২ জন মিলে ১ লাখ টাকায় বেড়ানো যায় যে ৫ দেশে

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ঘোরাঘুরির আদর্শ সময়। এরই মধ্যে দেশের মধ্যে কক্সবাজার, সাজেক আর শ্রীমঙ্গল ঘোরা হয়ে গেলে অনেকেই ভাবেন, এবার দেশের বাইরে থেকে ঘুরে এলে কেমন হয়? বছর শেষে পাসপোর্টের পাতায় একটা নতুন সিল যুক্ত হলে দেখতেও ভালো লাগে। তবে বিদেশ ঘোরার কথা ভাবলেই মাথায় ঘুরতে থাকে খরচের হিসাব। এ ছাড়া এখন বিমানভাড়া থেকে হোটেল—সবকিছুর খরচই বাড়তি। আবার একা একা ঘুরতে চান না অনেকেই। একজন সঙ্গী না থাকলে চলে!
দুজন মিলে এক লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে কি বিদেশ ঘুরে আসা সম্ভব? হ্যাঁ, আগেভাগে প্রস্তুতি নিলে সম্ভব। জেনে নিন এমন ৫ দেশের খবর।

১. ভারত

মরুভূমি থেকে শুরু করে বরফ, সবই আছে ভারতে
ছবি: পেক্সেলস

তালিকার প্রথমে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের নাম আসাই স্বাভাবিক। ভিসা ফি খুব বেশি না—৮০০ টাকা। তার ওপর কলকাতা পর্যন্ত চলে যাওয়া যায় সরাসরি বাস বা ট্রেনে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতি খরচ হবে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। ভারতে ঘুরে দেখার জায়গার অভাব নেই। কলকাতাতেই যেমন পেয়ে যাবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জোড়াসাঁকো, হাওড়া ব্রিজ। আবার অন্যদিকে রাজস্থানের জয়পুরে পাবেন গোলাপি শহর, আগ্রায় তাজমহল, শিমলা-মানালির বরফ পাহাড়। এমনকি এ বাজেটেই পৃথিবীর ওপর একটুকরা স্বর্গ—কাশ্মীর ভ্রমণও সম্ভব। তাই বছরের শেষে লম্বা ছুটি নিয়ে কম খরচেই ঘুরে আসতে পারেন ভারত।

২. থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডে আছে চোখ জুড়ানো সব দ্বীপ

পর্যটনবান্ধব দেশ হিসেবে থাইল্যান্ডের বেশ সুনাম আছে। চাইলে দুজন মিলে এক লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে থাইল্যান্ডও ঘুরে আসতে পারেন। এজেন্টের মাধ্যমে ভিসা করালে দুজনের খরচ হবে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। দুজনের ফ্লাইটের খরচ পড়বে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার। তবে কম দামে টিকিট পেতে হলে আগেভাগে চেষ্টা করতে হবে। ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলো বেছে নিন। তাহলে দাম কম পড়বে।
টিকিট আর ভিসায় ধরা যাক খরচ হলো ৭০ হাজার টাকা। বাকি ৩০ হাজারে আপনি অন্তত ব্যাংকক ঘুরে দেখতে পারবেনই। পাতায়া, ফুকেট, ক্র্যাবিও হয়তো ঘোরা সম্ভব, সে ক্ষেত্রে একটু টানাটানি পড়ে যেতে পারে।
থাইল্যান্ডের সুবিধা হলো, আপনি এখানে বিলাসবহুল হোটেল যেমন পাবেন, আবার একেবারে কম দামি হোস্টেলও পাবেন। দামি রেস্তোরাঁর খাবার পাবেন, আবার রাস্তার পাশের দোকানের খাবার খেয়েও দিব্যি ২-৩ দিন পার করে দিতে পারবেন। অতএব জীবনসঙ্গী বা একজন বন্ধু সঙ্গে নিয়ে থাইল্যান্ড ঘুরে আসার পরিকল্পনা করতেই পারেন।

