কনকনে শীতে ভ্রমণে যাচ্ছেন? সতেজ থাকতে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন

ছকে বাঁধা জীবন থেকে ছুটি নিয়ে প্রকৃতির কোলে আয়েশি অবসর কাটাতে কিংবা রোমাঞ্চকর কোনো অভিযানে অনেকেই বেরিয়ে পড়ছেন এখন। মনকে চনমনে করে তোলার দারুণ এক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে এই ভ্রমণ। তবে সুস্থতার দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানি আর ফলমূল খেতে ভোলা যাবে না। ত্বকের সুস্থতায় প্রয়োজনীয় কিছু অনুষঙ্গও ভ্রমণের সময় কাছে রাখা উচিত। রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচির সঙ্গে কথা বলে আরও জানাচ্ছেন রাফিয়া আলম

মনকে চনমনে করে তোলার দারুণ এক মাধ্যম ভ্রমণ
ছবি: জুনায়েদ আজিম চৌধুরীর সৌজন্যে

পানি পান

আশপাশের নিরাপদ পানির উৎস খুঁজে বের করুন। প্রয়োজনে সঙ্গে পানির পাত্র রাখুন। পানীয় গ্রহণ করলেও খেয়াল রাখুন, তা নিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি কি না। পানি কিংবা তরল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া না হলে সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়বেন। শীতের সময়টাতেও কিন্তু পানিশূন্যতার ঝুঁকি থাকে। পানিশূন্য অবস্থায় ত্বক হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ।

খাবারদাবার

ভ্রমণে সুস্থ থাকতে খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখতে হবে। সময়মতো খেতে হবে। নিরাপদ খাবার খেতে হবে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে তৈরি করা খাবার গ্রহণ করুন। পথেঘাটে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেয়ে চিনাবাদাম বা কাঠবাদামের মতো শুকনা খাবার সঙ্গে রাখা ভালো। এসব খাবার থেকে পাওয়া ভিটামিন-ই ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যেকোনো খাবার খাওয়ার আগে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিন।

ঘুম

ভ্রমণের সময়টায় ধরাবাঁধা নিয়মের বেড়াজাল নেই। তবে তারপরও কিন্তু এমন কিছু করা উচিত না, পরে যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই যেমন ঘুম। ভ্রমণে গিয়ে হয়তো প্রতিটি মুহূর্তই উপভোগ করতে চান। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, কুয়াশামাখা ভোর, গোধূলির শেষ আলো, শিশিরকণা, পূর্ণিমা, এমনকি ভ্রমণসঙ্গীর সঙ্গে রাতভর আড্ডা—সবই আপনার চাই? তাহলে কিন্তু মুশকিল! ঘুমের জন্য সময় রাখতেই হবে। নইলে সাময়িক ভালো লাগার এই নির্ঘুম সময়ের প্রভাব পড়বে শরীরে। তাই রাতভর আড্ডা কিংবা ডিজিটাল স্ক্রিনে বাড়তি সময় কাটানোর ইচ্ছাকে ‘পাত্তা’ দেবেন না।

আরও পড়ুন
ভ্রমণের সময়টায় ধরাবাঁধা নিয়মের বেড়াজাল নেই। তবে তারপরও কিন্তু এমন কিছু করা উচিত না, পরে যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়
ছবি: সজীব মিয়া

যত্নশীল জীবনযাপন

মশা-মাছি এবং পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত থাকুন। বৈরী আবহাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকুন। বাড়তি পোশাক সঙ্গে রাখুন। মুঠোফোনের ‘শক্তি’ বাঁচাতে গিয়ে আলোর মাত্রা এমন পর্যায়ে নামিয়ে আনা ঠিক না, যাতে চোখে চাপ পড়ে। যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, তার ওপর নির্ভর করে ত্বকের যত্নের ধরনটা ঠিক করতে হয়। যেমন পাহাড়ি এলাকায় গেলে হিম হিম হাওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখুন। অন্যদিকে সমুদ্রের তীরে গেলে কিছুটা গ্রীষ্মকালীন সুরক্ষারও প্রয়োজন পড়ে।

