প্রসাদ খেয়ে দেখলাম মুকেশ আম্বানির প্রাসাদ, তারপর অমিতাভ, শাহরুখ ও সালমানের বাড়ি
ভারতের মুম্বাই ঘুরছি আর দেখছি ঐতিহাসিক স্থানগুলো। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেল। ক্ষুধাও পেয়েছে। গাড়ির চালককে বললাম, ‘এবার খাবার সময় হয়ে এসেছে, চলুন একটা রেস্তোরাঁয় যাই।’
চালক চন্দ্রপ্রকাশ উপাধ্যায় বললেন, ‘আমিষ খাবেন, না নিরামিষ?’
মুম্বাইয়ের অধিকাংশ রেস্তোরাঁই ভেগান বা নিরামিষ খাবারই কেবল পাওয়া যায়। সকালে বাংলার মতো রুটি, লুচি, কচুরি, সবজি বা হালুয়া মেলে না। মুম্বাইয়ে পাওয়া যায় দক্ষিণি খাবার ইডলি, দোসা আর বড়া। মাষকলাই ডালের বড়া। খেতে দারুণ। তাই বললাম, ‘নিরামিষই খাব। চলুন।’
চালক চন্দ্রপ্রকাশ বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। আপত্তি না থাকলে, চলুন না এই কাছে মুকেশ আম্বানির গণেশপূজা মণ্ডপে। দেখে আসবেন, আর সঙ্গে খেয়ে আসবেন প্রসাদ। নিরামিষ প্রসাদ।’
তাঁর কাছেই জানলাম, ভারতের শীর্ষ আর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনীর বাড়ির এই গণেশপূজা ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়। ১১ দিন ধরে ওই পূজামণ্ডপের পাশে বিরাট মণ্ডপ তৈরি করে ভক্তদের প্রসাদও খাওয়ানো হয়। পোলাও, সবজি, ডাল, মিষ্টিসহ আরও কত কী।
চালকের কথা মেনে হাজির হই আম্বানির গণেশ পূজামণ্ডপে। দুপুর পেরিয়ে গেছে, তাই ভিড় অনেকটা কম। পাতার থালা নিয়ে এগিয়ে গেলাম প্রসাদ বিতরণকেন্দ্রে। বিশাল ব্যবস্থা। নানা খাবারের আয়োজন। যে যেমন চাইছে, তেমনই পাচ্ছে। আমরা দলে ছিলাম চারজন আর আমাদের গাড়িচালক।
কাউন্টার থেকে প্রসাদ নিয়ে পাশের চেয়ার–টেবিলে বসে প্রসাদ গ্রহণ করলাম। অদূরে মুকেশ আম্বানির বিশাল প্রাসাদটাও দেখা যাচ্ছে। প্রসাদ খেয়ে বেরিয়ে এসে মণ্ডপের সামনে একটি পাত্রে সেই এঁটো থালা রাখলাম। সঙ্গে সঙ্গে এক কর্মী তা তুলে নিয়ে সামনের ময়লা বহনের গাড়িতে ফেলে দিলে তা সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রের মাধ্যমে সাফ হয়ে গেল। আমরা প্রসাদ খেয়ে আম্বানির প্রাসাদ বা বিশাল বাড়িটা দেখলাম।
প্রসাদ খেয়ে মুকেশ আম্বানির প্রাসাদ দেখা
মুকেশ আম্বানির প্রাসাদের নাম ‘অ্যান্টিলিয়া’। ২৭ তলা বাড়িটিতে আছে ৯টি হাইস্পিড লিফট। বাড়িটির ৭ তলা পর্যন্ত মুকেশ আম্বানির প্রাইভেট রেসিডেন্স। রয়েছে ১৬৮টি গাড়ি পার্ক করার পার্কিং জোন, বলরুম, ৫০ আসনের থিয়েটার হল, বাগান, সুইমিংপুল, হেলিপ্যাড, স্পা, হেলথ সেন্টার আর মন্দির।
এই বিশাল বাড়ির অবস্থান মুম্বাইয়ের আল্টামাউন্ট রোডের কামবাল্লা হিল এলাকায়। বাড়ির উচ্চতা ৫৬৮ ফুট। এটি নির্মাণ হয়েছে ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। খরচ হয়েছিল ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে এর মূল্য ছিল ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।
মুকেশ আম্বানির বাসভবন অ্যান্টিলিয়া দেখে ফেরার পর আমাদের গাড়ির চালক বললেন, ‘চলুন, এবার দেখে আসবেন তিন বলিউড তারকা—অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান আর সালমান খানের বাসভবন।’ তথাস্তু। চালক আমাদের নিয়ে ছুটলেন সোজা শাহরুখ খানের বাসভবনের দিকে।
শাহরুখের ‘মান্নাত’ থেকে সালমানের ‘গ্যালাক্সি’
আরব সাগরের তীরে বান্দ্রার ব্যান্ড স্ট্যান্ড রোডের একেবারে সমুদ্রের পাড়ে শাহরুখ খানের বাড়ি। বাড়ির নাম ‘মান্নাত’। বাড়ির সামনের রাস্তা পার হওয়ার পরই দেখা যাচ্ছে আরব সাগরের ঢেউ। আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের উপকূলে। ছয়তলা এই বাড়ি দোরগোড়ায় প্রতিনিয়ত সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। দরজার পাশ থেকে দেখলাম বাড়ির সামনে তিনটি কাজুবাদামের গাছ, আটটি গোলাপ ফুলের গাছ, সঙ্গে আরও অনেক ফুলগাছ। এখন এই বাড়ির মূল্য ২০০ কোটি রুপি।
এরপর চলে এলাম কাছেই, বলিউডের আরেক তারকা সালমান খানের বাসভবনের সামনে। বান্দ্রার মডেস্ট ‘গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্ট’–এর সামনে। বিজে রোডের ব্যান্ড স্ট্যান্ড এলাকায়। ভবনটি আটতলা। ফ্ল্যাট বাড়ি।
সালমান খান থাকেন গ্রাউন্ড ফ্লোরে। দোতলায় থাকেন তাঁর আত্মীয়স্বজন। এখন এই ফ্ল্যাটের মূল্য ১৬ কোটি রুপি।
সালমান খানের একটি খামারবাড়িও আছে মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার পানভেল এলাকায়, নাম ‘অর্পিতা ফার্মস’। এই খামাড়বাড়িতে আছে সুইমিংপুল, আর্টরুম। আরও আছে তাঁর পাঁচটি ঘোড়াসহ আস্তাবল। ১৫০ একর জমিতে গড়া তোলা খামারবাড়িটির বর্তমান মূল্য ২ হাজার ৮৫ কোটি রুপি।
অমিতাভের ‘জলসা’
এবার চলে এলাম প্রখ্যাত অভিনেতা, বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের বাসভবনের সামনে। সদর দরজা বন্ধ। নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্বরত। মুম্বাইয়ের জুহুতে অমিতাভের বাসভবনটির নাম ‘জলসা’। জুহুর ভিএস মেহতা রোডে এই ১০ হাজার ১২৫ বর্গফুটের বাড়ি। অমিতাভ বচ্চনকে এই বাড়ি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক রমেশ সিপ্পি। এখন মূল্য ১০০ থেকে ১২০ কোটি রুপি।
পাঁচ দশক ধরে এই ‘জলসা’য় আছেন অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পরিবার। এই বাড়িতে আছে জিম, রেকর্ডিং রুম ও বাগান। নানা চিত্রশিল্প দিয়ে সাজানো গোটা বাড়ি। আগে একই এলাকার ‘প্রতীক্ষা’ বাসভবনে থাকতেন তারা।