নিয়ন আলোর দেশ থাইল্যান্ড

নতুন বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে অনেকেই যে কাজটা সবার আগে করেন তা হলো, কোন মাসে কত দিন ছুটি, তা খুঁজে দেখা। সাধারণত বছরের সবচেয়ে বড় ছুটি পাওয়া যায় দুই ঈদের সময়। এবারও তা–ই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পয়লা বৈশাখের ছুটিও। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৮ থেকে ১০ দিনের এই লম্বা ছুটিতে ভ্রমণে না বের হলে কী হয়!
বছরের সবচেয়ে বড় ছুটিটা নতুন কোনো জায়গা বা নতুন কোনো দেশ দেখে কাটিয়ে দেওয়ার চিন্তা হয়তো অনেকেই করছেন। তবে কোথায় যাবেন, কীভাবেই–বা যাবেন, তা নিয়ে যাঁরা ভাবনায় আছেন, তাঁদের জন্যই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পরিকল্পনা। এ আয়োজনে থাকছে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় দেশ ভ্রমণবিষয়ক পরিকল্পনার বিস্তারিত।

লম্বা ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন থাইল্যান্ড থেকে
ছবি: গোযায়ানের সৌজন্যে

আজ যে দেশের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ‘দ্য ল্যান্ড অব স্মাইলস’ হিসেবে খ্যাত থাইল্যান্ড। যাঁরা কাজের ব্যস্ততায় খুব বেশি সময় বের করতে পারেন না বা একটু কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে চান, তাঁদের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য থাইল্যান্ড। ‘থাইল্যান্ড’ বললে বরাবরই মাথায় আসে ছবির মতো সুন্দর সৈকতগুলো। শুধু সৈকত ও দ্বীপ ঘুরেই থাইল্যান্ডে আপনি অপূর্ব একটি সময় কাটিয়ে আসতে পারবেন। সমুদ্রসৈকতের মধ্যে প্রধান হলো ফুকেট। সমুদ্রপ্রেমী হয়েও যদি ফুকেট ঘুরতে না যান, তাহলে জীবনে একটা আফসোস থেকে যাবে!

সমুদ্রসৈকতের জন্য থাইল্যান্ড বেশ বিখ্যাত
ছবি: গোযায়ানের সৌজন্যে


এ ছাড়া রয়েছে পাতং বিচ, ফ্রিডম বিচ, পাতায়া বিচ, ফি ফি আইল্যান্ড, আও নাংসহ বেশ কিছু সমুদ্রসৈকত, যেগুলোর মধ্য থেকে আপনার পছন্দের কিছু না কিছু পেয়ে যাবেন অবশ্যই। সৈকতে পেয়ে যাবেন হরেক রকমের নজরকাড়া অ্যাডভেঞ্চার ও অ্যাকটিভিটি। কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, জেটস্কিইং, হাইকিং, মাছ ধরা, আশপাশের দোকানে ঘোরাঘুরি, রাতের সৈকত ভ্রমণ—এসবের মধ্যে দিনটা যে কখন রাত হয়ে যাবে, বুঝে ওঠারই সময় পাবেন না।

আরও পড়ুন

তবে ভ্রমণপ্রেমীদের জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন, থাইল্যান্ড মানে শুধুই সমুদ্রসৈকত নয়। পানি এবং বালু থেকে একটু বিরতি নিতে চাইলে খাও সোক–জাতীয় উদ্যানে গিয়ে নাম না-জানা সব স্থলজ প্রাণীর দেখা পেয়ে যেতে পারেন অথবা উপভোগ করতে পারেন পার্কে সোক নদীর ভ্রমণ, জঙ্গলে ট্রেকিং, চেও লার্ন লেকে নৌকাভ্রমণ ও সাঁতার, পোর্ন পেট গুহা এবং চুনাপাথর কার্স্ট পর্বত পরিদর্শন ইত্যাদি।
জঙ্গল ও সমুদ্র ভ্রমণের মধ্যে ঘুরতে পারবেন থি লো সু, মে য়ে, টোন না চাংসহ অন্যান্য গুপ্ত জলপ্রপাত। সংস্কৃতি এবং ধর্ম বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে খুব কম খরচে ঐতিহ্যবাহী মন্দির, জমজমাট মার্কেট আর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো পেয়ে যাবেন চিয়াং মাইয়ে। এত সব অ্যাডভেঞ্চারের পর একটু শহুরে অভিজ্ঞতা চাইলে রয়েছে ব্যাংককের রোমাঞ্চকর জীবনযাপন।

