বেড়াতে গিয়ে ফুড পয়জনিং হলে কী করবেন

ভ্রমণে গিয়ে কে আর হোটেলের বদ্ধ কক্ষে আটকে থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় টয়লেটে যেতে চায় বলুন? অথচ ফুড পয়জনিং হলে এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাই আপনাকেই মেনে নিতে হবে। বেড়াতে গিয়ে অন্তত একবার ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার!

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এসওএসর চিকিৎসাবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ড. মার্ক ফিশার বলেন, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবীসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর অনুজীবমিশ্রিত দূষিত খাবার বা পানি খেলে সাধারণত ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে। দূষিত, বাসি বা অস্বাস্থ্যকর খাবারেই সাধারণত এগুলো থাকে। দেখা দেয় বমি বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা।

দেশে ও দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেই আমাদের ফুড পয়জনিং হয় বেশি। এর কারণ হিসেবে ড. ফিশার বলেন, ‘যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সে জায়গাটি যেমন আপনার কাছে নতুন, একইভাবে সেখানকার খাবার ও পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াও আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কাছে নতুন। এই নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে আমাদের শরীর।’

দেশে ও দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেই আমাদের ফুড পয়জনিং হয় বেশি
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

তাই বলে ফুড পয়জনিংয়ের কারণে পুরো ভ্রমণটাই কি মাটি হয়ে যাবে? সাধারণ উত্তর হলো, না। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়েক্সনার মেডিকেল সেন্টারের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সেনজিয়ায় মাও জানান, সুখবর হলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফুড পয়জনিংয়ের প্রভাব বেশ হালকা হয় এবং তা পুরো ভ্রমণের আনন্দটাকে নষ্ট করে ফেলতে পারে না।

ফুড পয়জনিং হলে যা করবেন

সমস্যা যখন আছে, সমাধানও নিশ্চয় আছে। বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজেকে ফুড পয়জনিংয়ের হাত থেকে নিস্তার দিতে পারেন। সেগুলো হলো—

বেশি বেশি পানি

ড. ফিশার বলেন, বেড়াতে গিয়ে ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হলে বেশি বেশি পানি খেয়ে শরীরকে আর্দ্র রাখুন। শরীরের ইলেকট্রোলাইটের চাহিদা পূরণ করুন। পানি খেতে গিয়ে যদি বমি আসে, তবে ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে পানি খেতে পারেন।

নরম খাবার

ফুড পয়জনিং হলে নরম খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেতে যাবেন না। কাঁচকলা ভর্তা দিয়ে ভাত খান। পারলে ‘ব্রাট ডায়েট’ অনুসরণ করে দেখতে পারেন। ব্রাট ডায়েট হলো কলা, ভাত, আপেলসস ও টোস্ট—এই চার ধরনের খাবার নিয়ে করা একধরনের ডায়েট। ডায়রিয়া হলে সাধারণত এ ধরনের ডায়েট করা হয়। নরম খাবারের সঙ্গে সঙ্গে লবনযুক্ত বিস্কুট (সল্টেজ বিস্কুট) খেতে পারেন। তবে, যা–ই খান, তা হতে হবে পরিমিত।

বেড়াতে গিয়ে ফুড পয়জনিংয়ের শিকার হলে বেশি বেশি পানি খেয়ে শরীরকে আর্দ্র রাখুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

কম খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হাঁটাচলা করবেন না। ফুড পয়জনিং হলে দিনের বেশ ভালো একটা সময় টয়লেটেই কেটে যায়। তাই টয়লেটের বাইরে থাকার সময়টা যতটা পারা যায় বিছানায় থেকে বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে ড. ফিশারের পরামর্শ, যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর শরীরের তাপমাত্রা বাড়ছে কি না, খেয়াল রাখুন।

লক্ষণ পর্যবেক্ষণ

ড. ফিশার বলেন, সংক্রমণের উৎসের ওপর ভিত্তি করে ফুড পয়জনিংয়ের লক্ষণ হতে পারে নানা রকম। ফুড পয়জনিং হলে সাধারণত তলপেটের মাংসপেশিতে ব্যথা করে। বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, জ্বর ও ক্ষুধামান্দ্য—এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণের কথা জানান ড. ফিশার। অস্থিসন্ধির ব্যথা কিছু কিছু খাদ্যবাহিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। তাই আপনার শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর মাত্রা কী রকম, সেদিকে ভালো করে খেয়াল রাখুন।

অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসা নিন

ড. সেনজিয়ায় মাও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, তলপেটের তীব্র ব্যথা ও পানিশূন্যতা—এই লক্ষণগুলো থাকলে আমি সাধারণত রোগীকে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিই।’ বাইরের দেশে বেড়াতে যাওয়ার পর ফুড পয়জনিং হয়ে অবস্থার অবনতি হলে হোটেলের ফ্রন্টডেস্কে বা ভ্রমণ বিমা সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে চিকিৎসা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে খোঁজ নিন। ভ্রমণ বিমা করা না থাকলে নিজের ক্রেডিট কার্ড থেকেও এই সুবিধা নিতে পারবেন। চিকিৎসার খরচ মেটানোর পাশাপাশি আপনার বিমাটি অসুস্থতার কারণে ফ্লাইট পরিবর্তনের খরচও পুষিয়ে দিতে পারে।

আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা

বেড়াতে যাওয়ার আগে থেকেই ফুড পয়জনিংয়ের জন্য প্রস্তুতিমূলক চিকিৎসা নিয়ে রাখতে পারেন। ড. ফিশার জানান, ‘বাইরের দেশে ভ্রমণে যাওয়ার আগে পর্যটকদের আমি সাধারণত পরিপাকসংক্রান্ত রোগের জন্য ওষুধ ও ডিহাইড্রেশনের জন্য ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ সলিউশন সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সেখানে কী কী ধরনের রোগবালাইয়ের উৎপাত বেশি, ভালো করে জেনে নিন। যদি ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন থাকে, সে ব্যবস্থাও করে নিন।

শেষ কথা

যেখানে ঘুরতে যাবেন, সেখানে সবচেয়ে ভালো চিকিৎসাসেবা কোথায় কোথায় পাবেন, তার একটা তালিকা আগে থেকেই নিয়ে রাখুন। জরুরি প্রয়োজন হলে এই তালিকা দেখে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ড. সেনজিয়ায় মাও পরামর্শ দেন, পর্যটকদের জন্য ডায়রিয়া হওয়াটা যেহেতু সাধারণ ঘটনা, তাই পারলে বাইরের দেশে ভ্রমণে যাওয়ার অন্তত ছয় সপ্তাহ আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

সবচেয়ে ভালো হলো খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বাইরে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে খাবারটি কীভাবে তৈরি হয়ে আসছে, খেয়াল রাখুন। স্বাস্থ্যসম্মত মনে হলে তখনই খাবেন। আর যদি পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আপনার আগে থেকেই থাকে, তাহলে যেসব খাবার খেলে এই সমস্যা বেড়ে যায়, সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড. ফিশার মনে করিয়ে দেন, ‘বাইরে ভ্রমণে গিয়ে সব সময় আপনি খাবার ও পানির উৎসের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। পারলে পরিষ্কার বোতলজাত পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। খাবারের ক্ষেত্রে স্বনামধন্য রেস্তোরাঁ থেকে রান্না করা গরম খাবার নিয়ে খাবেন।’


সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন