দেখতে প্রায় একই রকম মানুষের ছবি তুলে বেড়ান এই আলোকচিত্রী
কানাডীয় ফটোগ্রাফার ফ্রাঁসোয়া ব্রুনেল আচমকা একদিন খেয়াল করলেন তাঁর চেহারার সঙ্গে মিস্টার বিন অভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসনের অদ্ভুত মিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় খেলে গেল দারুণ এক ভাবনা। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা একই চেহারার একাধিক মানুষকে ফ্রেমবন্দী করলে কেমন হয়! যেই ভাবা সেই কাজ। ডপেলগ্যাঞ্জার বা লুক অ্যালাইক মানুষের ছবি তোলা শুরু করলেন ফ্রাঁসোয়া। নিজের এই কর্মযজ্ঞের নাম দিলেন—আই অ্যাম নট আ লুক-অ্যালাইক। ও হ্যাঁ, লুক অ্যালাইক বা ডপেলগ্যাঞ্জার বলতে সেই মানুষদের বোঝায়, যাদের মধ্যে কোনো জৈবিক সম্পর্ক নেই, কিন্তু চেহারায় আছে অদ্ভুত সাদৃশ্য।
১৯৯৯ সালে ডপেলগ্যাঞ্জারদের ছবি তোলা শুরু করেছিলেন ফ্রাঁসোয়া। ২০১৫ সালে এসে দেখা গেল, ২৫০ ছবির সংগ্রহ দাঁড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের ৩০টি শহর থেকে এই মানুষগুলোকে খুঁজে বের করেছেন তিনি। শুরুতে নিজের চারপাশে থাকা মানুষের মুখাবয়ব লক্ষ করতেন। তাদের কারও মধ্যে চেহারাগত সাদৃশ্য পেলে যোগাযোগ করতেন এবং ছবি তুলতেন। কিন্তু আট-নয়জন ডপেলগ্যাঞ্জারের ছবি তোলার পর আর কাউকে পাওয়া গেল না। এরপরই মাথায় আসে গণমাধ্যমের সাহায্য নেওয়ার ভাবনা। ইতিমধ্যে ইন্টারনেটের জয়জয়কার শুরু হয়ে গেছে। প্রচুর সাংবাদিক এবং অবশ্যই ইন্টারনেট—তাঁর এই কর্মসূচিতে দারুণ ভূমিকা রেখেছে।
এই ছবিগুলোর একটি বিশেষত্ব আছে। সব কটি ছবিই সাদা-কালো। এর কারণ হিসেবে ফ্রাঁসোয়া জানান, মূলত মানুষের চেহারার অতিরিক্ত উপাদান এড়ানোর জন্যই তিনি এটি করেছেন। এতে ত্বকের রং বা চুলের রঙের মতো বিসদৃশ ব্যাপারগুলো বাদ দিয়ে কেবল দুজনের মুখের গঠনের মধ্যে থাকা মৌলিক সাদৃশ্যগুলোই উঠে এসেছে।
ফ্রাঁসোয়ার ক্যামেরার সামনে আসার আগে তাঁরা কেউ কাউকে চিনতেন না। হয়তো একজন থাকতেন আরেকজনের চেয়ে শতসহস্র মাইল দূরে। এ প্রকল্প তাঁদের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। ডপেলগ্যাঞ্জারদের মধ্যে কখনো কখনো গড়ে উঠেছে নিবিড় পারস্পরিক সম্পর্ক। যেমন এক ডপেলগ্যাঞ্জার জুটির ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়িয়েছে পারিবারিক পর্যায়েও। ফ্রাঁসোয়া বলেন, জুটির একজন ছিলেন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। মানুষ প্রায়ই ভুল করে অপরজনের কাছে অটোগ্রাফ চাইত। তাঁরা যখন প্রথমবারের মতো ফ্রাঁসোয়ার স্টুডিওতে এলেন, জানতে পারলেন, তাঁদের দুজনের নামের প্রথম অংশ এক। দুজনেরই একই বয়সী দুটি ছেলে আছে। চেহারা এক, নাম এক, পারিবারিক অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিল আছে—আর কী চাই! বাস, জমে গেল বন্ধুত্ব। একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া, আড্ডা দেওয়া—সবই চলতে লাগল।
বর্তমানে এ বিষয়ের ওপর একটি বই নিয়ে কাজ করছেন ফ্রাঁসোয়া ব্রুনেল। বেশ কয়েকজন বিখ্যাত প্রকাশক-সম্পাদক তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে নিজ উদ্যোগে বইটি প্রকাশের চেষ্টা করছেন। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তাঁর এসব ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু তিনি চান, বইটি প্রকাশিত হলে ভালো একটি জাদুঘরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং বেশ বড় পরিসরে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন।
ফিচারশুট ডট কম ও আর্টনেট অবলম্বনে