পেয়ারার রাজ্যে ভেসে ভেসে

অনেকে নৌকা বোঝাই করে পেয়ারা এনেছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে
ছবি: লেখক

সকালেই পৌঁছেছি ভিমরুলি।

ঝালকাঠির খালপাড়ের বাজারটায় দোকানপাট সবে খুলতে শুরু করেছে। তবে ভাসমান হোটেলের চিত্র কিন্তু ভিন্ন। নাশতার টেবিল পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের আড্ডা-আলাপে সরগরম। বরিশাল শহর থেকে বন্ধুরা মিলে তড়িঘড়ি করে বের হই। নাশতা করা হয়নি। তাই নৌকায় ওঠার আগে ভাসমান হোটেলে ঢুঁ মারা। নাম ভাসমান হলেও হোটেলের অর্ধেকটা কিন্তু ডাঙায়। খালের ওপর পোঁতা গাছের খুঁটিতে হোটেলের পাটাতনের কিছুটা অংশ বলেই ‘ভাসমান’।

আমাদের কথাবার্তায় বরিশাল অঞ্চলের টান। মাঝি বুঝে যান কাছেপিঠের কোথাও থেকেই এসেছি। তাই দরদাম করতে হয় না। ন্যায্য ভাড়ায় মেলে নৌকা।

ভাসমান বাজারে হঠাৎ বৃষ্টি
ছবি: লেখক

পানিতে বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে এগিয়ে চলে নৌকা। দুই ধারে পেয়ারাবাগান। ঝালকাঠির ভিমরুলি ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকাজুড়ে দেশের বৃহত্তম এ পেয়ারাবাগান। বহমান খালের মোহনায় বসে ভাসমান বাজার। অনেকে যাকে থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেটের সঙ্গে তুলনা করেন। এসব ভাসমান বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় হাজার হাজার মণ পেয়ারা।

বাগানের ভেতরে ঢুকে মাঝির সঙ্গে আলাপ জমাই। জানালেন, একসময় ভিমরুলিতে শুধু পেয়ারা বিক্রি হতো। দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসতেন। কয়েক বছর ধরে পর্যটক আসছেন। তাই পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি পর্যটন থেকেও স্থানীয় ব্যক্তিদের আয় হচ্ছে।

দর্শনার্থীদের জন্য পেয়ারাবাগানের মধ্যে পার্কও আছে
ছবি: লেখক

পেয়ারার এ মৌসুম আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত। বর্ষার ভরা খালে আনন্দ খুঁজে পান পর্যটকেরা। সে আনন্দের দেখা পেতেই সরু খাল ধরে এগিয়ে যাই। যেতে যেতে হঠাৎ চোখ পড়ে একটি পার্কের সাইনবোর্ড। পেয়ারাবাগানের মধ্যে পার্ক! কাঠের ঘাটে নৌকা ভেড়াই। নাম—পেয়ারা পার্ক। জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৩০ টাকা। বাগানে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বসার জায়গা। ছোট ছোট ছাউনি দেওয়া কাঠের ঘর, দোলনা আর বাগানের ওপর থেকে তৈরি করা হয়েছে বড় কাঠের সেতু। ঘুরতে আসা মানুষের জন্য বাড়তি আয়োজন। পার্কে প্রবেশ করে দেখি, কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন।

পার্ক থেকে বেরিয়ে ছাতা মাথায় কুড়িয়ানা, ভিমরুলির খালে খালে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। নিস্তব্ধ প্রকৃতি, মাঝেমধ্যে চাষিদের ছোট নৌকা। পেয়ারা ভর্তি করে নিয়ে ছুটছেন বাজারে। ওদিকে আবার ট্রলারে আসা একদল পর্যটককে দেখলাম খালে গোসল করছেন।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খালগুলোয় পর্যটকদের উপস্থিতি কমতে শুরু করে। আমাদেরও ঘাটে পৌঁছে দিলেন মাঝি।