সয়ডেকের সঙ্গে বাংলাদেশের নৌকার গল্পের কোনো মিল নেই। যোগসূত্র যা আছে, তা খুব ক্ষীণ। তবু গল্প দুটো আমি এক শিরোনামের ভেতরেই রাখছি। কারণ, যোগসূত্র যেটুকু আছে, তা হলো গিদাইন্সক সমুদ্র জাদুঘর। পোল্যান্ডের সমুদ্রবন্দর গিদাইন্সকে আমি বহুবার গিয়েছি। আরও বহুবার সুযোগ পেলে যাব। লাল রঙের ইটে গথিক রীতিতে গড়া গিদাইন্সক পুরোনো শহরকে আমার আদর্শ ইউরোপীয় শহর মনে হয়। পাশে মতওয়াভা রিভারফ্রন্ট থাকায় শহরটির সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়েছে। সেই সৌন্দর্যের গল্প নিশ্চয়ই একদিন করব। আজ প্রথমে বলছি সয়ডেকের গল্প।
সয়ডেক একটি সমুদ্রগামী জাহাজের নাম। ছোট একটি জাহাজ। ৮৭ মিটার লম্বা। সোয়া ১২ মিটার প্রস্থ। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ২৮৫ ফুট বাই ৪১ ফুট। ১৯৪৮ সালে গিদাইন্সক বন্দরে এ জাহাজ বানানো হয়। ওজন ২ হাজার ৬১০ টন। জাহাজটি নির্মাণে তিন লাখের মতো পেরেক ব্যবহার করতে হয়। দুটি স্টিম বয়লার ও একটি চার সিলিন্ডারবিশিষ্ট স্টিম ইঞ্জিন দিয়ে ১ হাজার ৩০০ অশ্বশক্তিতে ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৮ কিলোমিটার। কারিগরি হিসাবে প্রায় ১০ নটিক্যাল মাইল। জাহাজটি প্রধানত কয়লা বহন করত। সেই সময়ে পোল্যান্ডের প্রধান রপ্তানিপণ্য ছিল কয়লা। ইউরোপের অন্যান্য বন্দরে কয়লা খালাস করে কখনো কখনো লোহার আকর বা যৌগ নিয়ে ফিরত। সয়ডেকের প্রথম ক্যাপ্টেন ছিলেন বিগনেভ রিবিয়ানস্কি।
১৯৮০–এর শেষে জাহাজটি অবসরে যায় এবং ১৯৮৫ থেকে জাহাজটি গিদাইন্সক মেরিটাইম মিউজিয়াম বা সমুদ্র জাদুঘরের অংশ হয়ে যায়।
এখন গিদাইন্সক গেলে পুরোনো শহর লাগোয়া মতওয়াভা নদীর কাছাকাছি এলেই চোখে পড়বে সয়ডেক। গিদাইন্সকে আমার প্রথম সফরের সময় দূর থেকে সয়ডেকের ছবি তুলেই সন্তুষ্ট থেকেছি। তখন এটিকে সাধারণ একটা জাহাজই মনে হয়েছে।
দ্বিতীয়বার সমুদ্র জাদুঘরে গিয়ে জেনেছি, সয়ডেক জাহাজটিও জাদুঘরের অংশ। ফলে সয়ডেকে উঠেছি। ছবি তুলেছি। সেবারে আমি একজন গাইড ভাড়া করেছিলাম এক দিনের জন্য। ভিক্টোরিয়া উলমা। তাঁকে ১০০ ডলার দিতে হয়েছে।
সয়ডেকের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। পোলিশ শিপইয়ার্ডে তৈরি প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ এটি। ১৯৪৭ সালে গিদাইন্সক শিপইয়ার্ড স্থাপিত হয়। আগের বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি জার্মান শিপইয়ার্ড মিলে পোলিশ সরকার এ শিপইয়ার্ড গড়ে তোলে। ২০ বছর পর এর নাম বদলে ভ্লাদিমির লেনিন শিপইয়ার্ড রাখে। ১৯৮০–তে এখানেই সলিডারিটি আন্দোলন গড়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় লেনিন শিপইয়ার্ডের মৃত্যু হয়। সেখানে এখন ইউরোপিয়ান সলিডারিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অদূরে রেমোনতোভা নামে ব্যক্তিগত খাতে শিপইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। আর সয়ডেক হয়ে গেছে জাদুঘর।
