চট্টগ্রামের ফয়’স লেক-বেজক্যাম্পে রোমাঞ্চকর কী কী আছে

পাহাড় ও সমুদ্র—দুই-ই আছে বলে অনেকেরই প্রিয় গন্তব্য চট্টগ্রাম। প্রকৃতি ও ঐতিহ্য দর্শনের পাশাপাশি রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকেরা তালিকায় রাখতে পারেন ফয়’স লেকের বেজক্যাম্প। কী আছে সেখানে? জানাচ্ছেন ফাহিম আল সামাদ

এ বছরই ফয়’স লেকে চালু হয়েছে ‘বেজক্যাম্প’ছবি: বেজক্যাম্প

বৃক্ষরাজিতে ঘেরা চারপাশ। তার মধ্যে পাহাড়ের বুকে শান্ত নীল জলের লেক। সেই লেকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে যেতে পারেন বুনো হরিণ কিংবা খরগোশের দেখা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন রোমাঞ্চকর সব রাইড। চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর ৩৩৬ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই বিনোদনকেন্দ্রের নাম ফয়’স লেক।

এ বছরই ফয়’স লেকে চালু হয়েছে ‘বেজক্যাম্প’। কনকর্ড গ্রুপ অব কোম্পানি ও বেজক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চারস লিমিটেডের এই যৌথ উদ্যোগে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধির নানা কার্যক্রম। কয়েকটি গাছকে কেন্দ্র করে দলগত কার্যক্রম ‘ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি’। রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্য পাঁচটি বাধা পেরোনোর ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি’। নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ‘টিম বিল্ডিং গেম’। আরও আছে লেকের জলে কায়াকিংয়ের সুযোগ। তির-ধনুকের তালিম নিতে আর্চারি। লেকের এক পাশের গাছ থেকে অন্য পাশে যেতে পারেন ‘ওয়াটার জিপ লাইন’ করে। দৈত্যাকার দোলনা ও হ্যামকে দোল খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।

রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের জন্য ফয়’স লৈক বেজক্যাম্পে আছে নানা আয়োজন
ছবি: জুয়েল শীল

দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রাম এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা গাড়িতে করে চলে যেতে পারেন ফয়’স লেকে। এখানে বেজক্যাম্পের কর্মকাণ্ডগুলো আলাদা আলাদাভাবেও করা যায়, তবে দিনব্যাপী কর্মকাণ্ড ও রাত্রিবাসের প্যাকেজ বেশি জনপ্রিয়।

বেজক্যাম্পে দিনভর

লেকের পাড় ধরে বেজক্যাম্পের পথ। ঢুকতেই অভ্যর্থনাকক্ষ ও রেস্তোরাঁ। ভ্রমণের ক্লান্তি কাটাতে এখানে কিছুটা জিরিয়ে নিতে পারবেন। এরপর দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে পাহাড়ি রাস্তা। সোজা পথ ধরে গেলে ‘ক্যাম্পিং হিল’। আর ডান দিয়ে ওপরে উঠলেই ‘অ্যাকটিভিটি হিল’।

কয়েক ধরনের রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে এই পাহাড়। শুরুতেই আছে ‘জিপ লাইন’। তবে এই কর্মকাণ্ড সব শেষে করুন। সেখান থেকে কিছুদূর সামনে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি ও অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি। এ দুই কসরতেই শারীরিক দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক দক্ষতার পরিচয়ও দিতে হবে।

রোমাঞ্চকর আরেকটি সংযোজন হলো দৈত্যাকার দোলনা। সাধারণ দোলনার চেয়ে এটি কয়েক গুণ লম্বা। মাটি থেকে টেনে অন্তত ১০ ফুট উঁচুতে তুলে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। দোল খেতে খেতে পাহাড়ের চূড়া থেকে উপভোগ করবেন চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য।

লেকের এক পাশের গাছ থেকে অন্য পাশে যেতে পারেন ‘ জিপ লাইন’ করে
ছবি: জুয়েল শীল

এবার ক্যাম্পের অন্যতম আকর্ষণ জিপ লাইনে যাওয়া যাক। তারে ঝুলে লেকের জলের ওপর দিয়ে এপার থেকে ওপারে চলে যাবেন। ছোটদের জন্য ক্যাম্প হিলের পাশেই চিলড্রেনস অ্যাকটিভিটি। সব অ্যাকটিভিটি ও দুপুরের খাবার শেষে জায়ান্ট হ্যামকে শুয়ে কাটাতে পারেন সুন্দর বিকেল। অথবা চাইলে লেকে কায়াক চালিয়েও দিনটি শেষ করতে পারেন। পুরো দিনে জনপ্রতি খরচ হবে তিন হাজার টাকা। সঙ্গে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থা।

রাতে থাকলে যা করবেন

বেজক্যাম্পের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে রাতে। ঝিঁঝিপোকার ডাক আর শিয়ালের হাঁকে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সন্ধ্যার পরই লেকের পাড়ে জ্বলে ওঠে ক্যাম্প ফায়ার। দলে দলে সেখানে বসে গানের আসর।

চাইলে এখানে বসেই কাটিয়ে দিতে পারেন পুরো রাত। অথবা তাঁবুতে ফিরে বিশ্রামও নিতে পারেন। চাঁদের আলোয় হালকা ট্র্যাকিংয়ের ইচ্ছা থাকলে চলে যেতে পারেন ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ পাহাড়ে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ। চাঁদের আলোয় প্রকৃতিতে ঘেরা এই পথ ধরে দিনের সব ক্লান্তি ভুলে হাঁটতে পারেন। দিনের সব অ্যাকটিভিটির সঙ্গে ক্যাম্পিং যোগ করলে জনপ্রতি খরচ হবে সাত হাজার টাকা। পরদিন সকাল পর্যন্ত থাকবে সব খাবারের ব্যবস্থা।

পর্যটকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডের সময় কয়েকজন দক্ষ প্রশিক্ষক থাকেন। বেজক্যাম্পের সাইট ব্যবস্থাপক নাজমুল ওয়াহিদ বললেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য দুই স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সেবা দেওয়ার সব ব্যবস্থা এখানে করা হয়েছে।