আকাশে সাইক্লিং

সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে গেলাম এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়েছবি: লেখকের সৌজন্যে

অক্টোবরের শুরুটা নেপালে কাটিয়ে এলাম। কাঠমান্ডু ঘুরেছি, গিয়েছি পোখারা। পোখারা থাকতেই একদিন গেলাম পর্বত জেলার পাহাড়ি গ্রাম কুসমায়। লোকাল বাসে আনন্দময় ভ্রমণ। এই কুসমাতেই আছে দ্য ক্লিফ রিসোর্ট। নামের সঙ্গে রিসোর্ট থাকলেও রোমাঞ্চকর নানা কর্মকাণ্ডের জন্যই ক্লিফ পরিচিতি পেয়েছে বেশি। পর্যটকদের জন্য পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বাঞ্জি জাম্পিং, সুইং জাম্প, স্কাই গ্লাইডিং, স্কাই সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা। দ্য ক্লিফের পাহাড়ের নিচে বয়ে গেছে গণ্ডকী নদী। অন্য পাড়ের পাহাড়কে সংযুক্ত করতে নদীর ওপর দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। সব মিলিয়ে দারুণ জায়গা।

আমি এসেছি একা। স্কাই সাইক্লিং করব।

রিসোর্টের অভ্যর্থনাকক্ষে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হলো। জনপ্রতি ফি তিন হাজার নেপালি রুপি। এরপর ঝুলন্ত সেতুতে দুলতে দুলতে চলে গেলাম অন্য পাশের পাহাড়ের চূড়ায়। দুই প্রান্তের পাহাড় সংযোগকারী সুবিশাল ঝুলন্ত সেতুটি যেন রোমাঞ্চের হাতছানি দিল।

দ্য ক্লিফের ওয়েবসাইট বলছে, তাদের স্কাই সাইক্লিং বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ও দীর্ঘতম
ছবি: সংগৃহীত

দ্য ক্লিফের ওয়েবসাইট বলছে, তাদের স্কাই সাইক্লিং বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ও দীর্ঘতম। গণ্ডকী থেকে ২২৮ মিটার ওপর সাইক্লিংয়ের কেব্‌ল। কয়েকটি কেব্‌লে সাইকেল বাঁধা। রোমাঞ্চপ্রিয় ব্যক্তিরা এ সাইকেলে করে অন্য প্রান্ত ঘুরে আবার ফিরে আসেন। এতে পাড়ি দিতে হয় ৬০০ মিটার পথ। সাইকেলসমেত আমাকে রীতিমতো দড়িতে বেঁধে ফেলল।

স্টার্টিং পয়েন্টে সাইকেলে চড়ে তেমন ভয় লাগেনি। একে তো আমার তেমন উচ্চতাভীতি নেই, তার ওপর ‘বাড়াবাড়ি’ নিরাপত্তাব্যবস্থা। সাইকেলে ওঠার আগের তোড়জোড় দেখে মনে হলো, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে তারা। তবে যেই ব্রেক ছেড়ে দিলাম, থরথর করে হাত কাঁপতে শুরু করল। নিচে তাকিয়ে দেখি আপন মনে বয়ে যাচ্ছে নদী, আর ২২৮ মিটার ওপরে শূন্যে ভাসছি আমি। শুরুতে কিছুটা নিচের দিকে নামতে হয় বলে সাইকেলের গতি দ্রুততর হলো। মাঝপথে যাওয়ার পর কমে এল বেগ। এরপর রীতিমতো দাঁড়িয়ে পড়ল। প্যাডেল না মারলে এখন আর এগোনোর উপায় নেই।

রোমাঞ্চকর নানা কর্মকাণ্ডের জন্যই দ্য ক্লিফ পরিচিতি পেয়েছে বেশি
ছবি: সংগৃহীত

আবার নিচে দৃষ্টি দিতেই আঁতকে উঠলাম। মনে হচ্ছিল, কোনো একটা ভুল হলেই ধপাস! ভয়ে প্যাডেল মারার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি। পাশাপাশি দুটি সাইকেল চলে। আমার আগে যিনি শুরু করেছিলেন, তিনি দিব্যি তরতর করে চলে গেলেন। কিছুটা উৎসাহ পেলাম। প্যাডেল মারতে শুরু করলাম। একসময় এ প্রান্তে পৌঁছেও গেলাম। ক্রুরা এগিয়ে এসে সাইকেলটি ঘুরিয়ে দিলেন। আবার প্যাডেল মেরে এগোতে থাকলাম। তবে এবার আর ভয় লাগছে না। ক্রুদের উপদেশ মেনে দৃষ্টি সামনে রেখে এমনভাবে প্যাডেলিং করেছিলাম, মনে হচ্ছিল বাড়ির সামনের রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছি। ফেরার সময়টা বেশ উপভোগ করলাম। শেষ পয়েন্টে পৌঁছে ক্রুদের সঙ্গে বিজয়সূচক চিহ্ন দেখিয়ে রোমাঞ্চের ইতি টানলাম!