সয়ডেকের ডিজাইন করেছিলেন সম্ভবত পোলিশ প্রকৌশলী হেনরিখ গিয়েলজিক। যদিও জাদুঘরের তথ্যমতে, সয়ডেক নির্মিত হয়েছে সাবেক নৌবাহিনী কর্মকর্তা ইয়ার্জি ভয়চেক দুরফরর নেতৃত্বে। গাইড ভিক্টোরিয়া উলমা জাদুঘরের তথ্যের বাইরে অতিরিক্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। কিন্তু জাহাজের নামকরণ নিয়ে যে গল্প তিনি আমাদের বলেছেন, তা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক।
নির্মাণের পর সবাই ধারণা করেছিল, কমিউনিস্ট পার্টির স্থানীয় কোনো নেতা, জাতীয় কোনো নেতা, এমনকি সোভিয়েত নেতাদের নামে জাহাজটির নামকরণ হতে পারে। শিপইয়ার্ডের প্রস্তুতিও সে রকম ছিল। ভিক্টোরিয়ার মতে, কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক শিপইয়ার্ড পরিদর্শনে এসে নামকরণের প্রস্তাব শুনে বলে উঠলেন, ‘না না, কমিউনিস্টরা সবকিছু করে শ্রমিকদের জন্য। এখানে আমার বা অন্য কারও নাম বসতে পারে না। এসবই শ্রমিকদের।’
এই বলে তিনি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিপইয়ার্ডের এক শ্রমিককে সামনে টেনে এনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কমরেড, নাম কী?’
শ্রমিকটি বললেন, ‘সয়ডেক।’
সম্পাদক সবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘সয়ডেক। জাহাজটির নাম হবে সয়ডেক। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। দুনিয়ার মজদুর এক হও।’
তাঁর এই ক্যারিশম্যাটিক আচরণে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কিন্তু সেইসঙ্গে চূড়ান্ত হয়ে গেল জাহাজের নাম। গাইডের কথায় আমি রোমাঞ্চিত হলাম। কিন্তু পরে জাদুঘরে গিয়ে একটু ভিন্ন তথ্য পেলাম।
কমিউনিস্ট পার্টি অবশ্যই স্থানীয় কোনো শ্রমিকের নামে জাহাজের নামকরণ করতে চেয়েছিল। এতে কমিউনিস্ট শাসনের প্রতি শ্রমিকদের আস্থা ও অনুরাগ বাড়ত। কিন্তু সয়ডেককে দ্বৈবচয়নে টেনে নেওয়া হয়নি। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং সোভিয়েত–বলয়ে শ্রমিকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য উৎপাদনে ভূমিকা বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ শ্রমিককে ‘উদারনিক’ উপাধিতে ভূষিত করা হতো। পোল্যান্ডে বলা হতো ‘জদবনিক প্রাসি’—আদর্শ শ্রমিক। স্তানিস্ল সয়ডেক ছিলেন গিদাইন্সক শিপইয়ার্ডের উদারনিক। সুতরাং যোগ্যতার বলেই সয়ডেককে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
