ পিচঢালা নিয়ন আলোয় কখনোই পাওয়া যাবে না। সমুদ্র নিয়ে মৌসুমী ভৌমিকের একটি গান আছে, নাম ‘স্বপ্ন দেখব বলে’। আধো অন্ধকারে ঢাকা থেকে আগত উদ্দাম যুবকেরা খালি গলায় সেই লিরিকে ঝংকার তোলার চেষ্টা করছেন—‘আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ/ আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনাবালি তীর ধরে বহুদূর বহুদূর হেঁটে এসেছ।’

বিচে ছড়িয়ে ছিল সারি সারি কাঠের বিছানা আর ছাতা। ডাব বিক্রেতা লাল মিয়ার সঙ্গে ডাব খেতে গিয়ে সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি জানান, রাতের বেলা সমুদ্রের গর্জন ভীষণ ভয়ংকর, মনে হয় যেন কেউ তেড়েফুঁড়ে আসছে! যদিও এটা আসলে প্রকৃতিরই প্রকাশিত সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্যের মোহ বড় সর্বগ্রাসী। সেই মোহে পড়ে তিনি এই সৈকতেই কাটিয়ে দিলেন একটানা ২৮ বছর। এরপর তিনি আমার সঙ্গে ভোরে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার চুক্তিতে আবদ্ধ হলেন।

হোটেল নীলাঞ্জনা থেকে খুব ভোরে কড়া নাড়ার শব্দে জেগে উঠলাম। ছুটলাম ঝাউগাছের সারিতে মোড়ানো ঝাউগাছতলায়। চরাচরের প্রার্থনাসংগীত ভেঙে সূর্যটা যখন উঠবে উঠবে বলে উঁকি দিচ্ছিল; তখন মনে হচ্ছিল এ যেন আগুনে ঝলসে যাওয়া ফুলন্ত এক বেলুন। নিপুণ শিল্পকর্মে সোনায় মোড়া যার গোলাকার বৃত্ত। জ্বলন্ত জৌলুশের লাল। পৃথিবীর বুকে বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে মুছে দিতে চায় সমস্ত বিষাদ। অপার্থিব মুগ্ধতা উদ্‌যাপনের মুহূর্তে আমি লাল মিয়ার দিকে তাকাই। দেখি, তাঁর তন্দ্রালু চোখে পরমাত্মা খুঁজে পাওয়ার এক আনন্দধ্বনি। জীবনানন্দ মনে পড়ে যায়—
‘আমি থামি
সেও থেমে যায়
সকল লোকের মাঝে ব’সে
আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার পথেই শুধু বাধা?