শতবর্ষী মোটরবাইক প্রদর্শনীতে যা দেখে এলাম

মোটরবাইক প্রদর্শনীটি ১১০ বছর ধরে ইতালির মিলান শহরে হয়ে আসছে। এবারও ৯ থেকে ১২ নভেম্বর হলো। প্রবেশমূল্য ২১ ইউরো। শতাব্দী প্রাচীন মেলাটির সংক্ষিপ্ত নাম আইকমা, ইংরেজিতে মিলান মোটরসাইকেল শো। মেলার শেষ দিনে গিয়েছিলেন জিসান নাবী

মিলান মোটরসাইকেল শোর শেষ দিনে
ছবি: লেখক

উত্তর ইতালির ছোট শহর বোলজানো থেকে রওনা দিয়েছিলাম, ১৫ কিলোমিটার আসার পর গাড়ির ইঞ্জিনে কিছু গড়বড় হলো। গাড়ির বেগ ১১০ কিলোমিটারের বেশি উঠছিল না। নিকটবর্তী ওয়ার্কশপে গাড়িটি রেখে ট্রেনে রওনা দিলাম। মিলানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বেজে গেল।

রাতটা হোটেলে কাটিয়ে সকাল সকাল আইকমায় পৌঁছে গেলাম। প্রদর্শনীস্থল ছোটখাটো একটা শহরের মতো। মেলায় ঢোকার ছয়টি ফটকেই দীর্ঘ লাইন। অনলাইনে আগেই টিকিট কাটা ছিল, সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। সাড়ে ৯টায় গেট খুলতেই ঢুকতে পারলাম। মেলার শেষ দিন, উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি প্যাভিলিয়নেই অত্যাধুনিক সব উদ্ভাবন।

আমি একজন লং ডিসটেন্স রাইডার (দূরগামী চালক)। কিছুদিন আগে ডুকাটি মনস্টার ছেড়ে ২০১৯ সালের বিএমডব্লিউর জিএস ১২৫০ মডেল বাইকটি কিনেছি। এর আগেই বিএমডব্লিউর নতুন বাইক ‘আর ১৩০০ জিএস’ বাজারে আসে। সেটা দেখার জন্য উন্মুখ ছিলাম। কিন্তু আইকমায় গিয়ে জানতে পারলাম, এ বছর বিএমডব্লিউ আর হার্লে ডেভিডসনের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করেনি, যা মেলার আকর্ষণকে কিছুটা হলেও ক্ষীণ করেছে। যদিও কন্টিনেন্টালের প্যাভিলিয়নে ‘আর ১৩০০ জিএস’ দেখা হলো, তা অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো। আমার ব্যক্তিগতভাবে ডিজাইনটি তেমন একটা মনে ধরেনি, যদিও তারা ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে।

বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে নামকরা সব মোটরবাইক সংস্থা তাদের ২০২৪ সালের মডেলগুলো প্রদর্শন করছিল
ছবি: লেখক

বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে নামকরা সব মোটরবাইক সংস্থা যেমন হোন্ডা, কাওয়াসাকি, ইয়ামাহা, সুজুকি, বেনেল্লি, ডুকাটি তাদের ২০২৪ সালের মডেলগুলো প্রদর্শন করছিল। শুধু তো মোটরবাইকই নয়, গ্লাভস থেকে শুরু করে হেলমেট, লেদার জ্যাকেট, অ্যাকশন ক্যামেরার স্টল—কী ছিল না। আসলে এটি মোটরবাইক–সম্পর্কিত সবকিছুর প্রদর্শনী।

মেলা শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অপেক্ষাকৃত ভিড় কম ছিল। কাওয়াসাকি আর সুজুকির প্যাভিলিয়ন দেখে ফেললাম। লক্ষ করলাম, মেলার একটা বড় অংশ চীনা কোম্পানিগুলোর দখলে। একটি ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলো। তাঁর মতে, মোটরসাইকেলের ভবিষ্যৎ হবে ইলেকট্রিক এবং তা সন্নিকটে।

কিন্তু ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল এখনো কেন সফলতার সন্ধান পায়নি? তার একটি প্রধান কারণ, পেট্রল ইঞ্জিনের প্রতি মোহ আর ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের প্রতি অবিশ্বাস। গ্যাসোলিন ইঞ্জিনের গর্জনের মধ্যে একটি বিশেষ কিছু একটা আছে, যা রাইডারদের উৎসাহিত করে।

মেলাটি ঘুরে দেখতে দেখতে মনে হলো, মোটরসাইকেলশিল্পে প্রবল প্রতিযোগিতা রয়েছে, যা উদ্ভাবনকেও এগিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই উদ্ভাবন গ্রাহক সমাজে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করে ইস্পাত, রাবার, প্লাস্টিক ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যের ওপর। মহামারির সময়ে যার দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া।

কাঁধে প্রায় ১০ কেজি ওজনের ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে ক্লান্তি লাগছিল। প্রতিটা প্যাভিলিয়নের নতুনত্ব সেই ক্লান্তি ভুলিয়ে দিল। স্মার্ট ওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১৫ কিলোমিটার হেঁটে ফেলছি। ক্ষুধাও পেয়েছে। খাবারের বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান ছিল। প্রতিটিতেই দীর্ঘ সারি। একটাতে কায়দা করে ঢুকে কাবাব আর আলু ভাজা খেয়ে নিলাম।

এরপর আরও ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে সরাসরি বোলজানো ফেরার বাসের জন্য অপেক্ষা।