জাদুঘরে সে সময়ের একটা পত্রিকার কাটিং পেয়েছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে, স্তানিস্ল সয়ডেক তাঁর স্ত্রী হেলেনাসহ জাহাজটির সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেলেনা নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাজটির গডমাদার।
এটি একটি খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্য। নামকরণের সময় গডফাদার ও গডমাদার নির্ধারণ করতে হয়। মূলত মানুষের বেলায় এ রকম ঘটে। কিন্তু নামকরণ বলে কথা। তাই জাহাজের নামকরণেই–বা এই ঐতিহ্য বাদ যাবে কেন! উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন পুরোহিতকে রাখা হয় এই ঐতিহ্য অনুসরণ করতে।
পেপার কাটিংয়ের ছবিটি সম্ভবত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। আরও জানা যায় যে সয়ডেকের নামে এর আগেও ভিন্ন একটি জাহাজ নামকরণের চেষ্টা হয়েছিল স্তেচিন শিপইয়ার্ডে। এর মানে সয়ডেক একেবারে অখ্যাত কেউ ছিলেন না।
জাতীয় সমুদ্র জাদুঘরের অনেকগুলো অংশ। একসঙ্গে টিকিট কাটলে ফেরি দিয়ে মতওয়াভা নদী পারাপারের ব্যবস্থা করে দেয়। আমি তা–ই করেছি। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয় দিন জাদুঘর খোলা থাকে। সব কটি একসঙ্গে দেখার টিকিট কাটলে ৩৫ জুয়োতি লাগে। টিকিট বহাল থাকে দুই দিন।
ফেরি দিয়ে নদীর ওপারে গিয়ে আমি দ্রুত সয়ডেকে উঠে পড়ি। জাহাজটির প্রতিটি অংশ এখন উন্মুক্ত পর্যটকদের জন্য। ইঞ্জিনরুমটি নিচে। প্রথমে সেখানে গেলাম। এরপর ওপরে ক্যাপ্টেনের ডেকে। সেখানে দাঁড়িয়ে অনেকগুলো ছবি তুললাম। প্রথম দিকে জাহাজটিতে কোনো রাডার ছিল না। ক্যাপ্টেনের ডেক থেকে একটি পাইপ চলে গেছে ইঞ্জিনরুম পর্যন্ত। সাউন্ড পাইপ। সে সময়ে এই পাইপের মাধ্যমেই ক্যাপ্টেন যোগাযোগ রাখতেন ইঞ্জিনরুমের সঙ্গে। আজ এসব ইতিহাসের সাক্ষী।
জাহাজের মাস্তুলে পতাকা লাগানো। পোল্যান্ডের পতাকা ছাড়া আরও একটি পতাকা ছিল। বোধ করি, জাহাজের নিজস্ব পতাকা। ১৯৪৯ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত জাহাজটি মোট ১ হাজার ৪৭৯ বার সমুদ্রে যায়, ৩৫ লাখ টন মালামাল পরিবহন করে, ৬০টির বেশি পোতাশ্রয়ে নোঙ্গর করে।
বয়লারের চিমনি এখন একটি দর্শনীয় বস্তু। অনেকগুলো ছবি তুললাম। সয়ডেকের ওপর দাঁড়ালে মতওয়াভা নদীর দুই পাশের ছবিই সুন্দর আসে। সেই গেট হাউস, যার ছবি গিদাইন্সকের প্রায় সব স্যুভেনির, ভিউ কার্ড আর রেফ্রিজারেটর ম্যাগনেটে দেখা যায়; তা সয়ডেকের ওপর থেকে সুন্দর একটি কোণে দৃশ্যমান। একইভাবে দৃশ্যমান অধুনা স্থাপিত এক ফেরিস হুইল।
মতওয়াভা নদী, গ্র্যানারি বা শস্যভান্ডারগুলো, বাল্টিক ফিলহারমোনি, সারি সারি টেনেমেন্ট ভবন এবং রংবেরঙের জাহাজ কিংবা পানিতে এসবের প্রতিবিম্ব—সবকিছুই অসম্ভব রকমের আলোকচিত্রনন্দন।
