অনলাইনে হোটেল বুকিং দেওয়ার আগে যা জানা দরকার

ঘুরতে যাওয়ার আগে অনলাইনেই এখন সহজে হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং দেওয়া যায়। তবে বুকিং দেওয়ার আগে কয়েকটি প্রশ্নের অন্তত সন্তোষজনক উত্তর মেলা চাই। কীভাবে বুক করব, কোন ওয়েবসাইট বিশ্বাসযোগ্য, কার রিভিউয়ে ভরসা রাখা যায় ইত্যাদি। প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন জুনায়েদ আজিম চৌধুরী

বেরোনোর আগেই হোটেল বুক করে যাওয়া ভালোছবি: প্রথম আলো

ভ্রমণ–পরিকল্পনার বড় একটা অংশজুড়ে থাকে যাতায়াত আর থাকার বিষয়টির সুরাহা। কোন এয়ারলাইনস ভালো হবে, টিকিট বুক করব কীভাবে, কোন হোটেলে গেলে ভালো সুবিধা পাওয়া যাবে—কত প্রশ্ন! যাতায়াতটা যেমন–তেমন হলেও থাকার জন্য নিরাপদ ও মনের মতো হোটেল-রিসোর্টের প্রত্যাশা সবাই করেন। এ ক্ষেত্রে কারও পছন্দ বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা, আবার কারও উদ্দেশ্য সারা দিন ঘোরাফেরা করে শুধু রাতটা কাটানো। তবে প্রয়োজন যেমনই হোক, ভুল অবস্থানে ভুল হোটেল নির্বাচন আপনার ভ্রমণ–পরিকল্পনা বরবাদ করে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারেন অনলাইনের ওপর। কয়েক বছর আগেও হোটেল বুকিংয়ের জন্য বেসরকারি বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির দ্বারস্থ হতে হতো। তাদের ওপর অনিশ্চিত আস্থা রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকত না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন অনলাইনেই ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেশ-বিদেশের হোটেল বুকি করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান বুকিং পদ্ধতিও পর্যটকের হাতের মুঠোয় এনেছে।

যেখানে মিলবে হোটেল-রিসোর্টের খোঁজ

অনলাইনে হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হোটেল রিজার্ভেশন ওয়েবসাইটগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান গোযায়ান (www.gozayaan.com), শেয়ার ট্রিপ (www.sharetrip.net) যেমন আছে, তেমনি আবার বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীন থাকা হোটেলগুলোর খোঁজ মিলবে হোটেলস ডট গভ ডট বিডিতে (hotels.gov.bd)। গোযায়ান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও হোটেল বুকিং সেবা দিয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্ভর করতে পারেন বুকিং (www.booking.com), হোটেলস (www.hotels.com), অ্যাগোডা (www.agoda.com), এক্সপিডিয়া (www.expedia.com), ট্রিপঅ্যাডভাইজর (www.tripadvisor.com) ইত্যাদি ওয়েবসাইটের ওপর। সেই সঙ্গে এয়ারবিএনবির (www.airbnb.com) কথাও মাথায় রাখুন। আরেকটি ব্যাপার হলো, স্থানীয় পর্যায়ে স্থানীয় সেবাদাতাদের কাছে ভালো সুবিধা পাওয়ার কথা। বাংলাদেশের কথা তো হলোই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রয়েছে মেক মাই ট্রিপ, ট্রিভাগো, যাত্রা, গোআইবিবো ইত্যাদি। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও স্থানীয় সেবাদাতাদের গুগলে খুঁজে নিতে পারেন।

রিজার্ভেশন ওয়েবসাইটে হোটেল খোঁজার মূল কারণ এতে একসঙ্গে মেলে অনেকগুলো হোটেলের খোঁজ। কক্ষের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি দামের তুলনাও করা যায়। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। মনে করুন, ১ থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আপনি কক্সবাজারে থাকতে চান, দুজনের জন্য একটা কক্ষ দরকার। গোযায়ানে যদি কক্ষ খুঁজতে চান, তো ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে প্রথমে হোটেল ট্যাব নির্বাচন করতে হবে। এরপর শহরের ঘরে কক্সবাজার, চেক ইন ও আউট যথাক্রমে ১ ও ৩ জানুয়ারি এবং একটি কক্ষ ও দুজন অতিথি উল্লেখ করে খুঁজতে হবে। এরপর তালিকা থেকে অবস্থান, সুবিধা ও দাম বিচার করে আপনার পছন্দমতো কক্ষ বুক করতে পারবেন।

গ্রাহকসেবা সম্পর্কে গোযায়ানের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) ইমামুল ইসলাম বলছিলেন, ‘সব সময় আমাদের কাজের মূল লক্ষ্য থাকে গ্রাহকদের সেরা সেবাটা দেওয়া। তাদের গোযায়ান ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমাদের টিম প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।’