থাইল্যান্ডের স্ট্রিটফুডের সুনাম আছে
ছবি: গোযায়ানের সৌজন্যে


ইতিহাস ও সংস্কৃতি অনুরাগীদের জন্য আছে গোল্ডেন বুদ্ধা, ওয়াত ফো, দ্য গ্র্যান্ড প্যালেস। দিন শেষে রাতে ঘুরে দেখতে পারবেন জাঁকজমকপূর্ণ রাস্তা, নাইট লাইফ, স্ট্রিট ফুড এবং খাও সান রোডের অসংখ্য দোকান।
নাইট লাইফ আর সৈকতের অন্য রকম অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন কোহ ফাঙ্গান। এই জায়গার ‘ফুল মুন পার্টি’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খুবই বিখ্যাত। এ রকমই আরও অভিজ্ঞতার জন্য অনেকেই চলে যায় থাইল্যান্ডের পাই। পাই-এ স্কুটার ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন মে হং সন লুপে। এটি একটি বিখ্যাত স্কুটার ট্রেইল। এই ট্রেইল ধরে যেতে পারবেন ঠাম লট গুহা ও পাই গিরিখাত।

বেড়ানোর সুবাদে দেশটির সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে পারেন
ছবি: গোযায়ানের সৌজন্যে


স্কুটার নিয়ে থাইল্যান্ড ঘোরার আরও সুযোগ পাবেন ফুকেটেও। স্কুটার নিয়ে ঘুরতে পারবেন সমুদ্রের পাশে মনোরম ও আকর্ষণীয় সব রেস্তোরাঁয়। কিন্তু স্কুটারের এত সুন্দর রাস্তা দেখে পানিপথের কথা ভুলে যাবেন না আবার। ব্লাঞ্চো বিচ বার থেকে পার্টি বোট নিয়ে ঘুরতে পারবেন হলিউডের শুটিং গন্তব্য ফি ফি দ্বীপগুচ্ছ। ব্যাংককের চাও ফ্রায়া নদীও ঘুরতে পারবেন এক্সপ্রেস বা টুরিস্ট বোটে চড়ে। যাঁরা বেশি ঘোরাঘুরি না করে স্রেফ আরামদায়ক একটি বিকেল কাটাতে চান, তাঁরা যেতে পারেন প্রাকৃতিক সুইমিংপুল ক্রাবির এমেরালড পুলে।

জলে–স্থলে নানা রকম অ্যাকটিভিটির সুযোগ আছে পর্যটকদের জন্য
ছবি: গোযায়ানের সৌজন্যে


একটু বাজেটের মধ্যে সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য থাইল্যান্ড অন্যতম সেরা গন্তব্য। তবে যাওয়ার আগে সব ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করে যাওয়াই ভালো। ফ্লাইট এবং হোটেল যত আগে বুক করা যায়, সাশ্রয়ী দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এ ক্ষেত্রে গোযায়ান–এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিতে পারেন। বুকিং করার আগে ভালোভাবে বিস্তারিত দেখে নিজেই যাচাই করে বেছে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের ফ্লাইটটি। এমনকি হোটেল বা পছন্দমতো ট্যুর প্যাকেজও গোযায়ানের মাধ্যমেই সাজিয়ে নিতে পারবেন।
থাইল্যান্ডে কিন্তু অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই ফ্লাইট ও হোটেল নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হলেই ভিসার আবেদনের জন্যও হাতে কিছুটা সময় রাখতে হবে। তবে আশা করা যায়, খুব বেশি ঝামেলা না হলে কম সময়েই থাইল্যান্ডের ভিসা চলে আসে। এসব কাজ ঠিকভাবে করে নিলে খাওয়া, যাতায়াত ও যাবতীয় কেনাকাটার জন্য কিছু বাথ বা ডলার সঙ্গে রাখলেই চলে।
নতুন দেশে ঘুরতে যাওয়ার আগে এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে আগে থেকে একটু নজর রাখলেই একটা সুন্দর ভ্রমণের পরিকল্পনা করে ফেলা যায়। তাই থাইল্যান্ডের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বছরের সবচেয়ে বড় ছুটি হাতছাড়া করা একদমই উচিত হবে না।