সয়ডেক জাহাজের গায়ে এখনো সাদা হরফে সয়ডেক শব্দটি লেখা। ভিক্টোরিয়া বলেছেন, হয়তোবা সরকার এ জাহাজের নামটি বদলে দেবে। কমিউনিস্ট আমলের সব চিহ্ন যেহেতু সরকার মুছে দিচ্ছে, সয়ডেকও হয়তো রাজনীতির কূটচালে পড়ে হারিয়ে যাবে। ইতিহাসের সাক্ষ্য দিতে হলেও তখন আর কোনো জাহাজকে পাওয়া যাবে না। আমি পাড়ে নেমে সয়ডেককে পেছনে রেখে একটি ছবি তুললাম। ক্যামেরাটা দিলাম গাইডের হাতে। বললাম, ‘কোনোভাবেই যেন সয়ডেক নামটা বাদ না পড়ে।’
মতওয়াভা নদীর পুব পাশে পুরোনো একটা শস্যভান্ডারও এখন সমুদ্র জাদুঘরের শাখা। সেখানে সয়ডেকের মডেল দেখলাম। অনেকগুলো আলোকচিত্র এবং সেই সময়ের পত্রিকার টুকরা দেখলাম। যদিও পোলিশ পত্রিকা, তবু পড়ার বা বোঝার চেষ্টা করলাম। ইতিহাস যেটুকু লেখা আছে, তা–ও পোলিশে। গাইডকে জিজ্ঞেস করে কিছু কিছু জেনে নিচ্ছিলাম। একবার বললাম, ‘আচ্ছা, পোলিশ ভাষার পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা, যেমন ইংরেজি, রাশান বা জার্মান ভাষা নেই কেন? এখানে কি অন্য দেশ থেকে কোনো ট্যুরিস্ট আসে না?’
ভিক্টোরিয়া হেসে বললেন, ‘বিলক্ষণ আসে। তবে অন্য ভাষা লেখা থাকলে হয়তো আমাদের মতো গাইডদের আর কেউ খুঁজত না।’
এরপর হাসি থামিয়ে বললেন, ‘ওই পারের নৌকা জাদুঘরটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থে সংস্কার করা হয়েছে। ওখানে পোলিশ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদ আছে। এখানেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেদিন টাকা দেবে, সেদিন ইংরেজি ভাষাও আসবে।’
ফেরিতে উঠে গেলাম আবার। এবারে যে পাশ থেকে এসেছিলাম, সেই পারে ফিরব। মতওয়াভা নদীতে ছোট ছোট অনেক জাহাজ। কোনো কোনো জাহাজ পর্যটকদের নিয়ে কাছাকাছি শহরে যায়। সুইডেন আর ফিনল্যান্ডেও যায়। নদীর দুই পাশে এখন অজস্র হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর স্যুভেনিরের দোকান। নদীর পানিতে এগুলোর প্রতিফলনে অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছে। ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক চলতেই থাকে। কিন্তু ফেরি খুব বেশি সময় দেয় না। এপাড় থেকে ওপাড়ে পৌঁছাতে তিন মিনিটও লাগে না। পাড়ে উঠে আমি হেঁটে যাই বোট মিউজিয়াম বা নৌকা জাদুঘরে।
গিদাইন্সক বা ইউরোপের অন্যান্য শহরে একটি ভবনের সংলগ্ন হয়ে আরেকটি ভবন তৈরি হয়। এ রকম বাড়িঘরকে টেনেমেন্ট হাউস বলে। চার-পাঁচটা টেনেমেন্ট হাউস মিলে নৌকা জাদুঘর। কাউন্টারে টিকিট দেখাতেই ভেতর থেকে স্বয়ং কিউরেটর বের হয়ে এলেন এবং জানালেন যে তিনিই আমাকে গাইড করবেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হওয়ায় এ বাড়তি সম্মান। আমি বললাম, ‘আমি একজন সাধারণ পর্যটক হিসেবেই এসেছি। কোথাও আমার পরিচয়ও দিইনি। সুতরাং তুমি জানলেই–বা কী করে যে আমি একজন রাষ্ট্রদূত।’