৩. নেপাল

নেপালে যেতে হলে শুধু ফরম পূরণ করলেই চলে
ছবি: পেক্সেলস

হিমালয় পর্বতমালার এত কাছাকাছি আমাদের বাস, ভ্রমণপিপাসুরা এ কথা ভেবে কৃতজ্ঞ বোধ করতেই পারেন। স্বচক্ষে হিমালয় দেখতে খুব যে কষ্ট বা খরচ করতে হবে, তা নয়। কাজ শুধু একটা—নেপালের ফ্লাইটের টিকিট কাটা।
বাংলাদেশি নাগরিকেরা নেপালে পা রেখেই ভিসা পেতে পারেন, তাই বাড়তি ঝক্কি পোহাতে হয় না। শুধু আগেভাগে একটা ফরম পূরণ করে রাখলেই হলো। নেপালের ফ্লাইটের খরচ মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। দুজনের জন্য ধরা যাক ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। পৌঁছানোর পরও আপনি চাইলে কম খরচে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে নিতে পারবেন। ঘুরে আসতে পারবেন পোখারা বা নাগরকোট।
তবে নেপালের বৈশিষ্ট্য শুধু পর্বত দেখাতেই নয়। সারা পৃথিবীর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের পছন্দের গন্তব্য এই নেপাল। ত্রিশূলী নদীর স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে র‍্যাফটিং, বাঞ্জি জাম্প কিংবা পৃথিবীর সেরা কিছু পর্বত আরোহণ—সবই পেয়ে যাবেন নেপালে। এসব অ্যাডভেঞ্চার অবশ্য এক লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে দুজন মিলে করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

৪. মালয়েশিয়া

পর্যটকদের কাছে মালয়েশিয়া বেশ প্রিয়
ছবি: পেক্সেলস


পর্যটনের আরেকটি স্বর্গরাজ্য মালয়েশিয়া। রঙিন শহুরে জীবন, নীল সমুদ্রসৈকত, গহিন অরণ্য—কী নেই সেখানে!
৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ করে আপনারা দুজন ভিসা ও বিমানের টিকিট পেয়ে যাবেন। রাজধানী কুয়ালালামপুরেই থাকতে চাইলে কম খরচে হোটেলও পাবেন। স্ট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাত দেশ মালয়েশিয়ায় খাবারের খরচও খুব বেশি না। তাই এক লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে চাইলে দুজন মিলে মালয়েশিয়াও ঘুরতে পারেন।

৫. মালদ্বীপ

মালদ্বীপ মূলত প্রায় ১ হাজার ২০০ দ্বীপ নিয়ে গড়া একটি দ্বীপরাষ্ট্র
ছবি: রয়টার্স

বাজেট ভ্রমণের তালিকায় মালদ্বীপের নাম দেখে অবাক হলেন? অবাক হওয়ার কিছুই নেই, বিলাসবহুল হানিমুনের গন্তব্য মালদ্বীপেও চাইলে পরিমিত খরচে ট্যুর দেওয়া সম্ভব। তবে বাজেটটা এক লাখ টাকায় আটকে রাখা মালদ্বীপের বেলায় বেশ কঠিন। টিকিটের পেছনেই আপনার প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
তবে সুবিধা হলো, বাংলাদেশ থেকে এখন সরাসরি কিছু ফ্লাইট পাওয়া যায় মালদ্বীপের রাজধানী মালের উদ্দেশে। আপনি যদি সুযোগ বুঝে কোনো অফার লুফে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো একটু কমের মধ্যে টিকিট পেয়ে যাবেন। টিকিট পেলে আর তেমন কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারণ, মালদ্বীপেও নেপালের মতোই কোনো ভিসা ফি লাগে না। শুধু আগেভাগে ফরম পূরণ করে নিতে হয়।
এখন আসা যাক থাকা–খাওয়ার হিসাবে। মালদ্বীপ মূলত প্রায় ১ হাজার ২০০ দ্বীপ নিয়ে গড়া একটি দ্বীপরাষ্ট্র। রিসোর্ট দ্বীপগুলো খুবই অভিজাত। কম বাজেটে সেদিকে পা বাড়ানোই সম্ভব নয়। স্থানীয় দ্বীপের ছোটখাটো হোটেলে আপনি হয়তো জায়গা পেয়ে যাবেন। পর্যটন এলাকা থেকে ভেতরের রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম একেবারেই কম। একদম স্থানীয় খাবার পেয়ে যাবেন প্রতি বেলা এক-দুই ডলার খরচ করে।
জীবনের সেরা গল্পগুলো তৈরি হয় অজানা–অচেনা দেশের পথে–ঘাটেই। তাই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনাটা শুরু করে দিন এখনই।