হোটেল–ফ্লাইট বুক করার সুবিধা এখন হাতের মুঠোয়
ছবি: সংগৃহীত
অনলাইনে ফ্লাইট বুকিং: হোটেল বুকিংয়ের মতো অনলাইনে সহজে ফ্লাইটও বুকি করতে পারেন। এয়ারলাইনগুলোর ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবা দিয়ে থাকে। এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ভ্রমণপিপাসুরা থাকেন চিন্তামুক্ত। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ফ্লাইট বুকিং সেবা দেয় গোযায়ান। তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ফ্লাইট বুকিং সেবা দিয়ে। গোযায়ানের ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে সহজে ফ্লাইট বুকি করা যাবে। ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই দেখতে পাবেন গন্তব্য আর যাওয়া–আসার সম্ভাব্য দিন-তারিখ নির্বাচন করার অপশন। এগুলো ঠিক করে দিলে দেখবেন সম্ভাব্য তারিখে আপনার জন্য উপস্থিত সব ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য। এরপর সুযোগ–সুবিধা বিবেচনা করে কেটে নিন টিকিট।

অনলাইনে হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে যা মনে রাখবেন

  • আগেভাগে হোটেল বুক করার চেষ্টা করুন। আর বুকিং চূড়ান্ত করার আগে খুঁটিনাটি যাচাই করতে ভুলবেন না। মনে প্রশ্ন থাকলে ভ্রমণসংক্রান্ত ফেসবুক গ্রুপে ঢুঁ মারতে পারেন।

  • দেশি-বিদেশি অনেক হোটেল বুকিং ওয়েবসাইটে হোটেল বুকি করতে পারেন। আপনি যে ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে হোটেল বুকি করছেন, সেটি বিশ্বস্ত কি না, প্রথমেই তা যাচাই করে নিন। অপরিচিত বা সন্দেহজনক কম পরিচিত ওয়েবসাইটে বুকিং আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনিরাপদ।

  • অনলাইনে হোটেল বুক করার ক্ষেত্রে অবস্থান বিবেচনা করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার কাঙ্ক্ষিত হোটেলটি ঠিক জায়গায় পাচ্ছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করুন। নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলে বা কোনো পর্যটনস্থানে ঘোরার উদ্দেশ্যে গেলে হোটেলটি নির্বাচন করুন তার কাছাকাছি। আর কেনাকাটার উদ্দেশ্য থাকলে বিপণিবিতান এলাকায় হোটেল নেওয়াটাই আরামদায়ক হবে। এ জন্য যেখানে যাচ্ছেন, সেখানকার ঘোরাঘুরির জায়গা ও শপিং এলাকার নাম গুগল করে হোটেলের অবস্থান নির্বাচন করুন। তবে শহরের কেন্দ্রে সচরাচর হোটেলভাড়া তুলনামূলক বেশি হয়। হোটেল নির্বাচনের সময় মেট্রো স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের বিষয়টিও মাথায় রাখুন। এতে ভ্রমণের সময় যাতায়াত খরচ অনেক সাশ্রয়ে করা সম্ভব হবে।

  • ওয়েবসাইটে শুধু ছবি দেখে ভুলবেন না। আকৃষ্ট করার জন্য চমৎকার ছবি দেওয়া হলেও বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। সে জন্য হোটেলটির নামডাক আর অন্যদের রিভিউ আমলে নিতে পারেন। গুগলে ও বুকিং ওয়েবসাইটে আগের অতিথিদের রিভিউ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন। হোটেলের রিভিউ যে সব সময় খাঁটি হবে, তা–ও কিন্তু নয়। সব রিভিউয়ে পাঁচ তারকা, শুধু ইতিবাচক মন্তব্য, রিভিউয়ের সঙ্গে নিজস্ব অভিজ্ঞতার বিস্তারিত না থাকা—এসব ভুয়া রিভিউয়ের লক্ষণ। কোনো রিভিউ প্রথম দেখায় বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে, তা বিশ্বাস করার কোনো বাধ্যবাধকতা আপনার নেই। প্রয়োজনে অনেক রিভিউ দেখে একটা সার্বিক ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন। আবার আপনার ভ্রমণ শেষে বুকিং ওয়েবসাইটে হোটেল সম্পর্কে আপনার রিভিউ লিখুন। এতে অন্যরা উপকৃত হতে পারেন।

  • অনলাইনে হোটেল বুকিং দেওয়ার আগে জেনে নিন কী কী সুযোগ-সুবিধা আপনি পাচ্ছেন। গরম পানির ব্যবস্থা আছে কি না। ওয়াই-ফাই সংযোগ আছে না, নেই। এসব বিষয়ও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করুন। সকালের নাশতা বা অন্য কোনো বেলার খাবার সংযুক্ত কি না, এয়ারকন্ডিশন, সুইমিং পুল, বিমানবন্দরে আনা-নেওয়া, গাড়ি পার্কিং, চেকইন-চেকআউটের সময়, ব্যালকনি আছে কি না জানুন। কোনো কারণে বুকিং বাতিল করলে অর্থ ফেরতের পলিসিসহ পেমেন্ট পলিসিসংক্রান্ত বিষয়গুলো সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করুন। ফ্রি ক্যানসেলেশন করার সুবিধা থাকলে ভালো।

  • অফ সিজনের কথা মাথায় রাখুন। পর্যটকপ্রিয় কোথাও গেলে ছুটিছাটার মৌসুমে চাপ একটু বেশি থাকে, ভাড়াও থাকে বেশি।

  • অনলাইনে হোটেল বুক করার সময় একই হোটেলের রুম ভাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছাড়ের কারণে ভিন্ন হতে পারে। আবার ক্রেডিট কার্ডে হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় ছাড় পাওয়া যায়। ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি থাকতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতারাও বিশেষ গ্রাহকদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব ব্যাপার মাথায় রাখতে পারেন।