আমাকে অবাক করতে কিউরেটর সেদিনের স্থানীয় খবরের কাগজ বের করলেন। প্রথম পাতায় গিদাইন্সক মেয়রের সঙ্গে আমার ছবি। আমি আগের দিন মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আর কোনো প্রশ্ন না করে আমি স্মিত হেসে কিউরেটরের সঙ্গী হলাম।
পাঁচতলার মধ্যে নিচতলা ছাড়া বাকি সব তলা নৌকায় ভর্তি। বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রকম নৌকা। আমি প্রশ্ন করার আগেই কিউরেটর আমাকে জানালেন, তিনতলায় গিয়ে বাংলাদেশের নৌকা পাওয়া যাবে। আগেভাগে জানার পরও তিনতলায় গিয়ে যথেষ্ট বিস্মিত হলাম। বাংলাদেশের তিনটি নৌকা। প্রমাণ আকারের নৌকা। আস্ত খেয়ানৌকা। ডিঙিনৌকা। সাম্পান। এর বাইরে বাংলাদেশের আরও বিভিন্ন রকম নৌকার নমুনা–মডেল। কাঠের, বাঁশের, পিতলের—বিভিন্ন রকম। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখা শুরু করলাম। দেখতে দেখতে প্রশ্নও করছি। নৌকাগুলোর পাশে বিবরণ আছে। কোন জায়গার নৌকা, কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে—মোটামুটি সব।
বাংলাদেশের নৌকাগুলো সংগ্রহ করেছেন একজন পোলিশ নাবিক, স্টেফান ব্রাগলেভিচ। তিনি পোলিশ জাহাজ ‘ভাইসি’ নিয়ে ১৯৭৮ সালে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলেন। তখন পশুর নদ থেকে দুটি এবং পরে কর্ণফুলী নদী থেকে তৃতীয় নৌকাটি তুলে আনেন। সে বছরই তিনি এগুলো জাদুঘরকে দান করে দেন।
আর বিভিন্ন রকম নৌকার মডেলগুলো দেন জনৈক কোভালস্কি। আমি প্রায় ঘণ্টা দুয়েক কিউরেটরের সঙ্গে থাকলাম। গল্প করলাম। একসঙ্গে কফি খেলাম। তাঁকে জানালাম, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রতীক নৌকা। এ দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭০-এর নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকাকে স্বাধীনতার একটি প্রতীকে রূপান্তরিত করেছেন। ফলে বাংলাদেশে নৌকার একটি রাজনৈতিক অর্থ রয়েছে। নৌকা ও নদী নিয়ে হাজার হাজার গান রয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো চিত্রশিল্পীই নৌকার কোনো না কোনো ছবি এঁকেছেন।
কিউরেটর বুঝছেন, আমি হয়তো আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। একমুহূর্ত পরই তাই জিজ্ঞেস করলাম, কী পরিমাণ দর্শনার্থী এ জাদুঘর দেখতে আসেন? কিউরেটর জানালেন, বছরে ২০ হাজারের বেশি।
ওয়ারশ ফিরে তাঁর জন্য কাঠ, কাপড়, বাঁশ ও পিতলের তৈরি চারটি পৃথক নৌকার মডেল পাঠালাম। চিত্রশিল্পী মুনীরুজ্জামানের আঁকা একটি পেইন্টিংও ছিল—ল্যান্ডস্কেপ। কোনো এক নদীতে তিনটি পালতোলা নৌকা ভেসে আছে। আমি সেটিও প্যাক করে পাঠালাম।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের তিন–তিনটি আস্ত নৌকা দেখলে আপনি নিশ্চয়ই নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। আমারও মন ছুটে গেছে বাংলাদেশে। নদীতে। নৌকার গলুইয়ে।
ছবি: লেখক