ত্বকের জন্য জরুরি তিনটি বিষয়

ত্বকের সুরক্ষায় পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। টোনার আর ময়েশ্চারাইজারও লাগাতে হবে নিয়মমাফিক। সারা দিনে প্রয়োজনমাফিক ৩-৪ বার মুখ ধুয়ে ফেলুন ফেসওয়াশ দিয়ে। বাইরে কম যাওয়া হলে দুবার মুখ ধোয়াই অবশ্য যথেষ্ট। মুখের ত্বক পরিষ্কারের জন্য কেবল ফেসওয়াশই নয়, স্ক্রাবও সঙ্গে রাখুন। বাইরে ঘোরাঘুরি করলে ২-৩ দিন অন্তর স্ক্রাব করা আবশ্যক। ২-৩ মিনিট স্ক্রাব করাই যথেষ্ট। স্ক্রাবের সঙ্গে যোগ করে নিতে পারেন সমপরিমাণ মৃদু ক্লিনজার।

রোজকার পরিচ্ছন্নতার বিশেষ ধাপ

সারা দিনে একবার মুখের ত্বকের পরিচ্ছন্নতার কাজটি করতে হবে দুই ধাপে (ডাবল ক্লিনজিং)। প্রথম ধাপে অয়েল বেজড কিংবা ক্রিম বেজড পরিষ্কারক মালিশ করে নিন মুখে। এবার তুলার প্যাড দিয়ে মুছে ফেলুন। এরপর ফোম বেজড কিংবা জেল বেজড পরিষ্কারক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। সবশেষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সকালে কিংবা রাতে মুখ ধোয়ার সময় এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

আরও পড়ুন
শীতে ঠোঁটেরও চাই যত্ন
ছবি : সুমন ইউসুফ

রোদ থেকে সুরক্ষা

আমাদের দেশে যেকোনো ঋতুতেই এমন সানস্ক্রিন সামগ্রী বেছে নেওয়া উচিত, যার সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ন্যূনতম ৫০, তা আপনি দেশের যে প্রান্তেই যান না কেন। অন্যান্য ভৌগোলিক অঞ্চলে প্রয়োজনীয় এসপিএফের পরিমাণ কমবেশি হয়। সানস্ক্রিনের আবশ্যকতা নিয়ে নতুনভাবে বলার তেমন কিছু নেই। তবে এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নশীল থাকুন। একবার সানস্ক্রিন সামগ্রী লাগানোর দুই-আড়াই ঘণ্টা পর নতুন করে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। নইলে মলিন দেখায় ত্বক। অর্থাৎ একবার সানস্ক্রিন সামগ্রী প্রয়োগের দুই-আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। চাইলে ফেসওয়াশও ব্যবহার করতে পারেন এই সময়। পানি ব্যবহারের সুযোগ না পেলে অবশ্য ভেজা টিস্যু দারুণ কাজে দেবে। আর প্রয়োজনমাফিক সানগ্লাসও ব্যবহার করুন।

ঠোঁটেরও চাই যত্ন

পেট্রোলিয়াম জেলি রাখুন সঙ্গে, সব সময়। ঠোঁট একটু শুকিয়ে এলেই লাগিয়ে নিন। ঠোঁট খুব বেশি ফেটে গেলে দুধের সরের সঙ্গে সামান্য মধু বা এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন মিনিট পাঁচেক।

হাত-পা-শরীরের জন্য

তেলের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে নিয়ে মালিশ করুন। পানির পরিবর্তে গোলাপজল কিংবা টোনারও যোগ করতে পারেন। ত্বক সুস্থ থাকবে। ত্বক খুব বেশি শুষ্ক প্রকৃতির হলে তেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এ ক্ষেত্রে যতটা তেল নেবেন, পানি, গোলাপজল বা টোনার নেবেন তার অর্ধেক।