এই শরতে ঘুরতে যেতে পারেন উপকূলের এসব চর–দ্বীপে

কোলাহলমুক্ত সৈকত, সাগরলতার ঝাড়, জোয়ার-ভাটার খেলা আর রাতে আকাশজোড়া তারার মেলা—সব মিলিয়ে চর-দ্বীপ ঘুরে দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এই শরৎ। আরও জানাচ্ছেন অপু নজরুল

সন্দ্বীপের মতো উপকূলীয় কোনো এলাকায় বেড়াতে যেতে পারেন এই শরতেছবি: এলিজা বিনতে এলাহী

আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা। শহর ছাড়লেই তাজা বাতাসে ভরে ওঠে বুক। দেশের যেকোনো জায়গা ঘোরার জন্যই সময়টা দারুণ। তবে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সেরা গন্তব্য হতে পারে উপকূলীয় দ্বীপ আর চর। বঙ্গোপসাগরের মোহনার এই দ্বীপগুলোকে এককথায় বলা যায়—দক্ষিণের দ্বীপ।

নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার মনপুরা কিংবা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালির মতো প্রাচীন ও সুপরিচিত জনপদের বাইরেও জেগে উঠছে আরও অনেক নতুন চর ও দ্বীপ, যেখানে এখনো স্থায়ী মানববসতি নেই। কিছু জায়গায় আছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য, বন বিভাগের লাগানো গাছ। হয়তো আরও ৫০-১০০ বছর পর মানুষের বসবাসের উপযোগী হবে এসব চর। কী সব নাম—তজুমদ্দিন, হাকিমুদ্দিন, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, শাহবাজপুর, চর মন্তাজ, চর মানিকা, চর কাজল, দেবীর চর, সোনার চর, চর হেয়ার, চর লরেন্স, চর ফ্যালকন। বোঝাই যায় চর জেগে ওঠার পর যেসব সাহসী মানুষ বা তাঁদের অনুচরেরা এসব চরে প্রথম দখল নেন, তাঁদের নামেই নাম। কোনো চরের নামের সঙ্গে মিশে আছে ইংরেজ ও পর্তুগিজ ভূমিপত্তনদাতা বা দস্যুদের ছাপ।

মাছ ধরার প্রস্তুতি
ছবি: অপু নজরুল

বর্ষা শেষের এ সময় সাগরও থাকে অপেক্ষাকৃত শান্ত। ফলে এই সুযোগে বেড়িয়ে আসা যায় কম ভ্রমণকারীর আনাগোনা কিংবা স্থায়ী বসতিহীন কিছু দ্বীপ। ঢাকা থেকে ভোলা বা পটুয়াখালীগামী লঞ্চে সারা রাত ভ্রমণ শেষে ভোরে নেমে পড়তে পারেন চরফ্যাশন, রাঙ্গাবালি বা চর মন্তাজ। সেখান থেকে ভাড়া নৌকায় বাজারসদাই নিয়ে চলে যান কোনো দ্বীপে।

উপকূলে জলযানই ভরসা
ছবি: অপু নজরুল

সেখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সাদা বালুর নির্জন সৈকত। কোথাও ঝাউবন, কোথাও সাগরলতার ঝাড়। জোয়ারের সময় তীব্র সাগরগর্জন, ভাটার সময় ঝিনুকে ভরা তটরেখা। রাতে চাঁদের আলোয় ঝলমলে সৈকত, আকাশজোড়া তারা আর উল্কাপাতের দৃশ্য ভ্রমণকে করে তুলবে অবিস্মরণীয়। চাইলে ঝাউগাছের ছায়াতলে কিংবা সবুজ ঘাসে ছাওয়া খোলা প্রান্তরে ক্যাম্পিংও করা যাবে।

লঞ্চে পারাপার
ছবি: অপু নজরুল

আর ঠিকঠাক বাজারসদাই করে নিয়ে গেলে খাওয়াদাওয়া হতে পারে এ ভ্রমণের বাড়তি আনন্দ। শেষবার আমি যখন গিয়েছি খেয়েছি ইচ্ছামতো—রাজহাঁসের গোস্ত দিয়ে পোলাও, ডিমের কোরমা, সবজি খিচুড়ি, মহিষের দুধ, নানা পদের মাছের বারবিকিউ আর তরকারি, প্রন নুডলস, কফি, স্যুপ...কী ছিল না!

কুকড়িমুকড়ি, চর মন্তাজ, ঢালচর, মনপুরার মতো দ্বীপে আছে হোমস্টের ব্যবস্থা। তবে যেসব দ্বীপে থাকার সুযোগ নেই, সেখানে গেলে তাঁবু সঙ্গে নিতে হবে। দলবল নিয়ে গেলে ক্যাম্পিং হবে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা।

কোলাহলমুক্ত সৈকতে
ছবি: অপু নজরুল

তবে মনে রাখতে হবে, এই দ্বীপগুলোর প্রকৃতি খুবই নাজুক। ভ্রমণে গিয়ে যেন কোনোভাবেই পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেটিও খেয়াল রাখতে হবে।

শরতের মায়াময় এই সময়ে দক্ষিণের দ্বীপগুলো আপনাকে ডাকছে। এবার আপনিই হয়তো খুঁজে পাবেন নিজের নির্জন দ্বীপ, যেটি মনে থাকবে সারা জীবন।

আরও পড়ুন